ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

অস্থায়ী যত আদালত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৮
অস্থায়ী যত আদালত

ঢাকা: আদালত প্রাঙ্গণের বাইরে অস্থায়ী আদালত স্থাপন করে আসামিদের বিচার নতুন কিছু নয়। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় এবং বকশিবাজারের আলীয়া মাদ্রসা এলাকার কারা অধিদফতরের মাঠে অস্থায়ী আদালতে বিচার কার্যক্রম চলেছিল।

এর মধ্যে গত ৪ সেপ্টেম্বর নতুন করে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারেই একটি কক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে করা একটি মামলার বিচার কাজের জন্য অস্থায়ী আদালত স্থাপন কর‍ায় নতুন করে বিষয়টি আলোচনায় আসে।

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ওখানে আদালত স্থাপন আইন ও সংবিধানের লঙ্ঘন।



অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আদালত স্থাপনের ব্যাপারে সরকার যে গেজেট প্রকাশ করেছে সেটা আইন মোতাবেকই দিয়েছেন। এর আগেই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ব্যাপারে জেলখানার পাশের ভবনকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিলো। তখন সেটির বৈধতাও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল, কিন্তু লাভ হয়নি। কাজেই আমার মনে হয়, এটা সঠিকভাবে হয়েছে এবং এতে কোনো আইন লঙ্ঘন হয়নি।

আওয়ামী লীগের বিগত (১৯৯৬-২০০১) সরকারের সময় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে কারাগারের পাশের একটি কক্ষে আদালত স্থাপন করা হয়েছিলো। তখন ওই মামলার আসামি বজলুর রশীদের স্ত্রী জোবায়দা রশিদ বিশেষ আদালতের বিষয়ে হাইকোর্টে আবেদন  করেন। কিন্তু তা খারিজ করেন  আদালত।

পরবর্তীতে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সংসদ ভবন এলাকায় বিশেষ জজ আদালত স্থাপন করা হয়েছিলো।

এরপর পিলখানা হত্যাযজ্ঞের বিচারের জন্য বকশিবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত ভবনটিকে অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল একটি গেজেট জারি করে সরকার। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনে অবস্থিত বহুসংখ্যক আদালতে মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় ওই ভবন এবং এলাকাটি আদালত চলাকালীন জনাকীর্ণ থাকে বিধায় নিরাপত্তাজনিত কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ৯(২) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার তিন মামলা (যার মধ্যে খালেদা জিয়ার ২টি মামলা) পরিচালনার জন্য ঢাকা মহানগরের বকশিবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত ভবনটিকে (যা বিডিআর হত্যাকাণ্ড মামলার অস্থায়ী আদালত ছিল) অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করেছে।

সর্বশেষ মঙ্গলবার (০৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিভাগ এ গেজেট প্রকাশ করে।

আইন মন্ত্রণালয়ের ওই গেজেটে বলা হয়, ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালত থেকে নাজিমুদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের কক্ষ নম্বর-৭ কে অস্থায়ী আদালত ঘোষণা করা হয়েছে। এখন থেকে সেখানেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন হবে।   

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৯(২) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার অস্থায়ী আদালত স্থাপন করতে পারেন। বিএনপি সরকারের আমলে (১৯৯১-১৯৯৬) কারাগারের পাশের লাল দালানে এরশাদ সাহেবের বিচার হয়েছিল। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারও সেখানে হয়েছিলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায়, পরবর্তীতে বকশিবাজারে বিডিআর হত্যার বিচার, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বিচারও হয়েছে অস্থায়ী আদালতে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের সময় বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। কিন্তু সে আবেদন টেকেনি। ৯(২) ক্ষমতা বলে সরকার এ কাজটি করতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৮
ইএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।