ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

কিডনি অপসারণের ঘটনায় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৮
কিডনি অপসারণের ঘটনায় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুল

ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ( বিএসএমএমইউ)-তে চলচ্চিত্র নির্মাতা রফিক শিকদারের মা রওশন আরার দু’টি কিডনি অপসারণে পর মৃত্যুর ঘটনায় রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। 

আইন সালিশ কেন্দ্র ও রফিক শিকদারের করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার (১৯ নভেম্বর) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
 
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম আসাদুজ্জামান।

সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. আনিসুল হাসান ও মো. শাহীনুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পূরবী সাহা।
 
পরে আইনজীবী আসাদুজ্জামান পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘চিকিৎসক হাবিবুর রহমান লিখিতভাবে অপরাধ স্বীকার করে চুক্তি করেছিলেন যে নিজ খরচে তিনি কিডনি প্রতিস্থাপন করে দেবেন। কিন্তু তিনি কালক্ষেপণ করেছেন। রওশন আরাকে বিএসএমএমইউ’র আইসিইউয়ের লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। ’
 
‘আমরা রিট করে রুল চেয়েছিলাম, চারটা পয়েন্টে আদালত রুল দিয়েছে। ’
  
রুলে এ ঘটনায় ভিকটিমের পরিবারকে কেন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
 
একইসঙ্গে স্বেচ্ছাচার, চরম অবহেলা ও অপেশাদারীভাবে রওশন আরার দু’টি কিডনি অপসারণ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, কেন অস্ত্রোপচারে মনোনীত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণ ও চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বিএসএমএমইউ’র কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং দুই চিকিৎসকদের পেশাগত নিবন্ধন বা সনদ বাতিলের জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।  
 
চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব, বিএসএমএমইউ’র পক্ষে উপাচার্য, বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান (দুলাল), সহকারী অধ্যাপক ফারুক হোসাইন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি), পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ডিএমপি কমিশনারকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
 
রিট আবেদনে এ ঘটনায় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়।  
 
গত ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত ‘মায়ের কিডনি গায়েব দায়ী ডাক্তারের বিচার চান রফিক শিকদার’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চলচ্চিত্র নির্মাতা রফিক শিকদারের মায়ের অসুস্থ কিডনি কেটে ফেলতে গিয়ে সুস্থ কিডনিও ফেলেছেন ডাক্তার। প্রতিবেদকের কাছে এমনই অভিযোগ করেছেন তিনি। ’
 
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কর্মরত অভিযুক্ত ওই ডাক্তারের নাম হাবিবুর রহমান দুলাল। তিনি ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক। মায়ের সুচিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়েছেন রফিক শিকদার। একই সঙ্গে এ ‘কসাই’ ডাক্তারকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদারের মা রওশন আরা বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল এ চলচ্চিত্র নির্মাতা অভিযোগ করেন, তার মায়ের বাঁ কিডনিটি অস্ত্রোপচার করে ফেলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর সিটিস্ক্যান করে দেখা যায়, তার শরীরের ডান পাশের কিডনিটিও নেই। তার মায়ের অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে। নিয়মিত ডায়ালোসিস করে সুস্থ রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বিএসএমএমইউর ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল তাকে বলছেন, কিডনি কোনো কারণে নন-ফাংশনাল হলে সিটিস্ক্যানে ধরা পড়ে না। ’
 
‘চিকিৎসকের এ যুক্তি মিথ্যা দাবি করেছেন চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদার। তিনি বলেন, ‘এ চিকিৎসক যা বলছেন তা পুরোপুরি মিথ্যা। আমি এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা নিশ্চিত করেছেন, দৃশ্যমান জিনিস পেটের মধ্যে থাকলে তা কাজ করুক বা না করুক দেখা যাবেই। বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আমাকে মায়ের পেটে কিডনি না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ’ রফিক শিকদার বলেন, ‘আমার মা রওশন আরার (৫৫) বাঁ কিডনিতে সমস্যা ছিল। মূত্রনালিতে ইনফেকশন ছিল। কিন্তু ডানের কিডনিটি পুরোপুরি ভালো ছিল ঠিক সুস্থ মানুষের মতো। বাঁ কিডনির যে ইনফেকশন ছিল তা সার্জারি করা হলে মা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যান। ইনফেকশন অপসারণের পর মা সুস্থভাবে চলাফেরা করছিলেন। ঈদুল আজহার পর হঠাৎ করে পিজি হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানানো হলো, আপনার মায়ের বাঁ কিডনিটা ফেলে দিতে হবে। ফেলে দিলে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন। তা না হলে পরবর্তী সময়ে সমস্যা হতে পারে। আমরাও রাজি হই। ’ অস্ত্রোপচারের পর ল্যাবএইড হাসপাতালে সিটিস্ক্যান করা হয়। রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকরা বলেন, ‘আগের কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে আপনার মায়ের বাঁ কিডনিটি কেটে ফেলা হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার পর দেখা যাচ্ছে ডানের কিডনিও নেই। ’ এ ছাড়া বিআরবি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ এক ডাক্তারকে রিপোর্টগুলো দেখানোর পর তিনি নিশ্চিত করেছেন মায়ের কোনো কিডনিই নেই। জানা গেছে, কিডনি ফেলে দেওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির প্রধান করা হয়েছে কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হারুন অর রশিদকে। এ ছাড়া রওশন আরার সুচিকিৎসার জন্য একটি চিকিৎসক টিম গঠন করা হয়েছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৮
ইএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।