ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

দায় কাউকে না কাউকে নিতেই হবে: হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯
দায় কাউকে না কাউকে নিতেই হবে: হাইকোর্ট চকবাজারে আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবন | ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানীর চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ‘ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। এটাকে দুর্ঘটনা বলা যাবে না, এর দায় কাউকে না কাউকে নিতেই হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে করা রিট আবেদনগুলো শুনানির জন্য উপস্থাপনের পর সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এমন মন্তব্য করেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুর দুইটায় অ্যাটর্নি জেনারেলের উপস্থিতিতে রিট শুনানির সময় নির্ধারণ করেন আদালত।

 

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ইউনুছ আলী আকন্দ, নূর মোহাম্মদ আজমী, খন্দকার মো. সায়েদুল কাউছার ও ব্যারিস্টার মো. রিয়াজ উদ্দিন।

চকবাজারে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতের অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা যান ৬৭ জন। আহত হন আরো অনেক। এখানকার নন্দকুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানশন ঘিরে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আবাসিক ভবনটিতে কেমিক্যাল গোডাউন থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় হাইকোর্টে ৫টি আবেদন করা হয়।

চুড়িহাট্টার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত/ক্ষতিগ্রস্তের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ, নিমতলীর ট্রাজেডির পর তদন্ত কমিটির করা ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নুর মোহাম্মদ আজমী ও খন্দকার মো. সায়েদুল কাউছার এবং বংশালের বাসিন্দা মো. জাবেদ মিয়া কেমিক্যাল গোডাউন ও কারখানা এবং ব্যবসার উদ্দেশে মজুদ করা গ্যাস সিলিন্ডার অপসারণ নিয় রিট করেন।

এ তিন রিট শুনানির জন্য আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এ সময় আদালত বলেন, নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা উচ্চ পর্যায়ের কমিটি এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে যেসব সুপারিশ করেছিলেন সেগুলোর বাস্তবায়ন হলে চকবাজারের এই দুর্ঘটনা হয়ত ঘটতো না।

পুরান ঢাকার ওইসব এলাকার বাড়ির মালিকরা তাদের বাসা দুই-তিনগুণ বেশিতে গোডাউন হিসেবে ভাড়া দেন। আর নিজেরা থাকেন গুলশান-বনানীতে। সিটি কর্পোরেশন এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। পরে ভয়াবহ সব দুর্ঘটনায় মারা যায় সাধারণ মানুষ। আর পুরান ঢাকার রাস্তাগুলো এত সরু যে সেসব রাস্তা দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও ঠিকমতো যেতে পারে না।

আদালত বলেন, আমরা পত্রিকায় দেখেছি নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরে প্রধানমন্ত্রী দুটি মেয়েকে দত্তক নিয়েছিলেন। আবার চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের পর পরই তিনি তা মনিটরিং করেছেন। তিনি অনেক করছেন। কিন্তু তিনি একা তো এ দেশটা চালাতে পারবেন না। সবারই তো দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে।

এ তিনটি রিট ছাড়াও একটি আবেদন করে কয়েকটি সংগঠন।  

২০১০ সালে রাজধানীর নিমতলী ট্রাজেডির তদন্ত কমিটির ১৭ দফা বাস্তবায়ন চেয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)সহ কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে এ আবেদন করা হয়। এজন্য উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় হতাহতের ঘটনায় পুরান ঢাকায় আর যেন রাসায়নিক ব্যবসার অনুমোদন দেওয়া না হয় তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আবেদন করা হয়।

এ আবেদনের আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন।
 
বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।

এছাড়া আইনজীবী জেড আই খান পান্নার রিট আবেদন শুনানির জন্য বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়। পরে আদালত বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে রিটটি নিয়ে যেতে বলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৯
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।