ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

দণ্ডিত সেই শিশুদের মুক্তির বিষয়ে জানতে চান হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৯
দণ্ডিত সেই শিশুদের মুক্তির বিষয়ে জানতে চান হাইকোর্ট

ঢাকা: বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্টে দণ্ডিত হয়ে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা ১২১ শিশুর মধ্যে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের কতজন মুক্তি পেয়েছে সে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুদের কতজন জামিনে মুক্তি পেয়েছে, তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।

এছাড়া ১২১ শিশুর বাইরে মোবাইল কোর্টে দণ্ডিত অন্য কোনো শিশু সংশোধনাগারে আছে কিনা, থাকলে তাদের ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাও জানাতে বলা হয়েছে।

২৬ নভেম্বরের (মঙ্গলবার) মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে এসব তথ্য জানাতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।

এর আগে এ বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনার পর গত ৩১ অক্টোবর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।

ওইদিন আদেশে আদালত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দণ্ডিত ওই দুই কেন্দ্রে থাকা ১২ বছরের নিচের শিশুদের অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দেন। এছাড়া বাকিদের ছয় মাসের জামিন দেন। তারা সংশ্লিষ্ট শিশু আদালতে জামিননামা দেওয়ার পর মুক্তি পাবেন।

একইসঙ্গে তাদের দণ্ড ও আটকাদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। শিশুদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম।

‘আইনে মানা, তবু ১২১ শিশুর দণ্ড’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজের আনেন ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম। তিনি প্রতিবেদনটি পড়ে শোনান। এরপর আদালত আদেশ দেন।
 
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশু আইনে স্পষ্টই বলা আছে, অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, অপরাধে জড়িত থাকা শিশুর বিচার শুধু শিশু আদালতেই হবে। অথচ ভ্রাম্যমাণ আদালত শিশুদের দণ্ড দিয়ে চলেছেন। এ মুহূর্তে টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ১২১ জন শিশুর সন্ধান পাওয়া গেছে, যাদের দণ্ড দিয়েছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরা তিন মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত মেয়াদে কারাদণ্ড ভোগ করছে।
 
শিশু আইনের পাশাপাশি হাইকোর্টের একাধিক রায়েও বলা হয়েছে, শিশুর বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগের বিচার শুধু শিশু আদালতেই হতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত দূরের কথা, অধস্তন আদালতের কোনো বিচারক শিশুদের বিচার করলেও তা হবে বেআইনি।
 
টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছরের ৩ মে থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত ১২১টি শিশু সেখানে রয়েছে। এদের মধ্যে ১৭ বছর বয়সী রয়েছে ২৮ জন। ২৬ জনের বয়স ১৬, ২০ জনের বয়স ১৫, ১৬ জনের বয়স ১৪, ১১ জনের বয়স ১২। ৭ জনের বয়স ১৩। বাকি ১২ জনের বয়স ৮ থেকে ১১ বছর। একজনের বয়স উল্লেখ নেই।
 
দণ্ডিতদের মধ্যে ৭৫ জনকে দণ্ডবিধির ৩৫৬ ধারা অনুযায়ী চুরির দায়ে ছয় মাস এবং ৩৪ জনকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী এক বছর করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। শুধু একটি শিশু ছয় মাসের সাজা পেয়েছে দণ্ডবিধির ১৮৯ ধারায়। ১৩ বছর বয়সী শিশুটির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৮৯ ধারায় সাজা দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে সরকারি কর্মচারীকে ক্ষতিসাধনের হুমকির।
 
এছাড়া যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রেও ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত একটি শিশু রয়েছে। কেশবপুরের এই শিশুটি বাল্যবিয়ের কারণে এক মাসের সাজা পেয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ।
 
২০১৩ সালের শিশু আইন বলছে, ‘বিদ্যমান অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সব ব্যক্তি শিশু হিসেবে গণ্য হবে। ’ ১৬ ধারা বলছে, ‘আইনের সঙ্গে সংঘাতে আসা শিশুর সংঘটিত যেকোনো অপরাধের বিচার করবার জন্য প্রত্যেক জেলা সদরে এক বা একাধিক শিশু আদালত থাকবে। কোনো অপরাধ সংঘটনে প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু একত্রে জড়িত থাকলেও শিশুর বিচার শুধু শিশু আদালতই করবে। শিশু আদালতেরও সাজসজ্জা ও ধরন ভিন্ন হতে হবে। অপরাধ অজামিনযোগ্য হোক বা না হোক, আদালত শিশুকে জামিনে মুক্তি দিতে পারবে। এমনকী আদালতে শিশুর প্রথম হাজির করবার ২১ দিনের মধ্যে প্রবেশন কর্মকর্তা একটি সামাজিক অনুসন্ধান দাখিল করবেন। প্রবেশন কর্মকর্তা বা বৈধ অভিভাবকসহ আইনজীবীর উপস্থিতি আদালতে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৯
ইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।