ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘দেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করতেই হলি আর্টিজানে হামলা’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৯
‘দেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করতেই হলি আর্টিজানে হামলা’ হলি আর্টিজানে নৃশংস হামলায় প্রাণ হারান পুলিশসহ ২২ জন। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: দেশের সার্বভৌমত্ব ও জননিরাপত্তা বিপন্ন করতে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ঠাণ্ডা মাথায় হলি আর্টিজানে হামলা করা হয়। কূটনৈতিক এলাকায় হামলা করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যও ছিল সন্ত্রাসীদের। তাই এই মামলার রায়ে অভিযুক্ত আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টআদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান দেশের ইতিহাসে অন্যতম ঘৃণ্য ও বর্বরোচিত হামলা মামলার রায় ঘোষণার দিন রেখেছেন। এ দিন বেলা ১২টার দিকে রায় ঘোষণার কথা রয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ২ জুলাই সকালে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো সদস্যরা হলি আর্টিজানে অভিযানকালে দেশি-বিদেশি ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এর আগেই দুজন বিদেশিসহ ১৯ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। জিম্মি থাকা অবস্থায় হত্যা করা হয় নয় ইতালীয়, সাত জাপানি, এক ভারতীয়, এক বাংলাদেশি-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিক, দু’জন বাংলাদেশিসহ মোট ২০ জনকে। এ ঘটনায় সন্ত্রাসীদের ছোড়া গ্রেনেডের আঘাতে প্রাণ হারান বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন আহমেদ ও সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন নৃশংস ও বর্বরোচিত হামলার ঘটনা বিরল। জঙ্গিরা বেকারির ভেতরে ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিক ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন এবং বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চেয়েছে। এখানে নিরীহ বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করা হয়েছে, যাদের অনেকে আমাদের উন্নয়ন সহযোগী।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘটনাস্থলে ডাকা হয় সেনাবাহিনী।  ছবি: ডিএইচ বাদলহলি আর্টিজান হামলার পর কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়েছিলেন পাঁচ জঙ্গি। তারা হলেন- মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ওরফে মামুন, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের সময় নিহত হয়েছেন আরও আটজন। মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আবুল হাসনাত রেজা করিমকেও অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আর বিচারে সোপর্দ করা হয় আট আসামিকে।

আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেন, মামলার আট আসামির মধ্যে ছয়জন তদন্তকালে গ্রেফতার হন। তাদের প্রত্যেকেই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে স্বেচ্ছায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান ও হাদিসুর রহমান। তাদের জবানবন্দিতেই শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপনের সম্পৃক্ততার বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। আমি মনে করি, আমরা এই ঘটনায় আসামিদের দায় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি। তাই আমরা আশাবাদী, অভিযুক্ত আসামিদের সবাই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হবে।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি আসামিদের বিচারের মাধ্যমে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ের ক্ষত কিছুটা হলেও মোচন হবে। এই রায়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রতি একটা বিশেষ বার্তাও যাবে; সেটি হলো- সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে কোনোভাবেই পার পাওয়া যায় না। আশা করি, রায়ে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে যাতে ভবিষ্যতে যুব সমাজের আরও কেউ জঙ্গিবাদের মতো ভয়াবহ ও অভিশপ্ত পথে পা না বাড়ায়।
কমান্ডোদের অভিযানে শেষ হয় জিম্মিদশা।  ছবি: ডিএইচ বাদল২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্যরা। তাদের হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। পরে কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়।

ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির মামলাটি তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। একই বছরের ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান।

এক বছরের বিচারকালে মামলার মোট ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। এরপর আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন এবং রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে গত ১৭ নভেম্বর এ মামলার বিচারকাজ শেষ হয়। পরে আদালত রায়ের জন্য ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৯
কেআই/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।