ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বিকল্প চাবিতে তালা খুলে দীপনকে পড়ে থাকতে দেখেন বাবা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৯
বিকল্প চাবিতে তালা খুলে দীপনকে পড়ে থাকতে দেখেন বাবা ফয়সাল আরেফীন দীপন। ফাইল ফটো

ঢাকা: শ্বশুর অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হকের কাছে খবর শুনে তাকে নিয়েই দীপন হত্যার ঘটনাস্থলে যান স্ত্রী রাজিয়া রহমনা। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের নিচতলায় রাজিয়াকে বসিয়ে রেখে তার শ্বশুর তিনতলায় জাগৃতি প্রকাশনীর অফিসে গিয়ে তালা ভেতর থেকে লক করা দেখতে পান। বিকল্প চাবি দিয়ে তালা খুলে দীপনকে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি।

আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের এমন বর্ণনা দেন তার স্ত্রী রাজিয়া রহমান। তিনি চিকিৎসক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে কর্মরত।

এই মামলায় গত ১৩ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের পর ১৮ নভেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিন ধার্য ছিল। সেদিন বাদী রাজিয়া রহমান আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় ১ ডিসেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেন আদালত।

সে অনুযায়ী রোববার (১ ডিসেম্বর) সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে রাজিয়া রহমান ও জব্দ তালিকার সাক্ষী আনোয়ার হোসেনের জবানবন্দির মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। এদিন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে রাজিয়া রহমান বলেন, ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবর আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আমার শ্বশুরের কাছে হত্যার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। আমাকে আজিজ সুপার মার্কেটের নিচতলায় বসিয়ে রেখে তিনি তিনতলায় জাগৃতি প্রকাশনীর অফিসে গিয়ে তালা ভেতর থেকে লক করা দেখতে পান। বিকল্প চাবি দিয়ে তালা খুলে আমার শ্বশুর দীপনকে অফিসের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। তাকে ঘাড়ে কোপ দিয়ে হত্যা করা হয়।

তিনি বলেন, সেখান থেকে পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে দীপনের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠায়। পরের দিন ১ নভেম্বর ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ এনে দাফন করা হয়। আমার শ্বশুর ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে ২ নভেম্বর আমি থানায় অজ্ঞাত আসামিদের নামে মামলা করি।

জবানবন্দি শেষে রাজিয়া রহমানকে আসামিপক্ষের খায়রুল ইসলাম লিটন, সাইফুর রহমান সবুজ ও আরেক আইনজীবী জেরা করেন। জেরার একপর্যায়ে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করার কারণে বিচারক তাদের থামিয়ে দেন। বিচারক বলেন, তিনি স্বামী হারিয়ে একবার যন্ত্রণা পেয়েছেন, অপ্রাসঙ্গিক জেরা করে তাকে আপনারা আবার কষ্ট দেবেন?

আদালতে পলাতক দুই আসামির রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন। তবে তার কাছে বিচারক জেরা করবেন কি-না জিজ্ঞাসা করলে তিনি আসামির নামই বলতে পারেননি। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকিরের কাছ থেকে নথি দেখে সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন ওরফে হাসিবের নাম বলেন। তবে তিনি কোনো সাক্ষীকেই জেরা করেননি।

কাঠগড়ায় থাকা অপর দুই আসামির কোনো আইনজীবী ছিলেন না। তখন বিচারক তাদের লিগ্যাল এইড থেকে আইনজীবী নিতে বললেও তারা তাতে অস্বীকৃতি জানান। নিজেই জেরা করবেন বলে তাদের একজন চিৎকার করে বলেন। তবে তিনি বাদীকে কোনো জেরা করেননি।

এরপর আজিজ সুপার মার্কেট কো-অপারেটিভ মালিক সমিতির অফিস সহকারী আনোয়ার হোসেন জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন। দু’জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এই মামলায় আগামী ১০ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করেন আদালত।

সাক্ষ্য দেওয়ার সময় রাজিয়া রহমানের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সরকার লিটু আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ঢাকার চিফ মে‌ট্রোপ‌লিটন ম্যা‌জি‌স্ট্রে‌ট আদালতে জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফীন দীপন হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি দক্ষিণের সহকারী পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান। অভিযোগপত্রে আটজনকে অভিযুক্ত ও ১১ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।

মামলার আসামিরা হলেন মইনুল হাসান শামীম, মো. আ. সবুর, খাইরুল ইসলাম, মো. আবু সিদ্দিক সোহেল, মো. মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, মো. শেখ আব্দুল্লাহ, সৈয়দ জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, ডি‌সেম্বর ০১, ২০১৯
কেআই/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।