ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

আদালতে ‘অন্যমনস্ক’ ছিলেন মজনু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২০
আদালতে ‘অন্যমনস্ক’ ছিলেন মজনু

ঢাকা: ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেছেন, ধর্ষণ সমাজের একটা ব্যাধি। এটি এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। দোষীদের কঠোর শাস্তি না হলে এটা বন্ধ হবে না।

বৃহস্পতিবার (০৯ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার আসামি মজনুর রিমান্ড শুনানিকালে তিনি এ কথা বলেন। তবে শুনানিকালে আদালতে ‘নিস্পৃহ ও অন্যমনস্ক’ দেখা যায় আসামি মজনুকে।

 

এদিন দুপুর দেড়টার কিছু সময় পর মজনুকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আনা হয়। এ সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির ক্যান্টনম্যান্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক আবু সিদ্দিক সোহেল আসামির ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।  

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামি একজন অভ্যাসগত অপরাধী। প্রতিবন্ধী, পাগল, ভ্রাম্যমাণ নারীদের সঙ্গে তাদের সম্মতি ব্যতীতই এই অনৈতিক কাজ করে আসছিলেন তিনি। আসামি ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় থাকে। তার স্থায়ী কোনো বসবাসের জায়গা নাই। ঘটনার দিন ভুক্তভোগীকে একা পেয়ে তাকে জোর করে ধরে ফুটপাতের পাশের ঝোপের ভেতরে নিয়ে ধর্ষণ করে।

মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও চাঞ্চল্যকর। মামলার মূল রহস্য উদঘাটনসহ আসামির কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহসহ অন্য কোনো আসামি জড়িত আছে কি না, এসব জানতে রিমান্ড মঞ্জুর করা দরকার।  

এরপর বেলা পৌনে তিনটার দিকে আসামি মজনুকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাফুজ্জামান আনছারীর আদালতে হাজির করা হয়। শুনানির শুরুতে ক্যান্টনম্যান্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা রিমান্ড আবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন। এসময় রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়ে মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু বলেন, মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও চাঞ্চল্যকর। তিনি একজন সিরিয়াল রেপিস্ট। ধর্ষণ সমাজের একটি ব্যাধি। যা এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এটা বন্ধ হবে না।  

রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শেষে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী আছে কি না, তা জানতে চান বিচারক। তবে এ সময় কোনো আইনজীবী আসামিপক্ষে উপস্থিত ছিলেন না।  

শুনানির সময় গ্রেফতার মজনুকে ‘অন্যমনস্ক ও নিস্পৃহ’ দেখা গেছে। আদালতের কার্যক্রমের দিকে এবং বিচারক বা আইনজীবীদের দিকে তার মনোযোগ ছিল না। তাই তিনি নিজেও আদালতের সামনে কিছু বলেননি। শুনানি শেষে আদালত তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন। এরপর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাকে আবার কোর্ট হাজতে ফেরত নেওয়া হয়।  

গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাতটার দিকে কুর্মিটোলা বাস স্টপে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নামার পর ওই ছাত্রীকে মুখ চেপে পার্শ্ববর্তী একটি স্থানে নিয়ে যায় অজ্ঞাত ব্যক্তি। সেখানে তাকে অজ্ঞান করে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। পরে ১০টার দিকে তার জ্ঞান ফিরলে তিনি নিজেকে নির্জন স্থানে অবিষ্কার করেন। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নিজ গন্তব্যে পৌঁছালে রাত ১২টার পর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়।

ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর বাবা ঘটনার দিন রাতেই ক্যান্টনম্যান্ট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। যাচাই-বাছাই শেষে পরদিন অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা একজনকে আসামি করা হয়। মামলাটি প্রথমে ক্যান্টনম্যান্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুজ্জামানকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তদন্তের দায়িত্ব পান মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ক্যান্টনম্যান্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক আবু সিদ্দিক।

এদিকে ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠেছে ঢাবি ক্যাম্পাস। ঘটনার পর থেকেই শাহবাগ মোড় অবরোধসহ ক্যাম্পাসে নানা কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। ধর্ষকের বিচার দাবিতে এক হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, ডাকসু, সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ ও বিভিন্ন বাম সংগঠনগুলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২০
কেআই/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।