ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

নারী সন্দেহে লাশের ডিএনএ প্রতিবেদনের ফলাফল পুরুষ!

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১
নারী সন্দেহে লাশের ডিএনএ প্রতিবেদনের ফলাফল পুরুষ! প্রতীকী ছবি

ঢাকা: সিলেটে নিখোঁজ এক গৃহবধুর গলিত লাশ (কঙ্কাল) সন্দেহে উদ্ধারের পর তার ডিএনএ টেস্টের জন্য মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। পরীক্ষা শেষে নমুনায় আসে লাশটি নারীর নয়, কোনো পুরুষের।

এমন প্রতিবেদন দিয়ে উচ্চ আদালতে জামিন চেয়েছেন ওই গৃহবধুর স্বামী এবং মামলাটির একমাত্র আসামি ওমর ফারুক।  

রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) শুনানি শেষে গৃহবধু পুতুল হত্যা মামলা আসামিকে জামিন না দিয়ে বিচারকাজ ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এরপর এ বিষয়ে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেন।

আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

আইনজীবীরা জানান, ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর সিলেটের জাফলং ভ্যালী বোর্ডিং স্কুল পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি নালার পাশের জঙ্গল থেকে অজ্ঞাত মহিলার গলিত কঙ্কাল উদ্ধার করে জৈন্তাপুর থানা পুলিশ। সুরতহাল রিপোর্টে লাশের শরীর থেকে লাল রংয়ের বক্ষবন্ধনী এবং সোনালী রংয়ের চুড়ি আলামত হিসেবে জব্দের তথ্য দেওয়া হয়েছে। এরপর লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় ওই বছরের ১ নভেম্বর স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর নিজ কন্যা পুতুল নিখোঁজের অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ওই গৃহবধুর মা আনোয়ারা বেগম। পরদিন ৩ নভেম্বর পুলিশ গৃহবধুর স্বামী ওমর ফারুক দোলনকে গ্রেপ্তার করে। ৪ নভেম্বর সিলেটের জৈন্তাপুর থানায় মামলা করেন আনোয়ারা বেগম।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৯ অক্টোবর টেলিফোনে ডেকে নিয়ে মাথায় আঘাত করে ও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে পুতুলকে হত্যা করেন ওমর ফারুক। ৫ নভেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ওমর ফারুক। তবে লাশটি কার তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়।

২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর দেওয়া ডিএনএ টেস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, অজ্ঞাতনামা লাশটি কোনো পুরুষের। আর পুতুলের পিতা রফিক মিয়া ও মা আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে লাশের ডিএনএ’র মিল নেই।

পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১২ মার্চ অভিযোগপত্র দেওয়ার পর অভিযোগ গঠন করেন আদালত। শুরু হয় সাক্ষ্য গ্রহণ।  

আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, ময়নাতদন্ত শেষে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, লাশটা দেখে প্রতিয়মান হয় ২/৩ মাস আগে মৃত্যু হয়েছে। তবে লাশটি কোনো নারীর বলে প্রাথমিকভাবে মনে হয়। তবে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়। ডিএনএ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাশটি কোনো পুরুষের। আর পুতুলের মা ও বাবার ডিএনএ’র সঙ্গে ওই লাশের ডিএনএ’র মিল নেই। কিন্তু গত ৫ বছর ধরে আসামি কারাগারে আছেন। এ কারণে জামিন আবেদন করা হয়।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী জানান, আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। আর সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী লাশটি একজন মহিলার। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষায় আসলো যে লাশটি একজন পুরুষের।  

তিনি বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিএনএ প্রতিবেদন পাবার পর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন হাজারখানেক নমুনা পলিথিনের ব্যাগ ও কাগজে মোড়ানো খামে লেবেলবিহীন অবস্থায় রাখা আছে। এতে অসঠিকভাবে আলামত চিহ্নিত করে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো সম্ভব না বলে প্রতিবেদন দিয়ে বলেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এছাড়াও তদন্ত কর্মকর্তা পুনরায় লাশের ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নেন। তিনি লাশটির কবর চিহ্নিত করার জন্য গেলেও তা পারেননি। কারণ অনেকদিন আগের কবর সংরক্ষণ করার সুযোগ নেই বলে জানানো হয়। এ কারণে পুনরায় ডিএনএ পরীক্ষা করা যায়নি।  

বাংলাদেশ সময়: ০০০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২১
ইএস/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।