ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সমঅধিকার নিশ্চিত করতে বহু বিয়ে নিয়ে নীতিমালা কেন নয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২২
সমঅধিকার নিশ্চিত করতে বহু বিয়ে নিয়ে নীতিমালা কেন নয়

ঢাকা: পারিবারিক জীবন রক্ষার বৃহৎ স্বার্থে বহুবিবাহ আইনের বিষয়ে নীতিমালা কেন করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে স্ত্রীদের মধ্যে সমঅধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া আইন অনুসারে বহু বিবাহের অনুমতির প্রক্রিয়া কেন অবৈধ হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।

জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার (৫ জানুয়ারি) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো.মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

রুলে আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব এবং ধর্ম সচিবকে এ বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদেনের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান।

এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ-১৯৬১ এর বহুবিবাহ সংক্রান্ত ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়।

মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ-১৯৬১ এর বহু বিবাহ সংক্রান্ত ৬ ধারায় বলা হয়েছে—

১) কোনো ব্যক্তির বিয়ে বলবৎ থাকতে তিনি সালিশি কাউন্সিলের লিখিত পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন না বা অনুরূপ অনুমতি ছাড়া অনুষ্ঠিত কোনো বিয়ে ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেকরণ) আইনের অধীনে রেজিস্ট্রি হবে না।

২) ১নং উপধারা অনুযায়ী অনুমতির ও দরখাস্ত নির্ধারিত ফিসহ চেয়ারম্যানের কাছে নির্দিষ্ট দফতরে জমা দিতে হবে ও তাতে প্রস্তাবিত বিয়ের কারণসমূহ এবং এই বিয়ের ব্যাপারে বর্তমানে স্ত্রী অথবা স্ত্রীদের সম্মতি নেওয়া হয়েছে কিনা তা উল্লেখ থাকবে।

৩) ২নং উপধারা অনুযায়ী দরখাস্ত জমা নেওয়ার পর চেয়ারম্যান আবেদনকারীকে ও বর্তমান স্ত্রী অথবা স্ত্রীদের প্রত্যককে একজন করে প্রতিনিধি মনোনীত করতে বলবেন। এভাবে গঠন করা সালিশি কাউন্সিল প্রস্তাবিত বিয়ে প্রয়োজনীয় ও ন্যায়সঙ্গত বলে মনে করলে, যুক্তিযুক্ত বলে মনে হতে পারে এমন সব শর্ত থাকলে সেই আবেদন মঞ্জুর করতে পারবেন।

৪) দরখাস্তের বিষয় নিষ্পত্তি করতে সালিশি কাউন্সিল নিষ্পত্তির কারণাগুলো লিপিবদ্ধ করবেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যে কোন পক্ষ নির্দিষ্ট ফি দিয়ে নির্দিষ্ট দফতরে সংশ্লিষ্ট সহকারী জজের কাছে পুনঃবিবেচনার জন্য দরখাস্ত করতে পারে; তার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে ও কোনো আদালতে এ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।

৫) কোনো ব্যক্তি যদি সালিশি কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া অন্য বিয়ে করে তবে তাকে—
ক) বর্তমান স্ত্রী অথবা স্ত্রীদের তলবি ও স্থগিত দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করতে হবে। সেই টাকা এরূপে পরিশোধ না করা হলে বকেয়া ভূমি রাজস্বরূপে আদায়যোগ্য হবে; এবং

খ) অভিযোগে অপরাধী সাব্যস্ত হলে এক বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় প্রকার দণ্ড হবে।

আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, এখানে নারীর সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। যে ইসলামিক আইন দেখিয়ে বলা হয়েছে একজন পুরুষ চারজন স্ত্রী রাখতে পারবেন, সেখানে ইসলামে বলা হয়েছে, সবার প্রতি সমানভাবে সুবিচার করতে হবে। এখানে শুধুমাত্র পিক অ্যান্ড চুজ করা যাবে না। শুধু বিয়ে করতে পারবে—ওই অংশটুকু নিলে হবে না। সবার প্রতি কীভাবে সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে তার সুযোগ রাখতে হবে। টাকা দিচ্ছে কিনা। আদৌ তার বিয়ে করার আর্থিক সঙ্গতি আছে কিনা, এগুলো দেখার সুযোগ চেয়ারম্যানের নেই।

তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় কোর্টের মাধ্যমে হয়, চেয়ারম্যানের মাধ্যমে নয়। কোর্ট সমন দেন, সাক্ষীদের ডাকেন। বিয়ের যে কারণটা উল্লেখ করেন, সেটা সত্য কিনা সেটা যাচাই করেন। এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের যাচাই করার সুযোগ নেই। এছাড়া চেয়ারম্যান যদি বিয়ে করতে চান তাহলে তো তাকে নিজেকেই নিজের অনুমতি দিতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২২
ইএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।