ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

একজন প্রতিমাশিল্পীর গল্প

সোহেল রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১০
একজন প্রতিমাশিল্পীর গল্প

মাটি, খড়, কাঠ ও বাঁশের কঞ্চি। ছোট-বড় কয়েকটা তুলি।

সঙ্গে লাল, সবুজ, সাদাসহ নানা রঙ। এ নিয়েই প্রতিদিন তার জীবনে সূর্য ওঠে। তিনি গড়েন। আঁকেন। তার সুনিপুণ হাতের জাদুতে তৈরি হয় প্রতিমা।

কৈশোরে বাবার হাত ধরে শুরু হয় তার এ শিল্পসৃষ্টির জগৎ। ১৯৮৬ সালে জীবনে প্রথম পূর্ণাঙ্গ ‘কৃষ্ণের’ প্রতিমা বানালে বাবা নারায়ণ পাল পিঠ  চাপড়ে উৎসাহ দেন। তারপর থেকেই এগিয়ে চলেছেন তিনি। নিরন্তর চলছে তার শিল্প সাধনা।

এ পর্যন্ত তিনি তৈরি করেছেন পনের হাজারেরও বেশি প্রতিমা। গড়ে তুলেছেন প্রতিমাশিল্পের স্থায়ী প্রতিষ্ঠান ‘বল্লভ নারায়ণ মৃৎ শিল্পালয়’। তিনি সিলেটের দুলাল পাল।

সিলেটের মন্দিরে মন্দিরে শোভা পাচ্ছে তারই হাতে গড়া অসংখ্য প্রতিমা। এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবে শহরের ৬০টি প্যান্ডেলে তার বানানো দুর্গা দেবীর ৬০টি প্রতিমা স্থান পাচ্ছে।

প্রতিমা বানানোটা দুলাল পালের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। তারা ছয় পুরুষ ধরে করে আসছেন এ কাজ। বংশপরম্পরায় এ কাজ করে এলেও দুলাল গতানুগতিকতা থেকে যেন একটু বেরিয়ে এসেছেন।

‘আমার পূর্বপুরুষের কাছ থেকে বংশপরম্পরায় এ কাজ আমি পেয়ে থাকলেও একটি পর্যায়ে এসে আমার কাছে এটি একটি শিল্পসাধনাই মনে হল। নিজেকে আমার শিল্পী ভাবতেই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। ’ বললেন দুলাল।

নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ায় দুলালের শিল্পালয়। ছোট্ট একটি ঘর। তাতে শোভা পাচ্ছে নানা রঙের ছোট-বড় হাজারেরও বেশি প্রতিমা। ৩৩ কোটি দেবতার মধ্যে প্রায় ৫০ পদের দেবতার প্রতিমা রয়েছে তার শিল্পালয়ে। সব কটিই তার দক্ষ হাতের বানানো। এগুলো দেখতে প্রায়ই ভিড় করেন নানা বয়সী ছেলেমেয়ে ও শিল্পরসিক বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।

স্থানীয় চৈতালী সংঘের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায় জানান, দুলাল বেশ ভালো কাজ করে। তার কাজের মান খুব ভালো। বহুকাল ধরেই প্রতিমা বানিয়ে আসছেন তার পূর্বপুরুষরা।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুদীপ চক্রবর্তী  বলেন, সিলেটে প্রতিমা বানানোর কারিগর দুলালদা। তার নিখুঁত কাজ ধর্ম ও শিল্প উভয়েরই দাবি পূরণ করে।

দুলালের বয়স ৪২। প্রীতম ও প্রীতি তার ছেলেমেয়ে। প্রতিমা বানিয়েই চলছে তার মধুর সংসার। পূজা ও বিভিন্ন উৎসবে আয় হয় লাখ দুয়েক টাকা। উৎসব ছাড়া অন্যান্য সময়ে প্রতি মাসে হাজার দশেক টাকা তার হাতে ওঠে। বললেন, ‘আমার খুব ভালো লাগে, যখন অনেক পরিশ্রমের পর দেখি কোনও একটা মন্দিরে শোভা পাচ্ছে আমার তৈরি প্রতিমা। সবাই প্রশংসা করছে আমার শিল্পের। মনটা আনন্দে ভরে যায়। ’

অষ্টম শ্রেণী পাস করে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে প্রতিমা তৈরিতে ডুব দেন দুলাল। আপন মনে সৃষ্টি করেন প্রতিমা। কাজ করেন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। মাঝে মধ্যে চাহিদার কারণে খুব তাড়াহুড়া করে ফেলেন কাজ করতে গিয়ে। আবার মাঝে মধ্যে তুলির আঁচড় সৃষ্টি করেন চমৎকার কিছু শিল্প। তখন মনোযোগ আরো নিবিড় হয়। জানালেন দুলাল।  

বাকি জীবনও প্রতিমা বানিয়ে পার করতে চান দুলাল। কথা শেষ হয়। দুলাল হাতে তুলে নেন রঙতুলি। দুর্গা দেবীর কপালে চলতে থাকে তার তুলির আচঁড়।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২২৫০, অক্টোবর ১৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।