ওজন বাড়ানোর নেপথ্যে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাকে দায়ী করা হয়ে থাকে। সেজন্য ওজন কমাতে বা দ্রুত মেদ ঝরাতে অনেকে রোজকার তালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার বাদ দিয়ে দেন।
খাবার তালিকা থেকে ভাত, রুটি, মিষ্টি ছেঁটে ফেলেন তারা। কিন্তু ওজন কমানোর লক্ষ্যে কার্বোহাইড্রেট বাদ দেওয়া কি যুক্তিযুক্ত? এতে কী শরীরের ক্ষতি ডেকে আনা হচ্ছে না?
পুষ্টিবিদরা বলেছেন, দীর্ঘ দিন ধরে শরীরে কার্বোহাইড্রেট না গ্রহণ বিপদ ডেকে আনতে পারে। শরীরে জন্য ভাল নাও হতে পারে বিষয়টি। বয়স এবং শারীরিক সুবিধা-অসুবিধা বুঝে ব্যক্তিবিশেষে প্রতি দিন ৬০ থেকে ১৩০ গ্রাম পর্যন্ত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া যেতেই পারে।
তাই চিকিৎসকরা বলছেন, পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া হঠাৎ খাবারের তালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেট বাদ পড়লে তা শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ওজন কমানোর লক্ষ্যে খাবারের তালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেট বাদ দিলে শরীর এবং মনের ওপর যেসব প্রভাব পড়তে পারে -
১) শরীরে শর্করার ঘাটতি থাকলে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথা ব্যথা করে। কারণ, মস্তিষ্ক তার সব কাজ পরিচালনা করার জন্য শর্করার উপর নির্ভরশীল। শরীরে সেরেটোনিন হরমোন ক্ষরণেও সহায়তা করে কার্বোহাইড্রেট। তাই শর্করার ঘাটতি থাকলে মন খারাপ বা হঠাৎ উদ্বেগ বাড়তে পারে।
২) যে কোনো কাজ করতে গেলে যে শক্তির খরচ হয়, তার বেশির ভাগই আসে কার্বোহাইড্রেট থেকে। কিন্তু খাবারের তালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেট বাদ দিলে, শরীর সেই পরিমাণ শক্তি সঞ্চয় করতে পারে না। ফলে কায়িক পরিশ্রম করতে গেলে শরীর অতিরিক্ত দুর্বল লাগে।
৩) ডায়েট করা শুরু করলে অনেকেই প্রথম দিকে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন। তালিকা থেকে শর্করা এবং ফাইবারজাতীয় খাবার বাদ দিলে এই সমস্যা আরও বেড়ে যায়।
৪) কার্বোহাইড্রেট একেবারে ছেড়ে দিলে ঘন ঘন খিদে পায়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্বোহাইড্রেট অপরিহার্য। কার্বোহাইড্রেটের অভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যেতে পারে। এর ফলে গ্লুকোজের অন্যান্য উৎস যেমন চিনি বা মিষ্টি খাওয়ার প্রতি টান বাড়ে।
৫) এ সমস্যাটা নারীদের ক্ষেত্রে। কার্বোহাইড্রেট খাওয়া একেবারে বন্ধ করে দিলে অনেক নারীর ক্ষেত্রে ঋতুস্রাব অনিয়মিত হয়ে পড়ে। শরীরে কার্বোহাইড্রেট না গেলে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে না। এর ফলে ঋতুস্রাব অনিয়মিত হয়ে পড়ে।
এসব বিষয়কে সামনে রেখে তাই পুষ্টিবিদরা বলেছেন, ওজন কমাতে শর্করা খাবার একেবারে বাদ দেওয়া উচিত নয়। কারণ, শরীরের বিভিন্ন কোষীয় চক্রে শক্তির উৎস হিসেবে শর্করাই বেশি ব্যবহার করে শরীর। মস্তিষ্কের জ্বালানি হিসেবেও শর্করা ব্যবহৃত হয়।
ওজন কমাতে চাইলে শর্করার পরিমাণ ১০ থেকে ২০ শতাংশ কমানো যায়। সাধারণ শর্করার পরিবর্তে জটিল শর্করা খান। জটিল শর্করা ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে। লাল আটা, লাল চাল, ওটস, জবের চিড়া, শাক—এগুলো জটিল শর্করার ভালো উৎস।
ওজন কমাতে হলে সাদা আটা, ময়দা, সাদা চাল, চিনি, কর্নফ্লেক্স, পাউরুটি, ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার, অতিরিক্ত তেল বা তৈলাক্ত খাবার বর্জন করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪
এসএএইচ