ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

পূরণ হলো তারেক মাসুদের শেষ ইচ্ছা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১১

আব্বার কবরের পাশে আমার জন্য জায়গা রেখো, বাবাকে মাটির শয্যায় শুইয়ে রাখার পর চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ মাকে এ ইচ্ছার কথাই জানিয়েছিলেন।

কিন্তু তার এ কথা যে এত দ্রুতই ফলে যাবে তা বুঝতে পারেননি মা নুরুন নাহার মাসুদ।

মায়ের কোলে ছেলে লাশ হয়ে ফিরবে তা কখনও তার ভাবনাতে আসেনি।

গত ৮ আগস্ট বাবার মিলাদ মাহফিলে যোগ দিতে এসেছিলেন বিখ্যাত এ চলচ্চিত্র নির্মাতা। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়িতে লাশ হয়ে এলেন তিনি।

কিছুদিন আগে জীবনসঙ্গীকে হারান নুরুন নাহার মাসুদ (৮০)। স্বামী হারানোর শোকের ক্ষত এখনও দগদগে তার হৃদয়ে । ঠিক সেই মুহূর্তে সড়ক দুর্ঘটনায় বড় ছেলে তারেক মাসুদ নিহত হওয়ায় তিনি এখন শোকে পাথর।


গত ১৭ আগস্ট বুধবার দুপুরে ফরিদপুর ভাঙ্গা পাইলট হাইস্কুল মাঠে আরেকবার জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি নূরপুরে বাবার কবরের পাশে তারেক মাসুদকে দাফন করা হয়েছে।  

নিজের পছন্দ করা স্থানে নিজ বাড়ির আঙিনার ফুল বাগানের মাঝে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হলেন তারেক মাসুদ। বাগানের রঙ্গণ, গাঁদা, জুঁই, চামেলী, সন্ধ্যা মালতী, নয়ন তারা ও গন্ধরাজ ফুলগুলো মলিন হয়ে আছে। তারাও যেন প্রিয়জন হারানোর বেদনায় বড় বেশি কাতর হয়ে পড়েছে।  

তারেক মাসুদ বাড়ি এসে যে ঘরটিতে ঘুমাতেন, ঠিক সে ঘরের সামনেই বাবার কবরের অদূরে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ঢাকা-আরিচা সড়কে গত ১৩ আগস্ট শনিবার দুপুরে ঢাকা থেকে পাটুরিয়াগামী চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

এতে ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের পাঁচ আরোহী নিহত হন। তাদের মধ্যে ছিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ,খ্যাতিমান সাংবাদিক-অধ্যাপক- চিত্রগ্রাহক আশফাক মুনীর মিশুক, মাইক্রোবাসচালক মুস্তাফিজ, তারেক মাসুদের প্রোডাকশন ম্যানেজার ওয়াসিম ও কর্মী জামাল।  এতে গুরুতর আহত হন তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথেরিন মাসুদ, প্রখ্যাত দুই চিত্রশিল্পী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটউটের শিক্ষক ঢালী আল মামুন ও তার স্ত্রী দিলারা বেগম জলি।

তারেক মাসুদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এক সমৃদ্ধ অধ্যায়।

 

তারেক মাসুদ বৃত্তান্ত

পুরো নাম : আবু তারেক মাসুদ।

মায়ের নাম : নুরুন নাহার মাসুদ।

বাবার নাম : মশিউর রহমান মাসুদ।

বাবার পেশা : শিক্ষকতা।

জন্ম : ১৯৫৭ সালের ৬ ডিসেম্বর।

জন্মস্থান : ফরিদপুরের ভাঙ্গায় নূরপুর গ্রাম।

মৃত্যু : ১৩ আগস্ট ২০১১।

শিক্ষাজীবন : ভাঙ্গা ঈদগা মাদ্রাসায় প্রথম পড়াশোনা। এরপর ঢাকার লালবাগের একটি মাদ্রাসা থেকে মৌলানা পাস করেন। ফরিদপুরের ভাঙ্গা পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রাইভেট পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। এরপর আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ছয় মাস পড়াশোনার পর বদলি হয়ে নটর ডেম কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই ইতিহাস বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

পেশা : চলচ্চিত্র নির্মাণ।

উপাধি : বিকল্পধারার চলচ্চিত্রনির্মাতা।

তারেক মাসুদের বিয়ে : ১৯৮৯ সালে।

স্ত্রীর নাম : ক্যাথরিন মাসুদ।

সন্তান : বিংহাম মাসুদ নিষাদ।

ভাইবোন : ৫ ভাই ২ বোন।

উল্লেখযোগ্য কাজ (চলচ্চিত্র) :  সোনার বেড়ি (১৯৮৫), আদম সুরত (১৯৮৯), মুক্তির গান (১৯৯৫), মুক্তির কথা (১৯৯৬), মাটির ময়না (২০০২), অন্তর্যাত্রা (২০০৬), নরসুন্দর (২০০৯), রানওয়ে (২০১০)।

বাংলাদেশ সময়: ১০২১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।