ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

ছবির হাট : সৃজনের মেলা

তোফাজ্জল লিটন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৬ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১০

সময়টা সন্ধ্যা। চারুকলার বিপরীতে ছবির হাটে ঢুকতেই মানুষের কোলাহল আর আড্ডা উৎরে হৃদয় ছুঁয়ে যায় এক লোকজ গানের সুর।

ছবি প্রদর্শনী আর শিল্পীদের আড্ডা রেখে ছুটে যাই গানের টানে সুরের উৎসের কাছে। তারা গাইতে থাকে :
    
    ও দয়াল ও প্রভু বড় তুমি দয়াময়
     মোরা তব অধম সন্তান করো নির্ভয় ॥
    পুবেতে বন্দনা করি পুবে ভানুশ্বর
    একদিকে উদয় গো ভানুর চৌদিকে পশর ॥
    ও দয়াল ও...

গান শুনতে শুনতেই মিশে যাই তাদের সঙ্গে। পরিচয় হয়। জানতে পারি তারা সবাই থিয়েটারকর্মী, বিকেল থেকে এখানে আড্ডা দেন আর সন্ধ্যার সময় ধরেন নাটকের গান। গান গাইতে গাইতেই চলে যান টিএসসিতে নাটকের রিহার্সালে। এখন তাদের যাওয়ার সময়। আমিও ফিরে আসি ছবি প্রদর্শনীতে।

সন্ধ্যার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কর্তৃপ আলোর কোনো ব্যবস্থা করেন না। শিল্পীরাই নিজেদের আয়োজনে একটা ফ্যাডলাইট দিয়ে ছবি প্রদর্শনী করছেন।

এখানে বসেই শিল্পীরা ছবি আঁকছেন, আবার বিক্রির জন্য প্রদর্শনও করছেন। মানুষজনও জড়ো হয়ে দেখছেন ছবি ও ছবি আঁকা। ছবির দাম ২০০ থেকে  ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। মাঝেমধ্যে দু-একজন ছবি কিনছেন আর কেউ কেউ আড়ি পেতে শুনছেন শিল্পীদের আড্ডা। পাশেই কুপির আলোয় চলছে চা-সিগারেট, পিয়াজু, চপ, মাংস-মাশরুমের ফ্রাইয়ের দোকান।

মানুষের চলাফেরা, কুপির আলোর দোকান যেন গ্রামীণ মেলারই আভা। আর যেহেতু তা ছবিকে কেন্দ্র করে, তাই ছবির হাট নামটি যথার্থই হয়েছে।

তিন বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ছাত্রছাত্রীরা মিলে এর নাম দিয়েছেন ছবির হাট। ছবির হাট বলে যে শুধু ছবি প্রদর্শনী বা কেনাবেচা হয় তা নয়, এখানে ভাস্কর্য, ফটোগ্রাফি, নতুন-পুরনো শিল্পসামগ্রীর প্রদর্শনী ও বিক্রি হয়। আবার নতুন নির্মাতাদের তথ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ চলচ্চিত্রের প্রদর্শনীও হয়।

প্রথমে চারুকলার বিপরীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনের জায়গাটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল ছবির হাট। বর্তমানে এর আয়তন বেড়ে উদ্যানের ভেতর শিখা চিরন্তন পর্যন্ত গিয়েছে। এর অংশীদার কেবল আর শিল্পীরাই নন, বরং তাদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে লেখক-কবি-সঙ্গীতশিল্পী-অভিনেতা-নির্দেশক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষেরও হাট।  

‘সন্ধ্যার পর একবার ছবির হাটে না এলে মনে হয় কী যেন একটা করিনি সারাদিনে। তাই প্রতিদিনই একবার আসি। আড্ডা দিই। মাঝে মাঝে দল বেঁধে গানও গাই। ’ বললেন কোজআপ ওয়ান তারকা রিংকু।

তাছাড়া শুটিং শেষে কান্তি জুড়োতে অনেক মিডিয়াকর্মী আসেন এই ছবির হাটে। আসেন শোবিজের মানুষেরা। তারাও জমিয়ে আড্ডা দেন।
‘নতুন টিভি নির্দেশক বা নাট্যকারদের অনেক সৃজনশীল কাজের সূচনা হয় ছবির হাটের এই আড্ডা থেকে। কেউ সন্ধ্যার পর দেখা করতে চাইলে ঠিকানা দিই ছবির হাট। কারণ সন্ধ্যা থেকেই মূলত আড্ডাটা জমে এখানে আর চলে রাত ১০টা-সাড়ে দশটা পর্যন্ত। ’ বললেন তরুণ নাট্যনির্দেশক মুক্তাদির ইবনে সালাম।

ঢাকা শহরের কোলাহল থেকে মুক্ত হয়ে নির্মল বাতাস নিতে এবং তরুণ-তরুণীদের উল্লাস দেখতে আসেন প্রবীণরাও। আড্ডা দেন তরুণদের সঙ্গে। এক অর্থে তখন ছবির হাট পরিণত হয় নবীন-প্রবীণেরও মেলায়।

বাংলাদেশের স্থানীয় সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১০
এসকেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।