ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

বাবাকে অনেক বেশি মনে পড়ে

নূরনবী সিদ্দিক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩২ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১২
বাবাকে অনেক বেশি মনে পড়ে

বিশ্ব বাবা দিবস আসলে মনটা আরও একবার খারাপ হয়ে যায়। যাদের বাবা আছে তারা হয়তো কত মজা করবে-কিন্তু আমি? আমি কার সাথে মজা করব?

আমি নানা ব্যস্ততার মধ্যে হয়তোবা মসজিদে গিয়ে তার জন্য আল্লাহর কাছে অনেক দোয়া চাইবো।

আমি অনেকটা কম বয়সেই বাবাকে হারিয়েছি। তখন সবে মাত্র ইউনিভার্সিটি প্রথম বর্ষে পড়ি। মধ্যবিত্তের সংসারে বেড়ে ওঠা এই আমি জানি বাবার কতটা প্রয়োজন।

সংসারে আমরা ছিলাম তিন ভাই, তিন বোন। আছেন মা। বড় দুই বোনের পড়াশোনা-বিয়ে দেওয়ার চিন্তা যেমন তার ছিল, একই চিন্তা ছিল সবাইকে নিয়েই। আমি বিশ্ববিদ্যালয় পড়া শেষ করে ভালো কিছু করবো হয়তো সে আশাও পোষণ করতেন তিনি। আজ আমরা পাঁচ ভাই-বোনই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেওয়া।

সরকারি-বেসরকারি চাকরি নিয়ে আছি ভালোই। ছোট ভাইটাও সিভিলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করছে। হয়তো আগের সেই টানাটানিও নেই। মা হয়তো সবকিছু মিলে টেনশনমুক্ত। কিন্তু দু:খ একটাই, বাবা তো এ ভালোটা দেখে যেতে পারলেন না।

২০০৩ সালের ৮ ই মে। বাবা ওইদিন সকালে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হলেন। নেওয়া হলো সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে। ডাক্তার পরামর্শ দিলেন ঢাকায় নিতে।

খুব কম সময়ের মধ্যেই বাবাকে নিয়ে ঢাকার জাতীয় হ্রদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে রওয়ানা হলাম। মা, বড় ভগ্নিপতি আর আমি সাথে। মাঝে মাঝে  বাবাকে নির্জীব হওয়া দেখছি কাছ থেকে। মনে হচ্ছে আর বুঝি বাঁচাতে পারলাম না। তার ওপর সাভারের পরবর্তী যানজটে আমরা আশা অনেকটা ছেড়েই দিচ্ছিলাম। বার বার মনে হচ্ছিল অ্যাম্বুলেন্সকে মনে হয় যেকোন সময় ঘুরে আবার বাড়ির দিকেই নিতে হবে। মা অঘোরে কাঁদছিলেন আর শেষ সহায় আল্লাহকে ডাকছিলেন।

৩টা নাগাদ পৌঁছলাম হ্রদরোগ গেটে। দ্রুত চিকিৎসা দিতে সবাই সহযোগিতা করলেন। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তাররা চেষ্টা করছেন। মা বাইরে। ভেতরে কম্পিউ‍টার স্ক্রিনে বাবার হ্রদযন্ত্রের ক্রিয়া আমি দেখছিলাম।

ডাক্তার যে ওষুধ আনতে বলছিল দ্রুত তা এনে দিচ্ছিলাম। সকলের প্রাণান্তকর চেষ্টার পরেও চোখের সামনে বাবাকে হারালাম। একই অ্যাম্বুলেন্সেই বাবাকে বাড়িতে নেওয়া হলো। পরদিন সকালে নামাজে জানাজা শেষে দাফন। সেই সব স্মৃতি আমাকে এখনও পিছু টানে। তবে নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া বাবার আদর্শকে লালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি অবিরত।

তবে বাবা দিবসে আমার কষ্ট নেই। আমার কাছে বাবা মৃত নন, সব সময় তিনি আছেন আমার মনের গহীনে, থাকবেন যতদিন আমি বেচে থাকবো।

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।