ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

সন্তানের একাকিত্ব

কাজল কেয়া | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১২
সন্তানের একাকিত্ব

আধুনিক জীবনের ব্যস্ত নগরীতে ব্যস্ত সবাই। এক সময় সংসারের আর্থিক দিকটি বাবা একা দেখলেও, এখন মাও সংসারের সব দায়িত্বের পাশাপাশি দেখছেন এই দিকটিও।

আর কেন নয়, দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির, বাড়ি ভাড়া, সন্তানের স্কুল কলেজের খরচ- সবকিছুই এখন বাড়ছে হু হু করে। এসব কিছুতে ধনীর ঘরের ছেলে মেয়েদের কোনো প্রভাব না পরলেও প্রভাব পড়ছে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন শ্রেণির মানুরেষর জীবনযাত্রায়। তাই জীবনের তাগিদে, ছেলে মেয়েকে মানুষ করার জন্য এবং একটু স্বচ্ছলভাবে চলার জন্য বাবা-মা দুজই এখন সংসারের আর্থিক হাল ধরছেন।

কিন্তু বাবা-মা দুজনই যখন সংসারের রসদ জোগার করতে ব্যস্ত তখন একা একা কেমন কাটে সন্তানের? যতটুকু সময় দরকার একটি শিশুর সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার বাবা-মায়ের কাছে ততটুকু সময় কি তারা পাচ্ছে?

শহরের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম ফারিয়ার। পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে। বাবা-মা দুজনেই চাকরিজীবী। মা বিকাল ৬টার মধ্যে ফিরলেও বাবার ফিরতে ফিরতে রাত ৯টা বেজে যায়। তাই স্কুল ও কোচিং শেষে বাকিসময়টা একা একা থাকতে হয় ফারিয়াকে। সারাদিন বাসায় একা একা কম্পিউটারে সময় কাটায় সে। কখনো কখনো খুব ইচ্ছে করে বাইরে থেকে ঘুরে আসার। কিন্তু বাবা-মায়ের নিষেধ আছে কড়া। বাধ্য হয়েই ঘরে বসে থাকা। মঝে মাঝে খুব মন খারাপ হয়, অভিমান হয় বাবা মায়ের ওপর। কিন্তু কিছুই করার নেই তার। এভাবেই মনের মধ্যে কষ্ট, রাগ, অভিমান চেপে বড় হতে থাকে সে। একটা সময় অভ্যস্ত হয়ে যায় সে।

সংসারের স্বচ্ছলতা আনার জন্য চাকরি করা যেমন জরুরি তেমনি জরুরি ছেলেমেয়েকে সময় দেওয়া। কারণ মা-বাবাই সন্তানের আসল বন্ধু। আপনার সন্তান যদি আপনার কাছে প্রয়োজনীয় সময়টুকুট না পায় তবে সন্তানের ব্যাপারে অনেক কিছুই অজানা রয়ে যাবে আপনার। নিজের মতো করে খুঁজে নেবে সে নিজের জগৎ। আর এতে দূরত্ব তৈরি হবে আপনার ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে। তাই আপনার সন্তানের বন্ধু হন। শত ব্যবস্ততার মাঝেও খোঁজ নিন আপনার সন্তানের। পড়া লেখা, বন্ধু-বান্ধব, খাওয়াদাওয়া পোশাক, কম্পিউটারে সন্তান কি করছে, কোন কোন সাইট ভিজিট করছে, সবকিছুই নজরে রাখুন।

সপ্তাহে একদিন পরিবারের সবাই মিলে আড্ডা দিন। আড্ডার ফাঁকে জেনে নিন প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো। মাসে একবার সবাই মিলে বাইরে কোথাও বেরিয়ে আসুন, ওইদিন বাইরে খেতে পারেন একবেলার খাবার। মাঝে মাঝে ছেলেমেয়ের বন্ধুদের বাসায় দাওয়াত করুন। এতে করে আপনি জানতে পারবেন আপনার সন্তান কাদের সঙ্গে মিশছে। সন্তানের জন্মদিন ভুলবেন না। ওইদিন সামর্থমতো পরিবারের সবাই মিলে আনন্দ করুন। সন্তানের ইচ্ছার গুরুত্ব দিন। তবে অন্যায় আবদারকে প্রশ্রয় দেবেনে না কখনো। এছাড়া যে কোনো উৎসব আনন্দ ভাগ করে নিন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। শুধু শাসন নয়, সম্পর্কে নিয়ে আসুন মধুরতাও।

আপনার সন্তান আপনার স্বপ্ন। আপনার সন্তানই আপনার ভুবন। তাই সে সন্তানটিকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে আপনি সেই কাজটাই করুন যা একজন আদর্শ বাবা-মায়ের করা উচিত।  

মডেল: বাবুনী
ছবি: নূর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।