ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

ভ্রমণে নিরাপদ খাবার

ডাঃ রায়হান কবীর খান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১২
ভ্রমণে নিরাপদ খাবার

অজানাকে জানার দুর্বার আগ্রহে নতুন নতুন স্থানে ভ্রমণ করতে সবারই ভালোলাগে। শীতে সবারই পরিকল্পনা থাকে কোথাও যাওয়ার।

আর এই ভ্রমণ পথে খাবার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের জন্যই অনেকেই ভ্রমণে অসুস্থ হয়ে পড়ে। দল বেঁধে কোথাও গেলে একজন অসুস্থ হলে অন্যদেরও ঘোরার অনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়। অথচ কিছু সাধারণ বিষয়ের দিকে নজর দিলেই আমরা এসব ঝামেলা অনেকটাই এড়াতে পারি।

আমাদের দেশে পানিবাহিত রোগ অনেক বেশি হয়। টাইফয়েড, জন্ডিস, আমাশয় খুব পরিচিত পানিবাহিত রোগ। যাত্রাপথে বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন কিন্তু খুব বেশি পানি সাথে করে নেওয়া সম্ভব হয়না। এজন্য সাথে নিতে পারেন হ্যালোজেন ট্যাবলেট। এক লিটার পানিতে একটা ট্যাবলেট ছেড়ে দিয়ে ৩০-৬০ মিনিটের মাঝে পাবেন বিশুদ্ধ পানি। ফিটকিরি ও একসময় এভাবে ব্যবহৃত হতো।

জরুরি প্রয়োজনে ফিটকিরিও ব্যবহার করতে পারেন। রাস্তার পাশে পাওয়া সব মিনারেল ওয়াটারের বোতলই কিন্তু ভালো নয়। অনেক নকল বেরিয়েছে। মিনারেল ওয়াটার কিনতে পরিচিত ভালো কোম্পানির বোতল খুঁজুন, দেখুন মুখের সিল ঠিকমতো লাগানো আছে কিনা। পথের ধারের থেকে কেনার চেয়ে কোন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে কেনাই নিরাপদ। অনেক সময় পাহাড়ে বা দুর্গম এলাকায় ভ্রমণের সময় পানির অভাব হয়, চরম মুহুর্তে পুকুরের পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হন পর্যটক। এসব ক্ষেত্রে ময়লা পানি প্রথমে ২-৩ পরত কাপড়/রুমালের মাধ্যমে ছেঁকে ফেলুন, ভাসমান ময়লা দূর হয়ে যাবে। এরপরে এর মাঝে হ্যালোট্যাব/ ফিটিকিরি ছেড়ে দিন। পরে তলানি বাদ দিয়ে ওপরের পানি সংগ্রহ করুন।

এবার আসি খাবারের কথায়। এদেশের পর্যটকদের জন্য সমস্যা হচ্ছে সবখানে নিরাপদ খাবারের নিশ্চয়তা নেই। খাবারের হোটেলগুলোর মান সব এলাকায় ভালো নয়। শহরের মানুষদের জন্য অনেক খাবার বিপদ ডেকে আনতে পারে। কাচা খোসা ছাড়া ফল বা সালাদ খুব বিপদজনক। হোটেলের সালাদ খেতে সাবধান থাকুন, সন্দেহ হলে সালাদ বাদ দিন। খোসা সহ ফল যেমন কলা, লেবু অনেক নিরাপদ খাবার যাত্রাপথে। ঠাণ্ডা খাবারে বিপদ বেশি। খাবার গরম গরম পরিবেশন করলে জীবাণুর আক্রমণ থেকে বেশি সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। গরম চা-কফিতে তেমন বিপদ হবে না। অনেকে ডিম সিদ্ধ কিনে খান ভ্রমণে। ডিম খেলে নিজে খোসা ছাড়িয়ে নিবেন। খোসা ছাড়া শুধু সিদ্ধ ডিম কিনবেন না। যদি ডাব খান তবে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ডাব কাটিয়ে নেবেন। ময়লা স্ট্র বাদ দিয়ে ডাবের পানি নিজের বোতলে ভোরে নিন। বোতলজাত পানীয় সাধারণত নিরাপদ তবে পানের আগে দেখে নিন বোতলের মুখটা পরিস্কার আছে কিনা।

ভ্রমণে হাত পরিস্কার রাখা একটা সমস্যার ব্যাপার। ময়লা হাতেই অনেকে খাবার খেয়ে ফেলতে পারে। এখন বাজারে হাত পরিস্কারের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়া যায়। এগুলো ব্যবহারে আলাদা পানির প্রয়োজন হয়না। খাবার খাওয়ার আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতে দিয়ে হাত শুকিয়ে নিন।

প্যাকেটজাত শুকনো খাবারে ঝামেলা অনেক কম। প্যাকেটের বিস্কুট, কেক ইত্যাদি খাওয়া নিরাপদ অনেকটা তবে মেয়াদ উত্তীর্ণ কিনা দেখে নিন, অজানা কোম্পানির থেকে পরিচিত কোম্পানির খাদ্য সামগ্রী কেনাই ভালো হবে।

দোকানের খোলা সিঙ্গারা, সমুচা অথবা চটপটি ফুচকা, ঝালমুড়ি যতোই মুখরোচক হোক এগুলো খাওয়া যাবে না।  

শেষে চিরপরিচিত একটা উপদেশ বাণী না বললেই নয়,` যাত্রাপথে অপরিচিত কারো দেয়া কিছু খাবেন না`।

খাবার ছাড়া বাঁচা সম্ভব নয় আবার খাবারেই হতে পারে মারাত্নক সমস্যা। তাই নিরাপদ ভ্রমণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের যাত্রা হোক আনন্দময়।

০১৬৭০৭৬৪২২৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।