ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

লাইফ কার্নিভাল

লাইফস্টাইল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৩
লাইফ কার্নিভাল

বাংলাদেশে প্রতিবছর যে পরিমানণ ছাত্র-ছাত্রী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য চেষ্টা করে বা যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়, আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে এরা লাইফে সফল। এদের স্বপ্ন বুঝি পূরণ হয়ে গেল! আসলে যে ক’জন ছাত্র-ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চান্স পায় তাদের ৭০% ই তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী স্বপ্নের জায়গাটায় পৌঁছাতে পারে না।

এদের মধ্যে ২০% ছাত্র-ছাত্রী নেশা-রাজনীতি ইত্যাদিতে জড়িয়ে সম্পূর্ণরুপেই জীবন বা সমাজ থেকে হারিয়ে যায়। বাকিরা কোনরকমে পাশ করে, চাকরির পেছনে ছুটতে থাকে এবং যেখানে সুযোগ পায় সেখানেই কাজ করে। কোনো রকম  বেঁচে থাকে।

এই যে এত হাজার-লাখো ছেলে-মেয়ে বেকার হচ্ছে, হতাশায় ভুগছে, এইযে এত বড় সমস্যা! এই সমস্যার শুরুটা হয় একদম শিশুকাল থেকেই। যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলছে আমাদের দেশ। এত বড় সমস্যা সমাধানের কোনো উপায় বা উদ্যোগ দেখা যায়নি।

তবে পরিবর্তন শুরু হয়েছে। এ সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছে আমাদের দেশেরই কয়েকজন তরুণ। তারা বানিয়েছে ‘লাইফ কার্নিভাল’ (www.lifecarnival.com) নামের একটি ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইটে মূলত বিভিন্ন পেশা বা বিষয়ের উপর বিশদ তথ্যগুলো পাওয়া যায়। তাদের মতে, লাইফ কার্নিভাল মানে জীবনের রঙ্গমঞ্চ। এক কথায় তাদের উদ্দেশ্য হল, প্রত্যেকটা মানুষকে তার নিজের ভাললাগার জায়গাটা খুঁজে পেতে সাহায্য করা। তার পছন্দের বিষয়ের জন্য সে কতটা পারফেক্ট সেটা যাচাই করে দেয়া। আর এটা করা গেলেই রঙ্গিন হয়ে উঠবে প্রত্যেকটা মানুষের জীবন।

‘লাইফ কার্নিভাল’ এর শুরুটা হয় দুই বন্ধুর ‘কিছু একটা করতে হবে’ এমন প্রতিজ্ঞা থেকেই। বুয়েটের সিএসই বিভাগের মুহাম্মাদ হুসাইন মাহদী এবং বার-অ্যাট-ল পড়ুয়া আরেফিন হাসান মিলেই শুরু করে এই উদ্যোগটি। এখন তাদের সাথে আছে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় শ’খানেক মেধাবী তরুণ-তরুণী। সবাই মিলেই এগিয়ে নিচ্ছে এই সুন্দর উদ্যোগটি।

‘লাইফ কার্নিভাল’ কাজ করছে কয়েকটা টিমে বিভক্ত হয়ে। একটা দল কাজ করছে দেশের সফল এবং গুনী মানুষগুলোর কাছ থেকে নিজ নিজ পেশা বা বিষয়ের ওপর ইন্টারভিউ কালেকশনে। এরই মধ্যে প্রায় ৪০ টিরও বেশি পেশা বা বিষয়ের উপর দেশের স্বনামধন্য অধ্যাপকসহ নানান পেশার সফল মানুষগুলোর কাছ থেকে নেয়া ভিডিও ইন্টারভিউ আছে তাদের ওয়েবসাইটে। যেকোন স্টুডেন্ট সাবজেক্ট/ ক্যারিয়ার বাছাইয়ের আগে ওয়েবসাইটে গিয়ে সব দেখবে, পড়বে তারপর নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে তার কোনটা পড়া উচিত বা তার ট্যালেন্টের সাথে কোন বিষয়টা সবচেয়ে বেশি সামাঞ্জস্যপূর্ণ।

‘লাইফ কার্নিভাল’ এর আরেকটা স্ট্রং টিম কাজ করছে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর কন্সেপচ্যুয়াল ভিডিও টিউটোরিয়ালস তৈরিতে। কেউ যখন তার জন্য স্যুইটাবল পেশা বা বিষয় নির্বাচন করে ফেলবে তখন প্রয়োজন হবে সঠিক গাইডলাইনের। প্রত্যেক বিষয়ের ওপর বাস্তবমুখী এবং কন্সেপ্ট-ভিত্তিক শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়ার জন্যেই তাদের এই প্রয়াস। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পড়াশোনাটাই মনে হবে খেলা, এই উদ্দেশ্য নিয়েই কাজ করছে তারা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কীভাবে বিনামূল্যে এই শিক্ষা পৌঁছে দেয়া যায় সে ব্যপারেও চিন্তা করা হচ্ছে।

এই উদ্যোগগুলো শুধু যে অনলাইনেই সীমাবদ্ধ তা নয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ‘লাইফ কার্নিভাল’ এর ভলান্টিয়ার টিম। এই টিমগুলো কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের অঞ্চলের স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সচেতন করতে। ‘স্বপ্ন নিয়ে জেগে ওঠো’ এই স্লোগান নিয়ে তারা ঘুরে বেড়াবে সারা দেশ।

লাইফ কার্নিভাল তাদের নিজেদের উদ্যোগে বা বিভিন্ন বন্ধু সংগঠনের সাথে মিলে সারাদেশ ব্যাপী বিভিন্ন ওয়ার্কশপের আয়োজন করবে। অঞ্চল ভিত্তিক উদ্যোক্তা তৈরির ব্যাপারে সাধারণ জনগনকে উৎসাহিত করা এবং যথাসম্ভব সাহায্য করার পরিকল্পনাও আছে তাদের।

সুন্দর, সমৃদ্ধ আর আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ে উঠবে, এখানে সবাই নিজের কাজটাকে মন থেকে করবে, যথাযোগ্য মানুষগুলো যথাস্থানে থাকবে এমন স্বপ্ন আর তার বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে করতেই এগিয়ে যাবে ‘লাইফ কার্নিভাল’।

শুভ কামনা রইল ‘লাইফ কার্নিভাল’ এবং এর সাথে জড়িত সবার জন্য।

আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদের জানান  https://www.facebook.com/bnlifestyle

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।