ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

শিশুটি কি অটিজমের আশংকা মুক্ত?

লাইফস্টাইল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৪
শিশুটি কি অটিজমের আশংকা মুক্ত?

মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল, ইউএসএ এর একটি ভয়াবহ সমীক্ষা বের হয়েছে, যাতে দেখা যাচ্ছে প্রতি ৬৮ জন বাচ্চার মধ্যে ১ জন বাচ্চা অটিজমে আক্রান্ত। অটিজম একটি স্নায়বিক ও বুদ্ধি বিকাশ গত সমস্যা যার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো প্রমাণিত নয়, তবে অসংখ্য গবেষণা নির্দেশ করছে পরিবেশ দূষণ, ভেজাল খাদ্য (টক্সিক মেটাল, কীটনাশক, প্রিজারভেটিভ ইত্যাদি মেশানো), টিকা-র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, বংশগতি ইত্যাদি অটিজমের পেছনে ভুমিকা পালন করে থাকে।



কখন আপনি বুঝবেন আপনার বাচ্চার বিকাশ গত সমস্যা থাকতে পারে?

সাধারণত ১৮ মাস থেকে ২ বছর বয়সের মধ্যে মা বাবা বাচ্চার আচরণে অস্বাভাবিকতা বা সাধারণের চেয়ে ভিন্ন বলে ধরতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছে, অন্য একই বয়সের বাচ্চাদের চেয়ে খেলার আগ্রহে ভিন্নতা, সামাজিক মেলামেশা যেমন কথা বলা বা ভাব প্রকাশ করার ভিন্নতা ইত্যাদি।
কিছু কিছু বাচ্চা আবার ১ থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত খেলাধুলা কথা বলা সব ঠিক থাকে কিন্তু হঠাৎ করে কথা বলা ও সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করে দেয়। এটাকে বলা হয় রিগ্রেসিভ অটিজম। তবে নিচের বিষয় গুলোর ব্যত্তয় ঘটলে বা করতে না পারলে অবশ্যই আপনাকে সতর্ক হতে হবেঃ

বার মাস বয়সের মধ্যে মুখ দিয়ে বিভিন্ন শব্দ যেমন বু বু, মা মা ইত্যাদি শব্দ করা
বার মাস বয়সের মধ্যে হাত দিয়ে বিভিন্ন দিকে নির্দেশ করা, টাটা করা ইত্যাদি
ষোল মাস বয়সের মধ্যে অন্তত একটি করে অর্থবোধক শব্দ বলা
চব্বিশ মাস বয়সের মধ্যে অন্তত দুটি অর্থবোধক শব্দ একসাথে বলা
এছাড়া যে কোনো বয়সে যদি বাচ্চা কথা বলা বা সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করে দেয়, কোনো শারীরিক মুভমেন্ট বার বার করে, চোখে চোখ রেখে ভাব বিনিময় না করে, তাহলে সাথে সাথে বাচ্চাকে বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

যদি বাচ্চার মধ্যে অস্বাভাবিকতা আশংকা করেন, তাহলে যা করবেন:

যদি বাচ্চার বয়স ১৮ মাস এর বেশি এবং ৩ (তিন) বছরের কম হয়, তাহলে তাকে প্রথমে অটিজম হবার সম্ভাব্যতা নিরূপণ করতে হবে। এজন্য বিভিন্ন অ্যাসেসমেন্ট টুল ব্যবহার করা হয়, এবং অটিজম হবার সম্ভাব্যতা থাকলে সেই অনুযায়ী আর্লি ইন্টারভেনসন প্রোগ্রাম ডেভেলপ করা হয় যাতে বাচ্চার অটিস্টিক আচরণ প্রকাশ পেতে বাধা পায় এবং তার স্নায়বিক বিকাশ ঠিক মত হয়।

যদি বাচ্চার বয়স ৩ (তিন) বছরের বেশি হয়, তাহলে তার অটিজম আছে কিনা বা থাকলে তার মাত্রা কত তা নিরূপণ করতে হয়। এর জন্য ও আলাদা অ্যাসেসমেন্ট টুল ব্যবহার করা হয় এবং অটিজম এর মাত্রা অনুযায়ী বাচ্চার জন্য ইন্টারভেনসন প্রোগ্রাম ডেভেলপ করা হয়।

কি ধরনের  ইন্টারভেনসন প্রয়োজন হয়?

এ ধরনের বাচ্চার জন্য অনেক ধরনের সেবার প্রয়োজন হয়। তার মধ্যে ‘সেন্সরি ইন্ট্রিগেসন’ অন্যতম। এই সেবা পেতে ‘সেন্সরি ইন্ট্রিগেসন’ এ দক্ষ একজন অকুপেশনাল থেরাপিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে। বাচ্চার যদি কথা বলতে সমস্যা থাকে তবে তাকে অটিজম বিষয়ে দক্ষ একজন স্পিচ থেরাপিস্টের কাছে যেতে হবে।

বাচ্চার শরীরে অনেক সময় ফ্রি-রেডিকেল, টক্সিক মেটাল (লেড, মার্কারি ইত্যাদি) এর আধিক্য দেখা যায় এবং যার ফলে বাচ্চার মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়। এধরনের ক্ষেত্রে বায়ো-মেডিক্যাল চিকিৎসা নিয়ে অনেক অটিস্টিক বাচ্চার প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। অনেক বাচ্চার জন্য সাইকো থেরাপি, বিহেভিয়ার মডিফিকেসন ইত্যাদি প্রয়োজন পড়ে।

অনেক বাচ্চার জন্য বিশেষ স্কুল এর প্রয়োজন হয়। তবে অটিজমের জন্য দেশে মান সম্পন্ন বিশেষ স্কুলের সংখ্যা এখনো হাতে গোনা।

কোথায় পাবেন এ সকল সেবা?

আমাদের দেশে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী দের মধ্যে অটিজম ও অন্যান্য নিউরো-ডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণার অভাব আছে।

এখন বিভিন্ন জেলা সদর ও বিভাগীয় হাসপাতালে সরকার শিশু বিকাশ কেন্দ্র চালু করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা শিশু হাসপাতালে অটিস্টিক বাচ্চাদের জন্য একটি করে সেন্টার রয়েছে।

এছাড়াও একমাত্র ‘ইন্সটিটিউট অব নিউরো-দেভলপমেন্ট এন্ড রিসার্চ’ এ উপরোক্ত সকল সেবা একই ছাদের নিচে পাওয়া যায়।

ডাঃ ওসমান গনি
এম এস সি (নিউর-রিহ্যাব, ইউ কে)
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক
ইন্সটিটিউট অব নিউরো-দেভলপমেন্ট এন্ড রিসার্চ
৫২/১, ৭ম ফ্লোর, নিউ ইস্কাটন রোড, বাংলা মোটর, ঢাকা ১০০০।
+৮৮ ০১৯৩ ১৪০৫৯৮৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।