ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

বানাতে চান বাংলা সিনেমা

ইদ্রিসের প্রতিভায় মন্ত্রমুগ্ধ সবাই

তৌহিদ জামান, যশোর প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১১
ইদ্রিসের প্রতিভায় মন্ত্রমুগ্ধ সবাই

হাতে মাইক, কাঁধে ঝোলা। বয়স ৩৮ বছর।

দেখতে যেন আধুনিক এক কাবুলিওয়ালা। কাবুলিওয়ালাদের মতো বছরের বেশিরভাগ সময়ই কাটে নিজের শহরের বাইরে, ঘুরে ঘুরে।

নাম ইদ্রিস আলী শেখ। যশোর সদরের সিরাজসিঙ্গা উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইদ্রিসের দখলে দেশের সব জেলার আঞ্চলিক ভাষা। হিন্দি, উর্দু আর ইংরেজিটাও জানেন মোটামুটি। তার সঙ্গে কথা হলো যশোর সার্কিট হাইসের পাশে।

তিন সন্তানের জনক ইদ্রিস যেন রাস্তার রাজা। কণ্ঠস্বরের যাদুতে আর আমোদ ভরা ভঙ্গিতে উপস্থাপন করা সিনেমার জনপ্রিয় সংলাপ, গান, কবিতা শুনে আমোদিত হয় মানুষ। ভীড় জমে যায় আশপাশে। খুশি হয়ে দেয় নজরানা-বখশিষ। এভাবে মানুষের মনোরঞ্জনের মাধ্যমে রোজগারের পথ করে নিয়েছেন তিনি।

প্রতিভাবান যুবক ইদ্রিস সহজাত অভিনয় ক্ষমতা আর কণ্ঠ মাধুর্যে মানুষকে বিমোহিত করে রাখতে পারেন। একের পর এক শুনিয়ে যান সিনেমার ডায়ালগ, নানা ভাষার জনপ্রিয় গান, কৌতুক। এছাড়া হুজুরদের কণ্ঠে মুখস্ত করা ওয়াজও শোনাতে পারেন। আর এসবের সঙ্গে চলে ম্যাজিক প্রদর্শন- মোটকথা একের ভেতরে অনেক অনেক গুণ তার।

এখানেই শেষ নয়। কণ্ঠের যাদুতে একই সঙ্গে পুরুষ-নারীর কণ্ঠে গান গাইতে পারেন- সঙ্গে বোনাস হিসেবে থাকে বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ। দূর থেকে শুনে যে কেউ প্রথমে ভাববেন- রেডিওতে গান বাজছে। উৎস খুঁজতে কাছে এসে বিষয়টি বুঝতে পেরে বোকা বনেছেন অনেকেই।

বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার ইদ্রিসের হাতে থাকে হ্যান্ডমাইক আর ঝোলার ভেতর ম্যাজিকের সরঞ্জাম।

বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের নির্ভেজাল আনন্দ-বিনোদন দিতে তাকে ভাড়া করেন। স্কুল পর্যায়ে ম্যাজিক প্রদর্শন করে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা আর কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নেন দু’হাজার টাকা।

দারিদ্রের কারণে এসএসসি পরীক্ষার আগে দু’বছর রিকশা চালিয়েছেন তিনি। ওই সময়টায় সিটের নিচে থাকত বই। ফুরসৎ পেলেই পড়াশুনা করতেন। তবে শেষ পর্যন্ত পাশ করতে পারেননি এসএসসি- হাসিমুখে বেদনা গোপন করে জানালেন।

তবে কৈশোরের এ ব্যর্থতার পর চলে যান ভারত। সেখানে ৯ বছর কাটিয়েছেন। শিখেছেন হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি। পাশাপাশি শিখেছেন অনেক ম্যাজিকও। নেপালে কিছুদিন থাকার সুবাদে তাদের ভাষাটিও রপ্ত তার।

শিল্পীমনা এবং কিছুটা পাগলাটে স্বভাবের খামখেয়ালীপনার শেষ নেই। জানালেন, পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া তিনবিঘা জমি বিক্রি করে ‘ওলে ওলে’ নামে একটি কৌতুকের একটি ক্যাসেট বের করেছিলেন। কিন্তু তা বাজার পায়নি।

তবে, তাতেও হতাশ হননি।

স্বপ্ন দেখেন একটি বাংলা সিনেমা বানানোর। তাতে তার মত করে ডায়ালগ দেবেন শিল্পীরা, গান করবেন, ম্যাজিক দেখাবেন, কথা বলবেন ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় আর আমোদিত হবে হাজার হাজার লাখ লাখ কোটি কোটি মানুষ।

বলা যায় মোটের ওপর বৈচিত্রময় আর অসাধারণ এক জীবন যাপন করছেন ইদ্রিস।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, ১০ মে, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।