ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

আঞ্জুয়ারার স্বাভাবিক জীবন চায় বাবা-মা

সাইফুর রহমান রানা, ডিভিশনাল স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৬
আঞ্জুয়ারার স্বাভাবিক জীবন চায় বাবা-মা

রংপুর: বছর সাতেক আগের কথা। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার আরজি দিলালপুর বানিয়াপাড়া গ্রামের আফজাল হোসেনের মেয়ে আঞ্জুয়ারা পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলো।

মেয়ে সর্বোচ্চ ফলাফল করলেও মাধ্যমিকে ভর্তি করানো নিয়ে শুরু হলো বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তা। স্ত্রী ও ছয় সন্তান নিয়ে পরিবারের ভরণ-পোষণ করতেই যেখানে হিমশিম খান দরিদ্র পিয়ন আফজাল হোসেন, সেখানে মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাবেন কিভাবে?

কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে এক প্রতিবেশীর পরামর্শে নাটোর শহরে বসবাসকারী প্রিন্সিপাল আব্দুল মতিন নামে সম্পর্র্কে নিজের এক চাচার বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে পাঠিয়ে দেন তিনি।

এরপর গড়িয়ে যায় তিনটি বছর। কিন্তু দীর্ঘ এ সময়ে  তারা বাড়িতে আসতে দেয়নি আঞ্জুয়াকে। এ সময়ে তার বাবা অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাড়িতে আনতে পারেননি। একপর্যায়ে আফজাল হোসেন নাটোরে গিয়ে মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।

কিন্তু বাড়িতে আসার পর থেকেই আঞ্জুয়ারা অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। তখন আঞ্জুয়ারার মস্তিষ্ক বিকৃতির বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর মেয়েকে সুস্থ করতে সব রকমের চেষ্টা করেছেন আফজাল হোসেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। মেয়ের চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে গিয়ে আফজাল হোসেন এখন নিঃস্ব প্রায়।

এমনকি, তার বেতনের চেকটি পর্যন্ত মানুষের কাছে বন্ধক রেখেছেন। তাছাড়া বাড়ি সংলগ্ন মসজিদে ইমামতি করার কারণে যেটুকু জমি চাষাবাদের জন্য মসজিদ কর্তৃপক্ষ থেকে পেয়েছেন তাও বন্ধক রেখেছেন মেয়ের চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে। বর্তমানে ভিটেটুকু ছাড়া আর কোনো সম্পদ অবশিষ্ট নেই তার।

উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব হলে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে আঞ্জুয়ারা। কিন্তু উন্নত চিকিৎসার খরচ কিভাবে যোগাড় করবেন তা জানেন না আঞ্জুয়ারার বাবা-মা।

মঙ্গলবার (২৯মার্চ) সকালে সরেজমিনে আফজাল হোসেনের ‍বাড়ি গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।

আফজাল হোসেন জানান, তার মেয়ের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কারণে তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে। মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে তিনি এখন পথের ভিখারী।

আঞ্জুয়ারার মা সামসুন্নাহার জানান, তার মেয়ে অসুস্থ হলেও কোনো খোঁজ নেয়নি তাদের আত্মীয় মতিন  প্রিন্সিপালের পরিবারের লোকজন। মতিন প্রিন্সিপাল মারা গেলেও তার পরিবারের কাছে একাধিকবার সাহায্য চেয়েও কোনো সাড়া পাননি তারা। উল্টো তাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
 
এ বিষয়ে প্রিন্সিপাল আব্দুল মতিনের ছেলে বদরে মুনির সানি মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, তাকে
(আঞ্জুয়ারার বাবা) অনেক সাহায্য করা হয়েছে। আমাদের পক্ষে আর সাহায্য করা সম্ভব না।

এদিকে, আঞ্জুয়ারাকে নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আঞ্জুয়ারার চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।

মেডিকেল বোর্ডের প্রধান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনোয়ারা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আঞ্জুয়ারার যে চিকিৎসার প্রয়োজন তা আমাদের এখানে নেই। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠাতে হবে।
 
উপজেলা মহিলা বিষযক কর্মকর্তা মৌসুমী আকতার জানান, আঞ্জুয়ারার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত এর একটি সুরাহা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৬
এসআর/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।