ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

ক্যাফে দ্রুম!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১১
ক্যাফে দ্রুম!

ঢাকা বাসীর জন্য ব্রেকিং নিউজ! অবশেষে দুপুরের খাদ্য সংক্রান্ত বড়সড় একটা দুশ্চিন্তা দূর হল এতদিনে। কারণ সদ্য-পেশাজীবী উদ্যমী কয়েক বন্ধু মিলে নতুন একটা ক্যাফে বানিয়েছে।

অতিশয় নিরিবিলি ক্যাফেটার তারা নাম দিয়েছে ‘ক্যাফে দ্রুম’।

কিন্তু‘, দ্রুম কেন? সে কী, বোধিদ্রুমের নাম শোনেননি নাকি? মহামতি গৌতম বুদ্ধ যার ছায়াতলে বসে সাধনায় একদা লাভ করেছিলেন আধ্যাত্মিক নির্বাণ। দ্রুম অর্থ বৃক্ষ। বৃক্ষ মানেই আশ্রয়। খিদে নিয়ে ক্যাফে দ্রুমে এলেও সেরূপ নির্বাণ লাভ করবেন যে কোন খাদক। প্রথমত তা হবে দৈহিক, ফলত এবং স্বভাবতই আত্মিক। পেটের ভিতর জ্বলতে থাকা খিদের অসহ্য আগুন থেকে নির্বাণ। হাহ, যুক্তি অকাট্য!

সাতাশের বিখ্যাত বেঙ্গল আর্ট আর মীনাবাজার মোড় থেকে অদূরে ততোধিক বিখ্যাত দৃক গ্যালারি। গ্যালারি কম্পাউন্ডের পশ্চিম অংশে ২৬ নং সড়কে ক্যাফে দ্রুমের লোকেশন। হৈ-হট্টগোল থেকে পরিকল্পিত দূরত্বে।

ব্যাট-উইং ঠেলে ভেতরে ঢুকলে প্রথমেই আপনার জন্য মিষ্টি অভ্যর্থনা। পায়ের নিচে নুড়ি পাথর। দেয়ালে সাজানো বাঁশের ফ্রেম। তাতে লতিয়ে ওঠা সবুজ অর্কিড। নরম কাঠের বসার আসন। একেকটা টং ঘর যেন একেকটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। দুই দ্বীপের মাঝে ছোট ছোট গাছপালা। সবুজ অরণ্য! অদূরে জলাধার। তার টলটলে জলে কয়েকটা ‘বাবু’ কচ্ছপের দুষ্টুমি আর রঙিন মাছের দিনমান খেলা।

মাথার ওপর দিনের অবারিত নীলাকাশ, মাঝে মাঝে ভেসে যাওয়া সাদা মেঘ, রাতে নক্ষত্রের ঝিকিমিকি। এতো রোমান্টিক কেন পরিবেশ? ওই যে নির্বাণ.. দ্রুম.. কেবল দৈহিক নয়, আত্মিক নির্বাণও। বেশ, বেশ! নামের সার্থকতা।

আর, শুধু দুপুররে খাবারই নয়, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আপনাদরে জন্য রয়েছে অত্যন্ত সাশ্রয়ী মুল্যে খাবাররে ব্যবস্থা। পটে ভরে খাবেন আর মন খুলে আড্ডা দেবেন। তো কবে আসছেন দ্রুম-এ ?

টেবিল চেয়ার থেকে শুরু করে মাথার ওপর আধখানা ছাউনি- সবকিছুর ভেতর দারুণ অভিনবত্ব আর শিল্পের যৌথ পরশ।

এবার আত্মজবানি। ধানমন্ডিতে হাজারো ক্যাফে-রেস্তোরাঁ আর ফাস্টফুডের দোকান। বছরখানেক হবে। তখন একটা নিউজ এজেন্সিতে কাজ করি আমরা ক’জন। ধানমন্ডি সাতাশে অফিস। সকালে যাই রাতে ফিরি। দুপুরে খাওয়ার সময় হই হই করে বেরিয়ে পড়ি বাইরে। কিন্ত খিদে পেটে আধামাইল একমাইলের ভেতর কোনো সুবিধাজনক খাওয়ার উপায় নাই।

যেদিকেই তাকাই দেখি ধূ ধূ ফাস্ট ফুড অথবা পোলাও-বিরানির মচ্ছব। বাঙালির ছেলেমেয়ে আমরা, দুটো ভাতমাছ খাব নিরিবিলি শান্তিতে বসে, তার জো নেই। হোটেল নামে অল্প দুয়েকটা যা আছে তার পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর আর খাবারও নিম্নমানের। মিনিট বিশেক এদিকওদিক হাঁটাহাটি করে শেষমেষ মামার দোকানে বনরুটি আর কলা দিয়ে লাঞ্চ। ফলে যা হবার তাই হল, তিনমাসের ভেতর মরিচা ধরে গেল পেটে।

Cafe Droom

গল্পটা তাদের ভাল জানা, নানা কাজে যাদের প্রতিদিন থাকতে হয় ধানমন্ডি এলাকায়। বিশেষত লালমাটিয়া, সাতাশ, শুক্রাবাদ অথবা সাত মসজিদ রোডের আশেপাশে। বিশেষত দুপুরবেলা। খিদে লাগে, অথচ খাদ্য নাই।

লক্ষাধিক মানুষ জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন আসে ধানমন্ডি এলাকায়। এখানেই তাদের কর্মস্থল। অনেক অফিস নিজেরা লাঞ্চের ব্যবস্থা করে। তবে করে না, এমন অফিসের সংখ্যাই বেশি। বেশিরভাগ মানুষ লাঞ্চের পেছনে এক টানে পাঁচ শ টাকা খরচ করতে পারে না। তাদের জন্যও পরম ভরসা ক্যাফে দ্রুম।

ভাত-মাছ-মুরগি-সবজি-ডাল। যার যা পছন্দ। কোক, লাসসি, মিল্ক শেক হোয়াট নট? অর্ডার দেয়ার পর রান্না শুরু। সমৃদ্ধ কিচেন। পরিচ্ছন্ন বাবুর্চি। পাঁচ থেকে পনের মিনিটের ভেতর আপনার খাবার হাজির। পকেটবান্ধব খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে ফিরে যান কাজে।

ছাব্বিশে পা রাখা স্বপ্নবান তৃষা সামিরা ক্যাফে দ্রুমের প্রধান স্বপ্নদ্রষ্টা। উদ্যমী উদ্যোক্তা।

কেন করতে গেলেন এমন একটি ক্যাফে? ‘আমি রাঁধতে পছন্দ করি। মানুষকে খাওয়াতে পছন্দ করি,’ মিষ্টি হেসে জানালেন স্বল্পবাক তৃষা।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।