ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

নেই ঘড়ি, আছে মোবাইল

সাইফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১১
নেই ঘড়ি, আছে মোবাইল

একটা সময় ছিল যখন মোরগের ডাক শুনে ঘুম ভাঙতো গ্রামবাংলার মানুষের। আর সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে ঘোষণার কাজ সারা হতো হাট-বাজারে ঢোল পিটিয়ে।

কালক্রমে মোরগ আর ঢোলের স্থান দখল করে নেয় মাইক। এখনও বেশির ভাগ গ্রামেই রমজান মাসে সেহরি খাওয়ার জন্য মাইক দিয়ে ডেকে জাগিয়ে দেওয়া হয় রোজাদারদের। মাইকের পাশাপাশি গ্রামের অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত বিত্তবানদের বাড়িতে একাজে আরেকটি জিনিস ব্যবহার করা হতো। সেটি হলো ঘড়ি।

তবে ইদানীং মাইক এবং ঘড়ি দুটোরই কদর কমে গেছে। এখন এ কাজে কদর বেড়েছে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অনন্য অবদান মোবাইলের।

শুধু সেহরির জন্য নয়, ওষুধ খাওয়া থেকে শুরু  করে গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো কাজ সঠিক সময়ে সম্পাদনের জন্য মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রাখাটা জরুরি মনে করেন মোবাইল ব্যবহারকারীরা। গার্মেন্টকর্মী থেকে শুরু করে অফিসের বড়কর্তা পর্যন্ত রয়েছেন এ তালিকায়। মোবাইলেই ঘড়ির সমস্ত সুবিধা পাওয়ায় এক সময়ের অতি প্রয়োজনীয় এ যন্ত্রটির ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছেন বেশির ভাগ মানুষ।

লেখক ও এনজিওকর্মী আবু রেজা জানান, গত ২০০৫ সালে মোবাইল কেনার পর তিনি আর ঘড়ি ব্যবহার করছেন না। এর আগে নিয়মিত ব্যবহার করতেন।

সাভারের জিকো গামেন্টের কর্মী মোমেনার সোজাসাপটা জবাব, ‘মোবাইলেই ঘড়ি থাকে, তাই আলাদা ঘড়ির দরকার পড়ে না। ’

তার আরও যুক্তি, মোবাইলে কথা বলার পাশাপাশি সময় দেখা যায় এবং এলার্মও দেওয়া যায়।

মালিবাগ মোড় এলাকার ঘড়ি মেরামতকারী অপু জানান, ঘড়ি ভালো করতে আসা লোকজনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় উপার্জনও কমে গেছে।

তিনি বলেন, ঘড়ির সঙ্গে মোবাইল থাকায় বেশির ভাগ লোকই এখন আর ঘড়ি ব্যবহার করেন না।

মৌচাক এলাকার ঘড়ি ব্যবসায়ী আহমেদ জামাল জানান, দুটো কারণে ঘড়ির ব্যবহার কমেছে। প্রথম কারণ হচ্ছে মোবাইল, এতে ঘড়ির সব সুবিধা একসঙ্গে পাওয়া যায়। অপরটি হচ্ছে, কম দামের ঘড়ি দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং বেশির দামের ঘড়িগুলোর দাম মোবাইলের চেয়ে অনেক বেশি হওয়া।

তিনি বলেন, এখন যারা ঘড়ি ব্যবহার করেন তাদের বেশির ভাগের কাছেই দৈনন্দিন প্রয়োজনের চেয়ে ফ্যাশনের বিষয়টি প্রাধান্য পায়।

অতীতে চোখ ফেরালে দেখা যায়, প্রায় তিন দশক আগে এনালগ ঘড়িই শোভা পেতো মানুষের হাতে। এর মধ্যে কেমি, সিকো, সিটিজেনের নাম উল্লেযোগ্য। এরপর এনালগ ঘড়িকে টেক্কা দিয়ে বাজারে আসে ডিজিটাল প্রযুক্তির ঘড়ি। এক্ষেত্রে ক্যাসিও’র নাম তো সবারই জানা।

এইতো দুই যুগ আগেও টেট্রনের শার্ট, ফিলিপস রেডিও, ফিনিক্স সাইকেল আর কাক্ঙ্ক্ষিত কেমি ঘড়ি যৌতুক হিসেবে না হলে যেন গ্রামীণ মধ্যবিত্ত যুবকদের বিয়ের ষোলকলা পূর্ণ হতো না। এখন এসবের বালাই নেই। সে স্থান দখল করে নিয়েছে মোটরসাইকেল আর টিভি। সেইসঙ্গে দামী মোবাইল তো আছেই। যদিও মোবাইল এখন আর যৌতুক হিসেবে চেয়ে নিতে হয় না। উপহার হিসেবেই পাওয়া যায় একাধিকটি।

তবুও চিরন্তন স্বভাব অনুযায়ী ফেলে আসা দিনের মতো ফেলে আসা জিনিসের প্রতিও একটা নিগূঢ় মায়া থেকেই যায় মানুষের। যেমনটা আছে ঘড়ির প্রতিও।

আর দেহঘড়ির কথা কোন মানুষইবা ভুলে যেতে পারে!

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।