ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

রমজান ও ডায়াবেটিস

লাইফস্টাইল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৬ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৭
রমজান ও ডায়াবেটিস রমজান ও ডায়াবেটিস

রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের বার্তা নিয়ে বছর ঘুরে আবার আমাদের মধ্যে ফিরে এসেছে মহিমান্বিত মাস রমজান। আত্মিক পরিশুদ্ধি ও পারস্পরিক ভাতৃত্বের এক অনন্য নজির স্থাপন করে এ পবিত্র মাস।

মাহে রমজানে সাধারণ মানুষের চেয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, কারণ ডায়াবেটিক রোগটি খাদ্যগ্রহণ ও বর্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি অসুখ।

আসুন আমরা জানি, মাহে রমজানে ডায়াবেটিক রোগীর কি কি বাড়তি সতকর্তা ও জীবনযাত্রায় অভ্যস্থ হতে হবে।

বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪২২ মিলিয়ন। সে হিসেবে ৫০ মিলিয়ন মুসলিম ডায়াবেটিক রোগী মাহে রমজানে রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভৌগলিক অবস্থান ভেদে ১২ ঘণ্টা থেকে ২১ ঘণ্টা পর্যন্ত রোজাদারদের পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। মূলত এতো দীর্ঘ সময় ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনেক সময় জীবনের প্রতি হুমকি স্বরূপ দেখা দেয়। যদিও আল্লাহ তায়লা কোরআনুল কারিমে অসুস্থ ব্যক্তিদের রোজার ব্যাপারে ছাড় দিয়েছেন। (সুরা আল বাকারা: আয়াত ১৮৩- ১৮৫)। তাই প্রথমেই পরামর্শ হচ্ছে রোজা রাখতে গিয়ে ডায়াবেটিস রোগীরা যাতে এমন অবস্থায় পতিত না হয় যেন তাদের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে।

রোজা পালনে যে স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া: যে সব রোগীরা নিয়মিত ইনসুলিন গ্রহণ কিংবা অন্যান্য ডায়াবেটিসের ওষুধ খেয়ে থাকেন, তাদের অনেক সময় ধরে অভুক্ত থাকার ফলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যেতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগীদের বাসায় খুব স্বাভাবিকভাবেই গ্লুকোজ মাপার মেশিন গ্লুকোমিটার থাকে। যদি কোনো রোগী খুব ঘামতে থাকেন, অনেক দুর্বল অনুভব করেন, মাথা ঘোরাতে থাকে তাহলে তার রক্তের গ্লুকোজ দ্রুত মাপতে হবে এবং গ্লুকোজ মাত্রা যদি ৪ মিলি মোল/লিটার এর কম পাওয়া যায় তাহলে দ্রুত রোজা ভঙ্গ করে খাবার গ্রহণ ও চিনির পানি গ্রহণ করতে হবে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া এড়ানোর জন্য দিনের বেলা শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে দেয়া এবং রাতের বেলা খাবার গ্রহণের পর পরিশ্রম বাড়িয়ে দেয়া একটি উপযুক্ত সমাধান। খুব দ্রুত রক্তে গ্লুকোজ কমিয়ে দেয় এমন ওষুধ গ্রহণের সময়, ইনসুলিনের পরিমাণ এবং আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে পরিবর্তন করে নিন। সবচেয়ে ভালো হয় রোজা শুরু হবার আগে একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেয়া।

রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাওয়া বা হাইপার গ্লাইসেমিয়া: রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যাবার সম্ভাবনাও আছে, অধিক গ্লুকোজ বেড়ে গিয়ে রোগীর জীবন নাশও হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকায় ইফতারে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের ফলে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এ সময়ে রোগীদের ওজন বৃদ্ধি পাওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। যেহেতু অনেক পরিবার ইফতার গ্রহণকে উৎসব হিসেবে পালন করে থাকে। ঘন ঘন প্রস্রাব, গলা শুকিয়ে আসা, খুব তৃষ্ণা অনুভব করা, মাথা ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা হাইপারগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ যদি ১১ মিলিমোল/লিটারের বেশি পাওয়া যায় এবং এ ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায় সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

পানি শূন্যতা: গরমের সময় পানি শূন্যতার বেশি দেখা দেয় এবং এ পানি শূন্যতা ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে অনেক বেশি হয়ে থাকে এবং এটি রোগীর জন্য অনেক ক্ষতিকর। পানি শূন্যতা এড়াতে রাতের বেলা বেশি বেশি (৩ লিটার) পরিমাণ পানি পান করা উচিত।

কেমন হবে খাদ্য তালিকা: রমজানে খাদ্য তালিকায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। ডায়াবেটিস রোগীরা যেহেতু একটি বিশেষ খাদ্য তালিকা মেনে চলেন তাই মাহে রমজানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ খাদ্যাভাস গড়ে তুলতে হবে। আপনার চিকিৎসক আপনার শারীরিক অবস্থাভেদে খাদ্য তালিকা তৈরি করে দেবেন। ইফতারে ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার বর্জন করতে হবে। তবে খেজুরের সঙ্গে যেহেতু ধর্মীয় বিষয় জড়িত সেক্ষেত্রে ১টি কিংবা ২টি খেজুর গ্রহণ করা যেতে পারে। ইফতারের সময় ডায়াবেটিক চিনি দিয়ে ইসবগুলের ভুষি, তোকমা, লেবু কাঁচা আম বা তেঁতুল শরবত ডায়াবেটিক রোগীর জন্য উপকারি। ভুষি কোষ্ঠকাঠিন্য দূরে সাহায্য করে থাকে। কচি ডাব ছাড়া অন্য কোনো মিষ্টি জাতীয় ফলের রস বর্জন করতে হবে। একেবারে ইফতারিতে খাবার গ্রহণ না করে ধাপে ধাপে অল্প অল্প করে সেহরি পর্যন্ত খেলে ডায়াবেটিক রোগীর রক্তে গ্লুকোজ হঠাৎ বেড়ে যাবে না। সেহরি একেবারে শেষ সময়ে গ্রহণ করতে হবে, সেহরিতে ডিম, মাছ, মাংস জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে পরিমাণ মতো। খাবার শেষে দুধ পান করলে রোগীরা বেশি শক্তি পাবেন।

ওষুধ নিয়ে ভাবনা: সকাল বেলার ওষুধ ইফাতারিতে এবং রাতের ওষুধ সেহরিতে গ্রহণ করতে হবে এবং ইনসুলিনের মাত্রা হবে সাধারণ সময়ের চেয়ে অর্ধেক। তবে অবশ্যই ওষুধ পরিবর্তন ও পরিমার্জনের ক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সতর্কতা: ডায়াবেটিক রোগীদের রমজানে দিনের বেলা অবশ্যই একবার হলেও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত। আর রক্তে গ্লুকোজ মাত্রা দেখলে রোজা ভঙ্গ হয় না বলে ইসলামী চিন্তাবিদগন রায় দিয়েছেন। এছাড়া কোনো রকম শারীরিক সমস্যা বোধ করলে অতিদ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। রোজা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত বটে, কিন্তু আল্লাহ তায়লা অসুস্থ মানুষদের জন্য এ রোজা ছাড় দিয়েছেন। যদি কারো ডায়াবেটিস খুব বেশি পরিমাণে উঠানামা করে তারা রোজা না রাখাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আল্লাহ তায়লা ক্ষমাশীল ও দয়ালু। আসুন মাহে রমজানে আমাদের স্বাস্থ্যগত সতর্কতার সঙ্গে সঙ্গে আত্মশুদ্ধির পথে একধাপ এগিয়ে যাই।

ডা. মোহাম্মদ শরীফ মহিউদ্দিন ডায়াবেটিক গবেষক ও চিকিৎসক, আইচি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৭
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।