ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

রমজান মাসে খাবারের সতর্কতা

ডা. আহমেদ বুলবুল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১০
রমজান মাসে খাবারের সতর্কতা

রমজানের খাওয়াদাওয়া

রমজান মাস মানেই ভোজনরসিক বাঙালির মাসজুড়ে খাওয়ার উৎসব। সেহরির চেয়ে ইফতারের আয়োজন একটু বেশিই থাকে।

নামীদামি সব রেস্তরাঁর বাহারি পদের ইফতারের সাথে বাড়িতে আসে ব্যাগভর্তি বাজার। যেন প্রতিটি দিনের ইফতার একটি করে উৎসব। নিজে কিংবা অতিথি আপ্যায়নে ইফতারে যত বেশি পদ বাড়ানো যায় ততই যেন ইফতারের সার্থকতা। তবে আমরা সচরাচর ইফতার কিংবা সেহরিতে পুষ্টিকর খাবারের তুলনায় মুখরোচক খাবারের দিকে বেশি গুরুত্ব দিই।

রমজানে খাবারের পদ কেমন হওয়া উচিত এ ব্যাপারে কথা বলেছিলাম পুষ্টি বিশেষজ্ঞ শাম্মী আহমেদের সাথে। তিনি বলেন, ‘সেহরিতে সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়া উচিত। তেল এবং বেশি মসলাযুক্ত খাবার কম খেয়ে ঝোলজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে সাদা ভাত, মাছ, ডাল, সবজি সেহরির জন্য ভালো আহার। এছাড়া মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলে শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়। সেহরি করার মধ্য দিয়ে সারা দিনের শক্তি যেমন সঞ্চয় করে রাখতে হবে, তেমনি শরীরের পুষ্টির কথা মনে রাখতে হবে। সারাদিন রোজা রাখার পর মুখরোচক ইফতারের লোভ সামলানে সত্যই কঠিন। তারপরও পোড়া, ভাজি এবং অধিক মশলাযুক্ত খাবার যথাসম্ভব পরিহার করে বিভিন্ন ফল যেমন লেবু, বেল, বাঙ্গি ইত্যাদির শরবত খেতে পারেন। তাছাড়া ডাবের পানি, বিভিন্ন ফলের রস, ইসবগুল শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী। এগুলোর সবই আপনার শরীরের পানিশূন্যতা দূর করার পাশাপাশি শরীরের কান্তি দূর করতে সহায়তা করে। ইফতারে হালিম বেশ কদর পায়। তবে কেনা হালিমের চেয়ে বাড়িতে হালকা মসলা দিয়ে তৈরি হালিম শরীরের জন্য ভালো। রেস্তরাঁর হালিম মুখরোচক এবং গুরুপাক হওয়ার কারণে অনেক সময় হজমে তারতম্য হতে পারে। এছাড়া হরেক রকম মৌসুমি ফল, খেজুর বেশি বেশি খাওয়া যেতে পারে। এগুলোতে নানা ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ লবণ রয়েছে। সারা দিন রোজা রাখার পর সহজপাচ্য ও জলীয় খাবারের প্রতি বেশি জোর দিন।

রোগীদের জন্য

অনেকেই স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভোগেন। এগুলোর মধ্যে আছে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়বেটিসসহ নানা অসুস্থতা। রমজান মাসে তাদের রোজা রাখা নিয়ে কথা বলেছিলাম বারডেমের রেসিডেন্স সার্জন (আরএস) ডা. রুনা লায়লার সাথে। তিনি বলেন, ‘যেসব রোগী উচ্চ রক্তচাপ কিংবা হৃদরোগে ভুগছেন তারা যদি মনে করেন তারা ভালো আছেন কিংবা শারীরিক কোনো দুর্বলতা নেই, তাহলে রোজা রাখতে বাধা নেই। তবে যদি ওষুধ সেবনকারী হন তবে সকালের ওষুধ তাকে ইফতারের সাথে সাথে খেতে হবে। রাতের ওষুধ সেহরির সময় খেতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের সকালের ইনসুলিন ইফতারের সময় এবং রাতেরটা সেহরির সময় নিতে হবে। ’  এছাড়া ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিমাণমতো ফল খাওয়া যেতে পারে। সেহরির পর কিছুক্ষণ হাঁটলে ঝরঝরে লাগবে এবং হজমে সুবিধা হবে।

মুখের দুর্গন্ধ

রোজার সময় মুখের দুর্গন্ধে প্রায় সবাই অস্বস্তিতে ভোগেন। রোজা ছাড়া নানা রোগের কারণে যেমন, নিউমেনিয়া, ব্রংকাইটিস, সাইনাস, লিভার এবং কিডনিজাত নানাবিধ জটিলতার কারণে মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হতে পারে। এ সমস্যা থেকে কীভাবে ভালো থাকা  যায় তা নিয়ে কথা বলেছিলাম মুখ এবং মাড়ি রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ কে জোয়ার্দারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রোজা রাখার কারণে মুখগহ্বর শুষ্ক থাকে। আর এটাই মুখে দুর্গন্ধ হবার কারণ। তবে মুখের ভেতরটা পরিষ্কার রাখতে পারলে সুফল পাওয়া য়ায়। সেহরি খাওয়ার পর দাঁত ভালোভাবে ব্রাশ করতে হবে। ডেন্টাল ফলসের সাহায্যে দুই দাঁতের মাঝখানে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। দুই দাঁতের মাঝখানে লেগে থাকা খাদ্যকণা পচে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। যারা আলাদা দাঁত (ডেঞ্চার) ব্যবহার করেন তাদের ডেঞ্চারটি খুলে পরিষ্কার করে ব্যবহার করতে হবে। ব্রাশ করার সময় মাড়ি থেকে রক্ত পড়লে বুঝতে হবে মাড়ি রোগ আছে। তাই দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

এই রমজানে সবাই সুস্থ ও ভালো থাকুন।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২১১৮, আগস্ট ২১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।