ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

ঈদ আয়োজনে মিরপুর বেনারসি পল্লী

মারিয়া সালাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১০
ঈদ আয়োজনে মিরপুর বেনারসি পল্লী

সেই ১৯৪৭ সালের কথা। ভারতবর্ষ ভাগ হলো, জন্ম নিল ভারত আর পাকিস্তান।

ভারতের বানারস থেকে কয়েকটি পরিবার মিরপুর এবং পুরান ঢাকায় চলে এল, সাথে নিয়ে এল বেনারসি শাড়ি বোনার জাদুকরি কৌশল।

এই দক্ষ বেনারসি কারিগররা বাংলাদেশেই থেকে গেল এবং স্বাধীনতার পর মিরপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করল। জীবিকা হিসেবে বেছে নিল বেনারসি শাড়ি তৈরির কাজ। পুরো ঘটনাটি গল্পের মতো শোনালেও, নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে মিরপুরের বিশাল এক জায়গা জুড়ে গড়ে উঠল দেশের সর্ববৃহৎ শাড়ির বাজার, মিরপুর বেনারসি পল্লী।

মিরপুর ১০ ও ১১ নম্বরের বিশাল একটা অংশজুড়ে অবস্থান করছে বেনারসি পল্লী । পুরো এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শত শত কাতান আর বেনারসি শাড়ির দোকান। প্রায় প্রতিটি দোকানেরই রয়েছে নিজস্ব শাড়ি তৈরির কারখানা। নিজেদের দক্ষতা, ঐতিহ্যবাহী নকশা আর রুচির সমন্বয়ে তৈরি করে চলে একের পর এক কাতান-বেনারসি।

‘ঈদ আনন্দের একটা বড় অংশই হচ্ছে পোশাক কেনা। অন্তত একটা শাড়ি না কিনলে বাঙালি নারীর ঈদের কেনাকাটা যেন অপূর্ণই থেকে যায় । তাই প্রতিবারই ঈদকে মাথায় রেখে আমরা তৈরি করি বিভিন্ন ডিজাইনের কাতান- বেনারসি। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি, ঈদকে সামনে রেখে তৈরি করা হয়েছে আধুনিক  ডিজাইনের নানারকম শাড়ি। ’ বললেন সুজন বেনারসি হাউসের কর্ণধার সুজন আহমেদ।

এ এলাকার শাড়ির দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেল ঈদ উপলক্ষে বোনা হয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি । এগুলোর মধ্যে এবারের ঈদে টিস্যু কাতানের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। দাম একটু বেশি হলেও চাইনিজ সিল্ক কাতানের চাহিদাও বেশ। ব্রোকেড কাতানেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। আগেকার মোটা একঘেয়ে এসব কাতানের জমিনে জরি-চুমকি বসিয়ে আনা হয়েছে নতুনত্ব। ইদানীং ভারতীয় হাতের কাজের শাড়ির সাথে পাল্লা দিতেই যেন প্রায় সব শাড়িতেই জুড়ে দেওয়া হয়েছে জরি-চুমকির বাড়তি কাজ। সময়ের সাথে সাথে প্রায় সব শাড়িতেই আনা হয়েছে কিছু না কিছু পরিবর্তন। দেশীয় টিস্যু, তসর, ব্রোকেড, জুট আর সফট কাতানের সাথে যুুক্ত হয়েছে কোরিয়ান, ইন্ডিয়ান ও চাইনিজ সিল্ক কাতানের নানা ধরন।

কাতানের দাম নির্ভর করে নকশা, উপকরণ আর জরির কাজের ওপর। এসব দোকানে সাধারণত ১৩০০-১৫০০ টাকাতেই ভালো মানের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। তবে আসল কাতানের দাম একটু বেশিই। ভালো মানের কাতান শাড়ির দাম শুরু হয় ৩০০০ থেকে। নকশা আর কাপড়ের মান অনুযায়ী এসব কাতানের দাম ১০০০০-১৫০০০ পর্যন্ত হতে পারে। ১৩০০-এর নিচে আসল কাতান না পাওয়া গেলেও মোটামুটি ভালো শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। এসব দোকানে দরদাম করেই কেনা যাবে শাড়ি । দরদাম করার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, দোকানি যে দাম বলবে আপনাকে বলতে হবে তার তিন ভাগের দুই ভাগ বা তার চেয়েও কম।

বেনারসী পল্লীর বাইরেও এসব শাড়ি রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত শপিং মল এবং দেশীয় বুটিক হাউসগুলিতেও পেতে পারেন । তবে এক্ষেত্রে সঠিক দাম আগে থেকেই জেনে নেওয়া ভালো।

মাঝে একটা সময় ইন্ডিয়ান জর্জেট শাড়ির জন্য কাতানের চাহিদা একদমই কমে যাচ্ছিল। কিন্তু, স্বাতন্ত্র্য আর বৈচিত্র্যের কারণে কাতান আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সময়ের সাথে সাথে নকশা আর ধরনে বৈচিত্র্য আনতে পারলে কাতানের চাহিদা কোনোদিন কমবে না, বললেন একজন ক্রেতা।
 
বর্তমানে দেশীয় শাড়ির বাজারের সাথে পাল্লা দিতে এখানেও চলছে নিত্যনতুন শাড়ি তৈরির প্রচেষ্টা। ঈদ উপলক্ষে পুরো বেনারসি পল্লীজুড়েই যেন একটা সাজ সাজ আমেজ। সকাল থেকে রাত অবধি চলছে কেনাকাটা। এখানকার প্রতিটি কারিগরের আপ্রাণ চেষ্টাতেই যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে এই বিস্মৃতপ্রায় শাড়ির বাজার।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ০০১৫, আগস্ট ২৯, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।