ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

ডা. যোসেফা এলিজাবেথ

লাইফস্টাইল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৮ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২০
ডা. যোসেফা এলিজাবেথ ডা. যোসেফা এলিজাবেথ

দৌড়বিদ ডা. যোসেফা এলিজাবেথ,  বর্তমান কর্মস্থল – icddr,b (আইসিডিডিআর, বি) তে  রিসার্চ অফিসার হিসেবে কাজ করছেন। এত ধরনের খেলা থাকতে চিকিৎসক হয়ে দৌড়বিদ হওয়ার ইচ্ছা কেন? জানতে চাইলে বাংলানিউজকে নারী দিবসের বিশেষ আয়োজনে যোসেফা এলিজাবেথ জানালেন: 

রানিং এ আসা
রানিং দুনিয়ার ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না। আমার খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড, হাসিন আরেফিন খান অনেক আগে থেকেই রানিং এর সঙ্গে যুক্ত।

গত বছর জুলাইতে ওরা একটা মিনি ম্যারাথনের আয়োজন করে “মিরপুর পার্ক রান” নামে, দূরত্ব ছিল ৭.৫ কিমি। মূলত ওর চাপাচাপি এবং আরও দুই বন্ধুর উৎসাহে (শাম্মী এবং ইথেল) আমি সেখানে অংশগ্রহণ করি। সে ছিল এক তিক্ত অভিজ্ঞতা। প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল, সঙ্গে ছিল পিরিয়ডের ব্যথা এবং বমি বমি ভাব। প্রচণ্ড কষ্ট নিয়ে হলেও আমি আমার রান শেষ করি। মজার ব্যাপার হচ্ছে আমিই ছিলাম সর্বশেষ ফিনিশার, কিন্তু আমাকে চিয়ার করার জন্য আমার আগের সব ফিনিশাররা ফিনিশিং লাইনে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে হাততালি দিচ্ছিল আর চিৎকার করছিল। আমি সবার ভালোবাসায় এতটাই অভিভূত হয়েছিলাম যে রানিং এর প্রেমে পড়ে গেলাম! এরপর থেকে আমি দৌঁড়ের সঙ্গে আছি আজকে প্রায় ৭ মাস।

অর্জন
ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড হবার মতো দৌড়াতে পারি না। কারণ আমি স্লো রানার। কিন্তু আমি যেসব ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছি, সবগুলোই সময়ের মধ্যে শেষ করতে পেরেছি। এপর্যন্ত চারটি হাফ ম্যারাথন এবং বেশকিছু ১০ কিমি, ৭.৫ কিমি এবং ৫ কিমি রানিং ইভেন্টে অংশ নিতে পেরেছি। এর মধ্যে সবচেয়ে স্মৃতি বিজড়িত ইভেন্ট হল আমার প্রথম ইভেন্ট (মিরপুর পার্ক রান), টাটা স্টিল কোলকাতা (দেশের বাইরের প্রথম ইভেন্ট) এবং ঢাকা হাফ ম্যারাথন (দেশের মাটিতে আমার প্রথম এইমস সার্টিফিকেট)। মেরিন ড্রাইভ আলট্রা ম্যারাথন (৫০ কিমি) এর কথা আলাদা ভাবে না বললেই নয়, এটি ছিল অসম্ভব সুন্দর এক অভিজ্ঞতা। এখানে অনেক অনেক কিছু শিখেছি।

আমাদের বর্তমান জীবনে কাজ মানেই ৯ টা – ৫ টা টানা বসে থাকা। এজন্য স্থুলতা বাড়ে, রক্তে খারাপ চর্বির পরিমাণ এবং চিনির পরিমাণও বেড়ে যায়, শরীরের বিভিন্ন  জয়েন্টে ব্যথা এবং অন্যান্য জটিলতা দেখা যেতে পারে। আর যে নারীরা ঘরে কাজ করেন, তারা ঘরের কাজ বা অন্যান্য দায়িত্ব পালন করেন ঠিকই, কিন্তু ব্যায়াম করা বা অ্যাক্টিভ লাইফস্টাইল বলতে আমরা যা বুঝি, তা থেকে অনেক দূরে থাকেন।  

নারীরা যদি নিয়মিত দৌড়ানোর জন্য আসেন, তাহলে বুঝতে পারবেন যে এটা আসলে কোনো ইভেন্ট না, কোনো স্পোর্টস না, রানিং আসলে একটা লাইফস্টাইল। সপ্তাহে নিজের জন্য ৩/৪ দিন একঘণ্টা করে সময় বের করে আপনারা হাঁটুন, জগিং করুন, আস্তে আস্তে দৌড়ানো শুরু করুন। একা একা শুরু করা আসলেই কঠিন। চেষ্টা করুন কয়েকজন মিলে শুরু করার। প্রয়োজনে নিজেই আশেপাশের বা নিজের বিল্ডিং এর মানুষদের মোটিভেট কর দল বানিয়ে ফেলুন।

এছাড়া ফেসবুকেও এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন রানিং কমিউনিটি পেয়ে যাবেন, যেমন চন্দ্রিমা রানার্স, রমনা রানার্স, গুলশান রানার্স, ডেমরা রানার্স, কক্সবাজার রানার্স ইত্যাদি। দেশের সবচেয়ে বড় রানিং কমিউনিটি  হিসেবে আছে বিডিরানার্স, সব কমিউনিটির মিলনস্থল। আরও আছে “দৌড়” যারা সব কমিউনিটির, সব রানারের। দৌড়কে প্রোমোট করার পাশাপাশি যারা রানারদের ব্যবহারযোগ্য কিন্তু পুরনো রানিং একসেসরিজ অন্য রানারদের কাছে পৌঁছে দেয়, যাদের আসলেই সেগুলো প্রয়োজন। “ট্রেক” গ্রপটি কাজ করছে সব ধরনের স্পোর্টস অ্যাক্টিভিটি নিয়ে। আজকেই সব গ্রুপগলোতে জয়েন করে ফেলুন, অ্যাক্টিভিটি দেখতে থাকুন।

মনে রাখবেন, কোনো কিছুই প্রতিবন্ধকতা নয় যদি আপনি নিজের সৎ ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে মাথা উঁচু করে চলতে পারেন। যারা একসময় বাঁকা মন্তব্য করত, তাদের অনেকেই যখন দেখা হলে জিজ্ঞেস করে “নেক্সট ইভেন্ট কবে?” তখন মনে হয় আমি হয়ত অনেকের মনোভাব কিছুটা হলেও পরিবর্তন করতে পেরেছি।

আর এভাবেই নারীরাও নিজেদের বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠবেন। পরিশ্রম, মেধা ও সুস্বাস্থ্য নিয়ে দেশের উন্নয়নে পুরুষের সঙ্গে সমানতালে কাজ করবেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২০
এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।