ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

লক্ষ্মীপুরে খাঁচায় মাছ চাষে সাফল্য

সাইফুল ইসলাম স্বপন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১০
লক্ষ্মীপুরে খাঁচায় মাছ চাষে সাফল্য

লক্ষ্মীপুরে খাঁচায় মাছ চাষ এবং মাছের পোনা উৎপাদন করে মোঃ ফয়েজ আলম ভুঁইয়া নামের অবসরপ্রাপ্ত এক সেনাসদস্য বেশ সফলতা অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যবসায়ী।

সামরিক শাখায় কর্মজীবনের সফল সমাপ্তিতে অবসর জীবনের শুরুতেই গড়লেন এক বিরল ইতিহাস। ২০০৪ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের সুবিধাদিসহ নিজস্ব সঞ্চয়ের ১৭ লাখ টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। জেলা শহরের অদূরে রাজিবপুর গ্রামের ছোট্ট পরিসরে তিনটি পুকুরে প্রাথমিকভাবে খাঁচায় মাছ চাষের প্রকল্প গড়ে তোলেন। ২০০৫ সালের প্রথম বছরেই অভাবনীয় সাফল্যে তিনি নিজেই চমকে উঠেন। এরপর আত্মপ্রত্যয়ী ফয়েজ আলম লক্ষ্মীপুর এগ্রো ফিশারিজ অ্যন্ড হ্যাচারি নামে  তেলাপিয়া পোনা উৎপাদন ও মাছ চাষ প্রকল্পের নামে গড়ে তুলেছেন এক বিশাল কর্ম এলাকা, যা ইতিমধ্যে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাঁচায় মাছ চাষ প্রকল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তার প্রকল্পের অধীনে পোনা উৎপাদন, মাছ চাষ থেকে শুরু করে পুরো কর্মস্থলে বর্তমানে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় শতাধিক জনবল।

আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ও বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্রুড সেকশান, হ্যাচিং ইউনিট, ল্যাব, নার্সিং এবং ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ প্রক্রিয়া সত্যিই দেখার মতো। নিজে ফার্ম গড়তে গিয়ে তিনি অভাব বোধ করলেন দক্ষ জনবলের। সে অভাব বোধ থেকেই স্থাপন করলেন একটি ট্রেনিং সেন্টার ‘লক্ষ্মীপুর এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল এমপ্লয়ার’। এলাকার শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত বেকার যুবকদের বিনা খরচে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রয়োজনীয় দক্ষ ও প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলে নিজ প্রতিষ্ঠানেই চাকরির ব্যবস্থা করেন। আর এভাবেই সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোতেও সচ্ছলতা এসেছে। তার প্রকল্পে ২০০৬ সালে ৫ হাজার তেলাপিয়া মা-বাবা নিয়ে ‘ব্রুড’ সেকশন স্থাপন করা হলে ওই বছর ১০ লাখ পোনা উৎপাদিত হয়। একই বছর দ্বিতীয় ধাপে ১৫ হাজার তেলাপিয়ার প্রজনন থেকে উৎপাদিত হয় ৫০ লাখ পোনা। ক্রমশ বাড়তে থাকে তার পুকুরের সংখ্যা। ব্যবসায়িক প্রসারতার এক পর্যায়ে বিস্তৃত জলাশয় হিসেবে বেছে নেন মেঘনা নদীর মোহনা। মজু চৌধুরীর হাট ঘাট এলাকায় গড়ে তুললেন ব্যাপকভিত্তিক খাঁচায় মাছ চাষের ব্যবস্থাপনা। ভাসমান পদ্ধতির সারিবদ্ধ খাঁচা দেখতে স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের পর্যটকরাও প্রতিদিন ভিড় জমায়। বর্তমানে ভাসমান খাঁচা সংখ্যা ১৩৫-এ উন্নীত হয়েছে। এ পদ্ধতি উদ্ভাবন ও আধুনিকায়ন করতে তিনি চাঁদপুর মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রের মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকীর নাম উল্লেখ করে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তার পরামর্শ ও বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন প্রক্রিয়াকে হাতেকলমে কাজে লাগিয়ে তিনি বড় ধরনের বিপর্যয় ছাড়াই এ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছেন বলে  জানান।

ফয়েজ ভূঁইয়া আরও জানালেন, তেলাপিয়া একটি সর্বভোগী জাতের মাছ। পুরুষ তেলাপিয়া আর নারী তেলাপিয়ার জৈবপ্রক্রিয়ার অনুকূল পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে অধিক ডিম উৎপাদন এবং ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে রেণু করার অত্যাধুনিক মেশিনের মাধ্যমে প্রজনন পদ্ধতি রয়েছে তার প্রকল্পে। তার প্রকল্প থেকেই এখন বছরে প্রায় এক কোটি পোনা উৎপাদন হচ্ছে বলে তিনি জানান। এতে করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পোনা সরবরাহ করে এবং খামারিরা মাছ চাষ করে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ দেড় কোটি টাকা।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২৩১০, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১০

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।