ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লন্ডন

আগাম নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের মাথাব্যথা নেই

সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৪
আগাম নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের মাথাব্যথা নেই ড. গওহর রিজভী

লন্ডন: বাংলাদেশের আগাম নির্বাচন নিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর কোনই মাথাব্যথা নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী।

বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে লেখক, মানবাধিকারকর্মী শাহরিয়ার কবিরের ডকুমেন্টারী প্রদর্শনী দেখতে এসে বাংলানিউজের সাথে আলাপচারিতায় তিনি এই মন্তব্য করেন।



গওহর রিজভী বলেন, প্রতিটি দেশেরই অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয় থাকে, যা নিজেদেরই সমাধান করতে হয়। এ নিয়ে বাইরের কোন দেশের হস্তক্ষেপের সুযোগ
নেই, এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রাদায় ভালো করেই বোঝে, শুধু বুঝতে চাননা আমাদের বিরোধী কোন কোন রাজনৈতিক দল।

তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি-জামাতের ধ্বংসাত্মক আক্রমণের ভয়ে অনেক ভোটার ভোট কেন্দ্রে আসতে না পারলেও প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতিতেই নির্বাচন সম্পন্ন হয়। আর এই নির্বাচনে বিজয়ী হয় বর্তমান সরকার। সুতরাং একটি নির্বাচিত সরকারকে চাপ দিয়ে আগাম নির্বাচন বিদেশিরা আদায় করে দেবে এমন যারা আশা করেন, তারা আন্তর্জাতিক রাজনীতির সাধারণ নিয়ম সম্পর্কে হয় জানার চেষ্টা করেন না, অথবা জেনেও বাংলাদেশের জনগণকে বোকা ভাবতে চান।

এই মূহূর্তে আগাম নির্বাচন বিষয়ে বিদেশিদের কোন চাপ আছে কি না, এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর জানতে চাইলে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা বাংলানিউজকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, আগাম নির্বাচন সম্পর্কে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই’র সাম্প্রতিক মন্তব্য বিশ্লেষন করুন, উত্তর পেয়ে যাবেন।

তিনি বলেন, আজকের এই মডার্ন যুগে বিশ্ব রাজনীতির গতিপ্রকৃতি সেকেন্ডের মধ্যেই পরযবেক্ষণ করা যায়। গণতান্ত্রিক শাসনের পক্ষে পুরো পৃথিবীরই এখন অবস্থান। আর গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতে নির্বাচনের বিকল্প নেই। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন যথা সময়ে হবে, কারো জন্য এটি থেমে থাকলে গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হয়, গণতান্ত্রিক শাসন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এটি বিশ্ববাসী ভালো করেই বোঝে।

গওহর রিজভী বলেন, বাংলাদেশ আজ শুধু দেশের মধ্যেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও গণতন্ত্রের পক্ষে একটি সোচ্চার কণ্ঠ হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছে। পৃথিবীর শক্তিশালী দেশগুলো সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে চায়। সামাজিক উন্নয়নে দরিদ্র দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশ এখন অনুসরণীয়।

তিনি বলেন, বিশ্বশান্তির পক্ষে বাংলাদেশের উচ্চকন্ঠ সারা পৃথিবীতেই এখন প্রতিধ্বনিত হয়। জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশ থেকে অভিজ্ঞতা নিতে চায় এই সমস্যা মোকাবেলারত দেশগুলো। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের সাফল্য আন্তর্জাতিকভাবে আজ আলোচিত বিষয়।

প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক এ উপদেষ্ঠা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এতসব অর্জনের ফলেই সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে বেছে নিচ্ছে পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলো। এ প্রসঙ্গে উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন(সিপিএ) এবং ইন্টার পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন(আইপিএ)সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিজয়ের বিষয়টি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিজয়ের পরও যারা মনে করেন বা আশা করেন আগাম নির্বাচন প্রশ্নে সরকার বহিঃর্বিশ্বের চাপে রয়েছে, তাদের এই ভাবনা কতটুকু সঠিক তা তারা নিজেরাই বলতে পারবেন, সরকারের এ বিষয়ে কিছু বলার নেই।

যুদ্ধাপরাধী বিচারের রায় বা দণ্ড নিয়ে বিদেশিদের মধ্যে কোন অসন্তোষ আছে কি না, এমন প্রশ্ন করলে গওহর রিজভী পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, কেন থাকবে?
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ন্যায় বিচার প্রাপ্তির লক্ষ্যে অভিযুক্তদের যেসব সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে, পৃথিবীর আর কোন যুদ্ধপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে এটি নেই আন্তর্জাতিক সম্প্রাদায় এটি ভালো করেই জানে।

মৃত্যুদণ্ড প্রশ্নে কোন কোন দেশের বিরোধীতা বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্ঠা বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের লিগ্যাল সিস্টেমে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। কোন কোন দেশে এটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।

কিছু কিছু মানবাধিকার সংগঠন ও রাষ্ট্র মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে তাদের যে অবস্থান তুলে ধরছে এটিতো সামগ্রিক মৃত্যুদণ্ড প্রথার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান। এটিকে
শুধু একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের বিরোধীতা হিসেবে একটি কৌশলী প্রচারণা চালিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায় যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক গোষ্ঠী।

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার যেমন অধিকার আছে এর বিরোধীতাকারী দেশগুলোর, তেমনি  প্রতিটি দেশের নিজস্ব লিগ্যাল সিস্টেমের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকাও উচিত তাদের। আমরা মনে করি এই শ্রদ্ধাবোধ তাদের আছে, এবং মৃত্যুদণ্ডের বিরোধীতা এটি তাদের নীতিগত অবস্থান, এটি শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের বিরোধীতা নয়।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

লন্ডন এর সর্বশেষ