ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

‘বাকিতে ঘুষ খাওয়া’ মালয় পুলিশ

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৪
‘বাকিতে ঘুষ খাওয়া’ মালয় পুলিশ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুয়ালালামপুর থেকে ফিরে: মালয়েশিয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের। মালয় পুলিশের কাছে হয়রানির শিকার হননি, এমন বাংলাদেশি খুজেঁ পাওয়া দুষ্কর।

ভিনদেশি পুলিশের বাকিতে ঘুষ খাওয়ার কাহিনীও রয়েছে বিস্তর।

এমনই একজন বাংলাদেশি শ্রমিক ক্লাংয়ের আবুল হোসেন (ছদ্মনাম)। ভিসাজনিত সমস্যায় তাকে প্রায়ই হেনস্থা হতে হয় পুলিশের কাছে। নিয়মানুযায়ী তাকে ধরে জেলে ঢোকানোর কথা। তবে সেটি না করে, পুলিশ তার কাছে ২০ রিঙ্গিত (টাকার মূল্যে ৫০০) ঘুষ চায়। তবে ওই মুহূর্তে আবুল হোসেনের কাছে কোনো অর্থ না থাকায় তিনি ক্ষমা চেয়ে নেন।

হোসেনের ভাষায়, পুলিশ সদস্য ভাবেন আমাকে জেলে পাঠালে তার লাভ নেই। এর চেয়ে বরং আমাকে আরেকটা সুযোগ দেবেন। তখন আমায় বলেন, ঠিক আছে পরের বার দেখা করে দিয়ে যেও।

একই পুলিশ সদস্যের খপ্পরে আবারো পড়েন হোসেন। একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে দ্বিতীয়বারও রক্ষা পান তিনি। তবে তৃতীয়বার একসঙ্গে ৬০ রিঙ্গিত দিয়ে ছাড়া পেতে হয় তাকে।

মালয় পুলিশকে নিয়ে এ ধরনের ঘটনা আরো অনেক রয়েছে। তবে দেশটির পুলিশের এ ধরনের অপরাধ প্রবণতার জন্যে বাংলাদেশিদেরকেও দায়ী করছেন অনেকে।

মালয়েশিয়াতে ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে যে সব বাংলাদেশি রয়েছেন, তারা জানান, এক সময় মালয় পুলিশ বেশ সৎ ছিল। প্রবাদ রয়েছে, ‘তাদের ঘুষ খেতে শিখিয়েছে বাংলাদেশিরা’।
 
যখন মালয় পুলিশ একজন অবৈধ অভিবাসীকে ধরে জেলে পুরতে চাইতো, তৎক্ষণাৎ কৌশলী বাংলাদেশি তার হাতের মুঠোয় ২০ রিঙ্গিত পুরে দিতো। ধীরে ধীরে বাংলাদেশি শ্রমিক ধরে ঘুষ আদায়ের কৌশল রপ্ত হয়ে যায় মালয় পুলিশের।

তবে বর্তমানে সকল জাতিগোষ্ঠীর কাছেই মালয় পুলিশ এক হয়রানির নাম। যেহেতু তারা জানে, সেখানে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশের অনেক অবৈধ শ্রমিক রয়েছে, তাই সবসময় সুযোগ খোঁজে অবৈধ শ্রমিক ধরে অর্থ আয়ের। আর এ কারণে বৈধ কর্মজীবী, এমনকি পর্যটকদেরও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে প্রবাসীদের অভিযোগ, কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ দূতাবাসের বিরুদ্ধেও। শ্রমিকরা বলেন, ইন্দোনেশিয়ান বা ফিলিপাইনের এমনকি নেপালের শ্রমিকদের ধরতেও পুলিশ চিন্তা করে। কারণ বৈধ শ্রমিককে হয়রানি করলে সেসব দূতাবাস নিজ দেশের শ্রমিকের পাশে দাঁড়ায়। আর বাংলাদেশ দূতাবাসে হয়রানির ভয়ে শ্রমিকরাই যান না। মালয় পুলিশও বাংলাদেশিদের প্রবাসে এ অভিভাবকহীনতার কথা জেনে গেছে।

শুধু অবৈধ শ্রমিক নয়, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদেরও হয়রানি করে মালয় পুলিশ। শিক্ষার্থীদের পার্টটাইম করার কোনো সুযোগ নেই মালয়েশিয়াতে। তবে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের নিজেদের পড়াশোনার খরচ চালাতে বিভিন্ন সুপার স্টোর এবং রেস্টুরেন্টে অথবা বিভিন্ন দোকানে কাজ করতে হয়।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ বিষয়টি জানে। দোকানে গিয়ে আমাদের ধরে ১০০ থেকে ২০০ রিঙ্গিত ঘুষ নেয়।

মালয়েশিয়ান পুলিশে ঘুষ জিনিসটি বেশ প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পেয়েছে। তাইতো রাস্তায় ঘুষ দিলে সেটি ১০০ থেকে ২০০ রিঙ্গিতে ছাড়ে, আর থানায় গেলে ১০০০ রিঙ্গিতের নিচে নয়। কারণ সেখানে বড় অফিসারদেরকেও ভাগ দিতে হয়।
 
সাম্প্রতিক দুটি ঘটনা। রাতে দুই বাংলাদেশি পরিচিতজন আশরাফ ও শহীদুলসহ যাচ্ছিলাম আমপাং। রাস্তায় ব্লক দিলো। গাড়ি চালাচ্ছিলেন শহীদুল ভাই, তার ড্রাইভিং লাইসেন্স বাসায় রেখে এসেছেন ভুল করে। নিয়মানুযায়ী তাকে ৩০০ রিঙ্গিতের একটি সামান (মামলা) দেয়া হলো।

তবে আশরাফ ভাইয়ের সঙ্গে তার ইউনিভার্সিটি আইডি কার্ড থাকা সত্ত্বেও পাসপোর্ট না থাকায় হয়রানি শুরু করলো। বললো, পাসপোর্ট বাসায় গিয়ে নিয়ে আসতে। মূলত ঘুষের জন্যেই এ বাহানা। কারণ আইডি কার্ডে তার ছাত্রত্বের মেয়াদ উল্লেখ রয়েছে।

আমি আর আশরাফ ভাই বসে থাকলাম রাস্তায়। শহীদুল রওনা দিলেন আশরাফের বাসায় গিয়ে পাসপোর্ট নিয়ে আসার জন্য। তবে শেষ পর্যন্ত মালয় পুলিশ যখন দেখলো ঘুষের কোনো অফার করা হচ্ছে না তখন হতাশ হলো। বললেন, তোমাদের বন্ধুকে চলে আসতে বলো, আমরা এখন চলে যাব।

বাংলানিউজের কুয়ালালামপুর করেসপন্ডেন্ট খায়রুল মাহমুদ। গাড়ির কাগজপত্রজনিত সমস্যায় তাকে আটক করা হলো। আইন অমান্যের অপরাধে তাকে কোনোমতেই ছাড় দেয়া হবে না। তবে শেষ পর্যন্ত ঠিকই ২০০ রিঙ্গিতের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হলো তাকে।

আর প্রতিদিন অসংখ্য অবৈধ শ্রমিককে ধরে হাজার রিঙ্গিত আদায়ের ঘটনা মালয়েশিয়াতে স্বাভাবিক ঘটনাই বটে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ