ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ায় দূতাবাসের সাহায্য চান ১১৭ নির্যাতিত বাংলাদেশি

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৪
মালয়েশিয়ায় দূতাবাসের সাহায্য চান ১১৭ নির্যাতিত বাংলাদেশি ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুয়ালালামপুর থেকে: মালয়েশিয়ার হ্যান্ড গ্লাভস কোম্পানি সুপারম্যাক্স গ্লোভ ম্যানুফ্যাকচারিং এসডিএন বিএইচডি'র স্বেচ্ছাচারিতা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে  ১১৭ জন বাংলাদেশি শ্রমিক দুর্বিষহ যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছে। কর্মহীন অবস্থায় বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তারা।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সাহায্য ছাড়া এই ১১৭ জনের মুক্তি মিলবে না বলে মনে করছেন শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার বাংলাদেশিরা।

পুলিশ ও কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি মীমাংসার জন্য গত ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশ হাই কমিশনের কাউন্সেলর (শ্রম) বরাবর আবেদন করেন শ্রমিকরা। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি।

চায়নিজ কোম্পানিটির অধীনে থাকা বাংলাদেশি শ্রমিকদের এরইমধ্যে বের করে দেয়া হয়েছে কোম্পানি থেকে। তাদের পাসপোর্ট কোম্পানির হাতে, নেই কোনো ফটোকপিও।

শ্রমিকরা লিখিত আবেদনে জানিয়েছেন, সুংগাই বুলুর বুকিত রাহমান পুত্রার ইন্ড্রাস্টিয়াল পার্কের এই কোম্পানিতে ২০০৭ সাল থেকেই বৈধভাবে কর্মরত রয়েছেন তারা।

গত অক্টোবরের আগ পর্যন্ত কোম্পানির মালিক চি চান লি টান নিজ ব্যবস্থাপনায় অংঅইভি নামে একজন চায়নিজ নারীর মাধ্যমে শ্রমিকদের তদারকি করাতেন এবং বেশ ভালভাবেই বেতন ভাতাদি পাওয়া যেত।

তবে গত ২৩ অক্টোবর থেকে কোম্পানির মালিক অংঅইভি'র পরিবর্তে তার মনোনীত আত্মীয় প্রতিনিধি মু হং দেখভালের দ্বায়িত্ব পান। এই মু হং কোম্পানিতে আসার পর থেকে শ্রমিকদের উপর অমানবিক অত্যাচার শুরু হয়। কথায় কথায় গালাগালি ও শারীরিক নির্যাতন চলতে থাকে।
 
শ্রমিকদের অভিযোগ, আসার পর দিনই কোম্পানির ৫৭১ জন বাংলাদেশি ও নেপালি শ্রমিকের মাথা ন্যাড়া করেন  মু-হং। নিজ ব্যাবস্থাপনায় খাবারের ব্যবস্থা বাতিল করে কোম্পানির ভেতরের ক্যান্টিনে চড়া দামে নিম্নমানের খাবারের ব্যবস্থা করেন। বিনা কারণে শ্রমিকদের ওপর চড়াও হয়ে পালাক্রমে শারীরিক নির্যাতন চালান।  

নির্যাতনের প্রতিবাদ করলে গত ১২ নভেম্বর স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে শ্রমিকদের মারধর করা হয়। পরবর্তীতে শ্রমিকরা একতাবদ্ধ হলে দু-গ্রুপে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ চলতে থাকে। এরই প্রেক্ষিতে বিকেলেই সব বাংলাদেশি শ্রমিকের বিছানাপত্র-কাপড়-চোপড় বাইরে ফেলে দেয়া হয় কোম্পানি থেকে।

শ্রমিকরা জানান, শ্রমিকদের মাইক্রোবাসে করে ত্রিশ জনকে মেরু, কেলাং এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে লকাপে আটকে রেখে বেধড়ক পেটানো হয়। দৈনিক খাবার দেয়া হয় এক বেলা করে। লকাপে কোনো ছাদ না থাকায় বন্দিরা রোদ-বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তি পোহান। ওই ঘটনায় উল্টো প্রতিবাদকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়।

শ্রমিকসহ সেখান‍ার বাংলাদেশিরা স্থানীয় ওয়াংসা মাজু থানায় অভিযোগ জানালে পুলিশ তাৎক্ষণিক লকাপে অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মুক্ত করে আনে। তবে ১৩ জনের বিরুদ্ধে কোম্পানির মামলা থাকায় তাদের অন্য একটি কারাগারে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।

অভিযানে পুলিশের সঙ্গে থাকা বাংলাদেশি ব্যবসায়ী পাভেল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ সেখানে গিয়ে দেখতে পায়, অবর্ণণীয় অবস্থায় আটকে রাখা হয়েছে শ্রমিকদের। পরনে পোশাক নেই। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন। পুলিশের পরামর্শে পাল্টা মামলা করেন শ্রমিকরা।

বর্তমানে ১০৪ জন বাংলাদেশি শ্রমিক সেখানে সুংগাই বুলু এলাকায় বিভিন্ন বাংলাদেশির বাসা বা দোকানে অবস্থান করছেন।

থানার পরামর্শে শ্রমিকরা ১৩ তারিখেই বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করেন এবং সমস্যা সমাধানের আবেদন করেন।

দূতাবাসের লেবার উইংয়ের কাউন্সেলর সাইদুল ইসলামের পরামর্শে সেদিনই লিখিত আবেদন করেন শ্রমিকরা। তবে এরপর আর সাইদুল ইসলামের দেখা পাওয়া যায়নি। ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

একজন শ্রমিক বলেন, সাইদুল জানিয়েছেন তিনি নতুন এসেছেন। এখনো সবকিছু বুঝে উঠেননি। একই কথা শ্রমিকদের জানিয়েছেন লেবার উইংয়ের ফার্স্ট সেক্রেটারি মুসাররাত জেবিন।

শুক্রবারও পুরোদিন এম্বেসিতে অবস্থান করেও দূতাবাসের কারো সঙ্গে দেখা করতে পারেননি শ্রমিকরা। এরপর শনি ও রোববারের সরকারি ছুটির বন্ধ। সোমবার আবারো দূতাবাসে যাওয়ার কথা তাদের।

এ বিষয়ে জানতে বেশ কয়েকবার সাইদুল ইসলামের ফোনে যোগাযোগ করা হলেও ধরেননি তিনি।

শ্রমিকদের পক্ষে দূতাবাসে আবেদন করা হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের গত মাস থেকে প্রতিদিন কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছিল। অসুস্থতার কারণে উপস্থিত থাকতে না পারলে ১০০ রিঙ্গিত জরিমানার সঙ্গে একদিনের বেতনও কেটে নেয়া হচ্ছিলো।

তিনি বলেন, আমরা দূতাবাসকে আরো জানিয়েছি, ওই কোম্পানি থেকে আমাদের পাসপোর্টের ফটোকপি না দিয়ে কোম্পানির আইডি কার্ডে চলতে বলা হয়।

কিন্তু এতে প্রতিনিয়ত ইমিগ্রেশন ও পুলিশের কাছে হয়রানির শিকার হতাম। ব্যক্তিগতভাবেই টাকা পয়সা দিয়ে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পেতে হতো।

শ্রমিকদের আরো অভিযোগ, কেউ ছুটিতে দেশে গেলে নিজ খরচে বিমান টিকেট কিনতে হয় এবং কোম্পানিকে ২ হাজার রিঙ্গিত (৫০ হাজার টাকা) জমা দিয়ে যেতে হয়।

মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন পেশায় থাকা বাংলাদেশিরা বলেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশি দূতাবাসকেই শ্রমিকদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৩, নভেম্বর ২৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ