ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়া থেকে মফিজুল সাদিক

মেঘের সঙ্গে গলাগলি করে ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য উপভোগ

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৪
মেঘের সঙ্গে গলাগলি করে ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য উপভোগ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: গেন্টিং হাইল্যান্ড মালয়েশিয়ার সব থেকে উঁচু স্থান। সমতল থেকে এর উচ্চতা প্রায় ছয় হাজার মিটার।

কুয়ালালামপুর থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার বাস জার্নি করে আমরা সেখানে পৌঁছলাম। পাহাড় যেন পুরো সড়ককে পরম মমতায় আগলে রেখেছে। চলতি পথে পাহাড় ঘেঁষা সড়কে বাসের সব যাত্রীই একটু ভয় অনুভব করছিলেন।

কুয়ালালামপুর টু গেন্টিং হাইল্যান্ডের পুরো পথের পাশেই পাহাড় ও গভীর অরণ্য। উঁচু উঁচু পাহাড় ও অরণ্যের বুক চিরে যেন বহমান নদীর মতো এঁকে বেঁকে বয়ে চলে গেছে এই মহাসড়ক।

পাহাড় ঘেরা পথ বেয়ে আমরা পৌঁছলাম গেন্টিং হাইল্যান্ডের পাদদেশে। এখান থেকে আরো ছয় হাজার ফুট দূরে অবস্থান করছে গেন্টিং হাইল্যান্ড। এখানে পৌঁছানোর অন্যতম মাধ্যম কেবল কার। এতে করে যাওয়া আসার জন্য ৬ রিঙ্গিত গুণতে হয় দর্শনার্থীদের।

টিকিট কাটার সময় আমরা অনুভব করলাম স্বাভাবিক তাপমাত্রা ও হালকা গরম। ছয় রিঙ্গিত দিয়ে টিকিট কেটে ক্যাবল কারে ওঠার জন্য ট্রেনের মতো লাইন ধরতে হয়। শেষ পযর্ন্ত ক্যাবল কারে উঠতে পারলাম। এক সঙ্গে ছয় জন উঠেছিলাম। এটি ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠতে থাকে।   ক্যাবল কারের নিচে পাহাড়ের মাথায় খেলা করে মেঘের ভেলা।

মেঘের এই ভেলা ভেদ করে ক্যাবল কারের পথচলা। নিচে তাকালে অনেক সময় ভয়ঙ্কর ভূতের মতো লাগে। কারণ মেঘ ঢেকে রেখেছে পাহাড়ের সবুজ বনকে। এছাড়া ক্যাবল কারের নিচে দুই পাহাড়ের গায়ের মাঝখানে গহিন জঙ্গল। সব মিলিয়ে এক ভয়ঙ্কর অবস্থা। কেবল কারের নিচে তাকালে ভয়ে বুক কাঁপছে সবার। তারপরও এই ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভোলেন না মালয়েশিয়ায় আশা হাজারো দর্শনার্থী।

কখনও আবার কালো মেঘ এসে আমাদের ক্যাবল কারকে ঢেকে দিচ্ছে। শেষ পযর্ন্ত ভয়কে সঙ্গী করে আমরা পৌঁছলাম গেন্টিং হাইল্যান্ডের একেবারে মাথায় ছয় হাজার ফুট উঁচুতে।

কেবল কারে ওঠার সময় হালকা গরম অনুভব করেছিলাম কিন্তু উঁচুতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই শীতল হাওয়া সবাইকে যেন চেপে ধরলো। মেঘের ভেলায় দর্শনার্থীরা গলাগলি করে এখানে। কারণ ক্ষণে ক্ষণে শরীরে দোলা দিয়ে যাচ্ছে কালো ও সাদা মেঘের ভেলা। এতে হালকা শীত অনুভব করছিলাম। গেন্টিং হাইল্যান্ডে যেন রোদ ও মেঘের খেলা নিত্য নৈমেত্তিক ব্যাপার।

হাইল্যান্ডে উঠতে গিয়ে এক ধরনের ভয় অনুভব করলেও এতে এক ধরনের ভালোলাগাও রয়েছে।

গেন্টিং হাইল্যান্ডে সব কিছু রয়েছে।   মালয়েশিয়ার দামি-দামি শপিং মল, দামি দামি কার, রেস্তোরাঁ ও ফার্স্টফুড শপসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছু। কি নেই এখানে? এছাড়া এটি  শিশুদেরও অন্যতম প্রিয় স্থান; কারণ এখানে প্রায় শতাধিক প্রকারের রাইড আছে। এখানে আছে থিম পার্ক ও ভূতের আড্ডা। ভূতের বেশ ধারণ করে অন্যকে ভয় দেখাতে মজা পায় এই কৃত্রিম ভূতের দল।

এছাড়া এখানকার অন্যতম বড় আকর্ষণ ক্যাসিনো।   মালয়েশিয়ার সব থেকে উঁচু জমিটি জুয়াড়িদের কাছে খুবই পরিচিত। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে জুয়াড়িরা আসেন  জুয়া খেলতে। তবে ২৫ বছরের কম বয়সী ও মালয়েশিয়ান মুসলমানদের জন্য ক্যাসিনোতে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ।

এছাড়া এখানে রয়েছে হোটেল গেন্টিং গ্রান্ড, ভিআইপি হোটেল, হোটেল ম্যাক্সিমাস ও পৃথিবীখ্যাত হোটেল ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড। ২০০৩ সালে এটি নির্মিত হয়। ছয় হাজার ফুট উঁচ্চতার এই হোটেলটিতে রয়েছে ৬ হাজার ১১৮টি কক্ষ। যা পৃথিবীর কোনো হোটেলে নেই।  

ভ্রমণ পিপাসুদের  জন্য এটি অন্যতম দৃষ্টিনন্দন স্থান। গেন্টিং হাইল্যান্ডের জন্য নানা ধরনের ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। যাতে খুব সহজেই দর্শনার্থীদের কাছে টানে মালয়েশিয়া। দেশটির জিডিপির অবদানের ক্ষেত্রে ছয় নাম্বারে রয়েছে টুরিস্ট খাত।

গেন্টিং হাইল্যান্ড দেখে অধিকাংশ বাংলাদেশির মনে পড়তে পারে বান্দরবন ও রাঙামাটির পাহাড়ের কথা। গেন্টিং হাইল্যান্ডের আদলে এখানে যদি কেবল কার ও মার্কেট গড়ে তোলা যায় তবে মালয়েশিয়ার গেন্টিং হাইল্যান্ডের মতো বাংলাদেশের রাঙামাটি ও বান্দরবনও ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে টানতে পারবে বলে মনে হয়। এতে বাংলাদেশের জিডিপি’তেও অন্যতম অবদান রাখতে পারে বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৪

** কবুতরের সঙ্গে প্রেম বিনিময়!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ