ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

চকলেট কী? বাংলাদেশিদের কাছে অজানা!

মাজেদুল নয়ন ও মফিজুল সাদিক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৪
চকলেট কী? বাংলাদেশিদের কাছে অজানা! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুয়ালালামপুর থেকে: ডার্ক চকলেট! এতে ৫৫ শতাংশের বেশি কোকো থাকে। খেতে অনেকটা তিতা।

তবে এটি হার্ট ও ব্রেনের জন্য উপকারী। আর বাংলাদেশিদের কাছে প্রিয় মিষ্টি চকলেট আসলে চকলেট কুকিজ।

শনিবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কুয়ালালামপুরের বুকিত বিনতাংয়ে কফি’র টেবিলে চকলেট নিয়ে বাঙালিদের এই অজ্ঞতার কথা জানালেন চকলেট ফেম এসডিএন বিএইচডি’র পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম রেজা।

দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে চকলেটের ঘূর্ণিপাকেই সেলিমের জীবন। সেলিম জানান, বিশ্বে চকলেটখেকো জাতির তালিকায় ইন্দোনেশিয়া শীর্ষে। এর পরেই রয়েছে আরব, চাইনিজ, ভারতীয় ও কোরিয়ানরা। এরা ডার্ক চকলেট বেশি পছন্দ করেন।

মোহাম্মদ সেলিম রেজা আরো বলেন, ভালোমানের চকলেট হাতের উষ্ণতাতেই গলে যাবে, একে সবসময় ঠাণ্ডায় রাখতে হয়। তবে নিম্নমানের চকলেট তিন দিন ধরে ফ্রিজের বাইরে রাখলেও গলে না, শক্ত থাকে।

১৯৯৫ সালে মালয়েশিয়ায় আসেন সেলিম। প্রথমে তিনি কেএফসিতে দুই বছর চাকরি করেন। পরে একটি কারখানায় ছয় মাস চাকরি করেন। এরপর কুয়ালালামপুরে সুংগাই ওয়াং প্লাজায় একটি ক্যাফেতে দুই বছরের জন্য চাকরি নেন।

সবশেষ বিশ্বখ্যাত ফেমাস আমোস চকলেট অ্যান্ড চিপস কোম্পানিতে শুরু হয় তার কর্মজীবন। দেখতে দেখতে ১৫টি বছর কেটে যায় এই কোম্পানিতে। সেখানে তিনি ট্রেইনার মার্চেনরাইজার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। গিফট ডিজাইনার হিসেবে পান সার্টিফাইড স্বীকৃতি। ২০১২ সালে মালয় সহকর্মী জহরবারোর মারিয়ানার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মোহাম্মদ সেলিম রেজা।

এর পরেই দীর্ঘ চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি চকলেট ব্যবসা শুরু করেন। বুকিত বিনতাংয়ে স্বল্প পরিসরে একটি চকলেটের দোকান দেন। তার সমস্ত ব্যবসার সঙ্গে ছায়ার মতো থেকেছেন স্ত্রী মারিয়ানা।

কিন্তু ব্যবসার শুরুতেই লোকসান হয়। তবুও তিনি চকলেট ব্যবসার হাল ছাড়েননি। এর পরে বিবি প্লাজায় আরও একটি চকলেটের দোকান দেন। ২০১৩ সালে এই দোকানের লাভ এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, একই বছরে আরোও আটটি দোকান কেনেন তিনি।

তবে ২০১৪ সালে মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে একটু মন্দাভাব ও পর্যটক কম থাকায় চারটি দোকানই ছেড়ে দিয়েছেন সেলিম।

বিবি প্লাজা ছাড়াও বর্তমানে চুংগাই ওয়াং প্লাজা এবং টাইম স্কয়ারের ছয় তলায় খুচরা চকলেটের দোকান রয়েছে তার। আর এভাবেই ফেনীর নেমুয়ার সেলিম রেজা মালয়েশিয়াতে হয়ে উঠেছেন ‘চকলেট সেলিম’।

এছাড়াও চুংগাই ওয়াং প্লাজা এবং বিবি প্লাজায় দুটি কাপড়ের দোকান ভাড়া দিয়েছেন তিনি। চকলেটের সঙ্গে সেলিমের ভাব সেই ফেমাস আমোস থেকেই। চাইনিজ বসের সঙ্গে যখন তিনি কাজ শুরু করেন তখন থেকেই চকলেটের বিষয়গুলো রপ্ত করে নেন তিনি। বর্তমানে সেলিম ও তার স্ত্রীসহ ১১ জন কাজ করছেন চকলেটের দোকানগুলোতে।

সেলিম বলেন, চকলেটের মধ্যে কিছু বিষয় রয়েছে। কমপাউন্ড রয়েছে এ বি সি বিভিন্ন ক্যাটাগরির। কোকো পাউডার এবং কোকো বাটারের উপর নির্ভর করে চকলেটের মান। এশিয়াতে মালয়েশিয়ার চকলেট এখন বেশ সমাদৃত।

আট থেকে দশটি চকলেট কারখানার সঙ্গে সেলিমের গভীর সম্পর্ক। তারা দুই থেকে আড়াই লাখ রিঙ্গিতের চকলেট তাকে বাকিতে দিয়ে দেয়। মালয়েশিয়াতে চকলেটের ব্যবসার ক্ষেত্রে সেলিম অন্যতম।

সেলিম বলেন, ব্যবসার ক্ষেত্রে যারা পণ্য দেয় সেই কোম্পানিগুলো আমার দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগায়। এছাড়া আমার দোকানের অবস্থান এবং সেলিং রেটও বিবেচনায় নেন চকলেট কোম্পানিগুলো।

সেলিমের দোকানে এখন বিশ্বখ্যাত শতাধিক ব্র্যান্ডের চকলেট রয়েছে। ফার্স্ট মুভিং চকলেটগুলোকেই তিনি প্রাধান্য দেন বেশি। বড় দিনের উৎসব ঘিরে ডিসেম্বর মাসেই চকলেট বিক্রি বেশি হয়।

সেলিম বলেন, গত ফেব্রুয়ারি থেকে অনলাইনে বার মাসের উপহার আইটেম হিসেবে কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর জন্য গিফট হ্যাম্পার বিক্রির প্রচারণা চালাচ্ছি।

পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সেলিমের অবস্থান তৃতীয়। ছোট ভাই আলাউদ্দিন কাজ করছেন তার দোকানে। জাহাঙ্গীর আলম কাজ করছেন ফেমাস আমোসে।

সন্ধ্যায় বিবি প্লাজায় যখন সেলিমের সঙ্গে দেখা তখন তার কোলে দুই বছরের ফুটফুটে শিশু আরহাম মিকাইল। একপর্যায়ের বাবার সঙ্গে সেও বন্দি হলো বাংলানিউজের ফ্রেমে। ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ