ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ায় বিশ্ব অভিবাসী দিবস পালন

কায়সার হামিদ হান্নান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, মালয়েশিয়া মাহমুদ খায়রুল, কুয়ালালামপুর করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৪
মালয়েশিয়ায় বিশ্ব অভিবাসী দিবস পালন ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া: মালয়েশিয়ায় জাঁকজমকভাবে আর্ন্তজাতিক অভিবাসী দিবস পালিত হয়েছে।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) মালয়েশিয়া সময় দুপুর ২টা (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা) মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে এ দিবস পালিত হয়।



জালান আম্পাংয়ের উইসমা এমসিএতে আন্তর্জাতিক সংস্থা ক্যারাম এশিয়ার (কো-অর্ডিনেশন অব অ্যাকশন রিসার্চ অন এইডস অ্যান্ড মোবিলিটি) উদ্যোগে দিবসটির অায়োজন করা হয়।

ক্যারাম এশিয়ার রিজিওন্যাল কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মাদ হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন মালয়েশিয়া ট্রেড ইউনিয়নের সেক্রেটারি জেনারেল গোপাল কিশনাম,  মালয়েশিয়া পার্লামেন্ট মেম্বার চার্লস সান্টিয়াগো,  পার্লামেন্ট মেম্বার সিভারাসা রাসিয়াহ,  মালয়েশিয়া বার কাউন্সিল মাইগ্রান্টস-এর ডেপুটি চেয়ারপারসন পুস্পানাথান সেল্লাম,  থাইল্যান্ড দূতাবাসের কাউন্সিলর তানিত লইপিমাই এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি মিস সাহিদা সুলতানা।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাহমুদ খায়রুল।

মালয়েশিয়া বাংলাদেশ হাই কমিশনের লেবার উইং ফাস্ট সেক্রেটারি মোসাম্মদ শাহিদা সুলতানা মালয়েশিয়া প্রবাসীগণকে অভিনন্দন জানিয়ে তার বক্তব্যে বলেন, প্রবাসীরা বাংলাদেশের শুভেচ্ছা দূত। দেশকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব প্রবাসীদের। তিনি প্রবাসীগণকে যে কোনো অবস্থায় আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে, কনস্যুলেটের সহায়তা গ্রহণের আহ্বান জানান।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের রেমিটেন্স মূল্যবান ভূমিকা রাখছে। অভিবাসীদের কল্যাণে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ ব্যাপারে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ হাই কমিশন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে প্রবাসীদের সমস্যাবলী নিরসণ এবং জীবনমান উন্নয়নসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবন যাপনে ভূমিকা রেখে চলেছে।

মোসাম্মদ শাহিদা সুলতানা, আমরা নিরাপদ অভিবাসন, মর্যাদাভিত্তিক অভিবাসন এবং ২০১৫ উত্তর ডেভলপমেন্ট এজেন্ডার মধ্যে অভিবাসী অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। দেশের প্রায় ৮৫ লাখ লোক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। গত তিন দশকে অভিবাসন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ পদ্ধতিগত উন্নয়নে বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। বিশেষ করে এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনয়নে ডিজিটালাইজড ডাটা ব্যাংক, দক্ষ কর্মী বাহিনী গড়ে তোলা, সরকারি অর্থ সহযোগিতায় সরকারি পর্যায়ে শ্রমিক পাঠানোর মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় দুটি দেশের সরকারি পর্যায়ে চুক্তির ভিত্তিতে শ্রমিক পাঠানো হয়েছে। অভিবাসী শ্রম ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার কারনে বাংলাদেশে রেমিটেন্স বেড়ে চলছে। আগামী দেড় দশকে বিশ্ব অর্থনীতির গতি পরিবর্তন, চ্যালেঞ্জ, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে হবে। এ কারনে অভিবাসী ব্যবস্থাপনার সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বয় করে এগিয়ে নিতে হবে।

সমাপনী বক্তব্যে ক্যারাম এশিয়ার রিজিওন্যাল কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মাদ হারুন আল রশিদ বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনে প্রবাসীদের রেমিটেন্স গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তাই রেমিটেন্সের ধারা অব্যাহত রাখতে এ অভিবাসন খাতকে সহজতর, দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করণ এবং যে সকল শ্রমিক প্রবাস থেকে ফেরৎ আসছে সে সব অভিবাসীদের পূণর্বাসনের জন্য যুগপোযোগী উদ্যোগ গ্রহণে রাষ্ট্র তথা জাতি, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

তিনি আরো জানান, যে কোনো দেশে অভিবাসীদের কাজের পরিবেশ তৈরি করতে হবে সেদেশের জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে। একই সঙ্গে স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অভিবাসীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া তাদের সামগ্রিকভাবে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট দুটি দেশেরই লাভজনক অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। আগামী বিশ্ব ব্যবস্থায় গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্বায়নের যে প্রভাব সেখানে উন্নত বিশ্ব যেমন প্রতিভাবানদের খুঁজে নিচ্ছে, তেমনি দক্ষ কর্মীরও চাহিদা রয়েছে। বৈশ্বিক মানবসম্পদের উপযোগ কার্যকর ব্যবহারে সরকারি-বেসরকারি, জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনী প্রক্রিয়া শক্তিশালীকরন এবং প্রায়োগিক সমন্বয়ই আগামীর চ্যালেঞ্জ, সেটি মোকাবেলায় আমাদের সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

সভায় বিভিন্ন দেশের বক্তরা আর্ন্তজাতিক অভিবাসী দিবস সম্পর্কে বলেন, প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সব সদস্য দেশে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালিত হয়ে আসছে। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অভিবাসন এবং অভিবাসীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করেই এ দিবসের উৎপত্তি। ১৯৯০ সালের ১৮ ডিসেম্বর অভিবাসীরা তাদের পরিবার-পরিজনদের নিরাপত্তায় এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেই সম্মেলনে অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের অধিকার রক্ষায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ আন্তর্জাতিক চুক্তি ৪৫/১৫৮ প্রস্তাব আকারে গ্রহণ করে। বিশ্বের সব দেশকে এ সনদের সঙ্গে সঙ্গতি জানানোর আহ্বান জানানো হয়।

১৯৯৭ সাল থেকে ফিলিপিনো এবং অন্যান্য এশীয় অভিবাসী সংগঠনগুলো এ দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক ঐক্য দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। এ ধারাবাহিকতায় মাইগ্র্যান্ট রাইটস ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন মাইগ্র্যান্ট রাইটসসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংগঠন অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষার্থে বৈশ্বিকভাবে প্রচারণা চালাতে থাকে। অবশেষে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর দিনটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।

বর্তমানে কর্মসংস্থান বা ভাগ্যান্বেষণের জন্যই মানুষ দেশান্তরিত হয় বেশি। কেননা বিশ্বের সব স্থান একরকম নয়। সমানভাবে সমৃদ্ধ বা উন্নত নয়। কোনো দেশ ধনী আবার কোনো দেশ গরিব। তাই কর্মসংস্থানের বেলায় দেখা যায় বৈসাদৃশ্য। পৃথিবীর এক প্রান্তে যখন অফুরন্ত কাজের সুযোগ, তখন অন্য প্রান্তের মানুষ বেকার সমস্যায় হিমশিম খাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই কর্মসংস্থানের তাগিদে মানুষ ছুটছে দেশ থেকে দেশান্তরে। কেউবা সুন্দর ভবিষ্যতের আশায়ও দেশত্যাগ করে। ভিনদেশে নতুন পরিবেশে তারা জীবন গড়তে চায়। কিন্তু সেখানে কি তারা নিজ দেশের পরিবারের মতোই উষ্ণ সান্নিধ্য উপভোগ করে? নিজ ভূখণ্ডের মতো জীবন কাটাতে পারে? মানুষ হিসেবে তার অধিকার, মর্যাদা ও অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো কি নিশ্চিত হয়? অনেক ক্ষেত্রে হয় না বলেই অভিবাসীদের অধিকার সুরক্ষার দাবিটি এত জোরালো।

বিশ্বব্যাপী অভিবাসীদের সংখ্যা ২৩ কোটি ২০ লাখ জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে বর্তমানে অভিবাসীদের সংখ্যা একই। অভিবাসীদের প্রায় ৫০ শতাংশই দেশে ন্যায্য মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। এ প্রেক্ষাপটেই জাতিসংঘ এ বছর ‘লিভিং নো ওয়ান অন বিহাইন্ড’ বা কেউ পেছনে থাকবে না’ এই প্রতিপাদ্য নির্বাচন করেছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কম্বোডিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিবিদ, বার কাউন্সিলের সদস্য, হিউম্যান রাইটস মালয়েশিয়ার সদস্য, মালয়েশিয়া ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য, স্থানীয় এনজিও, বিভিন্ন দেশের শ্রমিক নেতা, বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্য প্রমুখ। প্রবাসীদের অধিকার রক্ষা ও উন্নয়ন এবং বাংলাদেশস্থ প্রবাসী পরিবারকে নানামুখি সহায়তার লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করলো 'ভালোবাসি বাংলাদেশ। ' অনুষ্ঠানের শেষে গান পরিবেশন করেন আলি আকবর। নৃত্য পরিবেশন করেন আনিকা ইসলাম অরপা। প্রবাসী অধিকার বিষয়ক পরামর্শ ও সহায়তার জন্য যোগাযোগ করুন www.caramasia.org এবং www.facebook.com/caramasia.org এই ওয়েব সাইটে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ