ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

সাবধান, মালয় শিক্ষার্থী ব্যবসায়ীরা ঢাকায়!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০১ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১৫
সাবধান, মালয় শিক্ষার্থী ব্যবসায়ীরা ঢাকায়! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মালয়েশিয়াকে ঘিরে রাজধানী ঢাকায় চলছে জমজমাট শিক্ষামেলা। মালয়েশিয়ায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট নামধারী দালালেরা শিক্ষার্থী ধরতে এসেছেন ঢাকার এ মেলায়।

তারা থাকবেন আরও দুদিন।

অর্ধযুগ আগে লন্ডনে শিক্ষার্থী ভর্তির যে ব্যবসা ছিল, সেটাই এখন চলছে মালয়েশিয়ায়। পার্টটাইম কাজের আশায় ইংল্যান্ডে পাড়ি জমানো বাংলাদেশি তরুণেরা একসময় রিক্ত হস্তে দেশে ফিরতে শুরু করে। ঠিক একইভাবে হতাশায় কপাল চাপড়াতে হচ্ছে মালয়েশিয়ায় গজিয়ে ওঠা ব্যাঙের ছাতার মতো বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ আর ইনস্টিটিউটের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে।

এ ধরনের আটটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ঢাকায় রীতিমতো মেলা বসিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতারিত করছে মালয়েশিয়ান ইউনিভার্সিটিজ অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার (এমইউএসি) নামে একটি কনসালট্যান্সি প্রতিষ্ঠান।

রাজধানীর দু’টি স্থানে আয়োজিত চার দিনব্যাপী এ মেলার মাধ্যমে মালয়েশিয়ার মধ্যম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মাহসা ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধি সিভান এখান থেকে শিক্ষার্থী সংগ্রহ করতে এসেছেন। ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি থেকে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং টিমের রবিন ডিএইচ কোয়াত। সেগি কলেজেরও এসেছেন একাধিক প্রতিনিধি।  

দেশটির নিম্নমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি কুয়ালালামপুরের পক্ষ থেকে ঢাকায় শিক্ষার্থী ধরতে এসেছেন অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার নূর আদেলা দিনিয়াতি। ম্যানিপাল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিজনেস ডেভেলপমেন্টের সিভাবালান কৃষ্ণাণ, সুইনবারনি ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির মার্কেটিং অফিসার ডায়ালান অং ছাড়াও এরিক্যান কলেজ এবং কেডিইউ ইউনিভার্সিটি কলেজের প্রতিনিধিরাও এসেছেন ঢাকায়।

নিম্নমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা অবশ্য শিক্ষার্থী সংগ্রহের বিনিময়ে কমিশনও পাবেন।

দেশটির সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইউনিভার্সিটি মালায়া’, ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া’ এবং ‘ইউনিভার্সিটি কেবাংসাং মালয়েশিয়া’র শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব নিম্নমানের প্রতিষ্ঠানের বিশেষ টার্গেট বাংলাদেশ ও নেপালের শিক্ষার্থীরা। কমিশনের বিনিময়ে আয়োজক এবং এসব বিদেশি এজেন্ট কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে শিক্ষার্থী সংগ্রহ করে থাকে।

৭ মার্চ শনিবার ও ৮ মার্চ রোববার ঢাকার গুলশান-১ এর স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে ‘মালয়েশিয়ান এডু এক্সপো-১৫’ এর নামে শিক্ষার্থীদের ধরতে জাল পাতেন এসব বিদেশি দালাল । ৯ মার্চ সোমবার ও ১০ মার্চ মঙ্গলবারও চলবে এসব মিথ্য প্রলোভনের মেলা। স্থান উত্তরা ৪ নং সেক্টরের এমইউএসি অফিস।

রোববার সরেজমিনে গুলশান স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টার ঘুরে দেখা যায়, সেখানকার কিংস হলে আয়োজন করা হয়েছে এই এক্সপো। শিক্ষার্থীদের বলা হচ্ছে স্কলারশিপের কথা। তবে সেটা মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর।

এ বিষয়ে কথা বললে মাহসা ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধি সিভান বাংলানিউজকে জানান, স্কলারশিপ পেতে হলে আগে মালয়েশিয়া যেতে হবে। এডমিশন ও ভিসাসহ প্রথমে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে ৫০ হাজার টাকার মতো জমা দিতে হবে। মালয়েশিয়ায় গেলে তিনি নিজেই পার্টটাইম কাজের ব্যাবস্থা করে দেবেন।

মেলায় দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থীর পাসপোর্ট এবং সার্টিফিকেটের ফটোকপি নিয়ে সেখানেই ভর্তির কাজটি সেরে ফেলছেন দালালেরা। ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির ডিএইচ কোয়াত বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ রয়েছে। কাজের সুযোগ রয়েছে সেখানে। সাড়াও পাচ্ছি বেশ।

ইউনিভার্সিটি কুয়ালালামপুরের প্রতিনিধি দিনইয়াতি বলেন, বাংলাদেশে কাজের সংকট থাকলেও মালয়েশিয়ায় শিক্ষার্থীদের জন্য কাজের সুযোগ রয়েছে।

তবে বাস্তবের পরিস্থিতি কিন্তু পুরো ভিন্ন। মালয়েশিয়ায় নেই কোন পার্টটাইম কাজের সুযোগ। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অনেকেই সেখানে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে রকমারি দোকান এবং রেস্টুরেন্টে কাজ করেন। তবে সেখান থেকে আয় মাসে ১৫-২২ হাজার টাকার বেশি নয়।

দেশটির কোতারায়াতে অবস্থিত সেগি কলেজের শিক্ষার্থী রাহুল বাংলানিউজকে বলেন, এখানে শিক্ষার্থীরা ছয় মাসে যা আয় করেন, পরের সেমিস্টারের শুরুতে তা দিয়ে দিতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজকেই। ফলে পড়াশোনার পাশাপাশি দেশে পরিবারকে সাহায্যতো দূরের কথা, নিজেদের পেট চালানোই কঠিন হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের জন্যে।

আবার সেমিস্টার ফি না দিলে পরের বছরের জন্যে ভিসা নবায়ন করা হয় না শিক্ষার্থীদের। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক শিক্ষার্থীরই শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি হয়।

ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির একজন বাংলাদেশি ছাত্র মালয়েশিয়া থেকে বাংলানিউজকে বলেন, ডিএইচ কোয়াত একজন মিষ্টভাষী প্রতারক। বৃত্তির প্রলোভন পেয়ে ২০১৩ সালে মালয়েশিয়ায় আসেন তিনি। কিন্তু এরপর আর কোয়াতের সঙ্গে দেখা করারও সুযোগ পাওয়া যায়নি। পার্টটাইম কাজ তো অনেক দূরের বিষয়।

মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব মালয় প্রতারকদের ফাঁদে না পড়ে শিক্ষার্থীদের উচিৎ ওয়েবসাইটে লগ ইন করে ভাল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ বাছাই করা এবং অনলাইনে সরাসরি আবেদন করা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ