ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

‘টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার’ যখন সেলফি স্ট্যান্ড বিক্রেতা!

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৫
‘টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার’ যখন সেলফি স্ট্যান্ড বিক্রেতা! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুয়ালালামপুর (মালয়েশিয়া থেকে): বাংলাদেশের রাজধানী মিরপুরের ‘টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার’ সাজিদুর রহমান এখন মালয়েশিয়ার সিটি সেন্টারে সেলফি স্ট্যান্ড বিক্রি করেন।

মুখে চাপ দাড়ি, চোখে চশমা, মাথায় ক্যাপ আর হাতে একগুচ্ছ সেলফি স্ট্যান্ড।

পর্যটকবাহী কোনও বাস পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের সামনে দাড়াঁনো মাত্রই ছুটে যান সাজিদ। সেলফি স্ট্যান্ডে নিজের মুঠোফোন সেটে তা দিয়েই আবার ছবি তুলে আকর্ষনের চেষ্টা করেন তিনি। কেউ কেনেন, কেউ দরদাম করেন, কেউ বা পাশ কাটিয়ে চলে যান।

প্রশ্ন উঠতেই পারে- ‘টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার’ সাজিদের এমন কী হলো যে তাকে পথে পথে সেলফি স্ট্যান্ড বিক্রি করতে হবে?

উত্তর একটাই। পরিচয়টি আসলে ভুয়া। অবৈধভাবে মালয়েশিয়া আসার জন্য ঘরবাড়ি, জমি বিক্রি করে দালালদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তিনি। তাদের দেওয়া পরিচয়েই সাজিদ কাগুজে ‘টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার’!

সাজিদ বলেন, ভাইরে সবই তো বোঝেন। ওসব পরিচয় জাল। আমি ছিলাম কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।

এতক্ষণ সহজভাবে কথাগুলো বলেই তার মুখে অস্বস্তির প্রকাশ। সেই অস্বস্তি নিজের বর্তমান পরিচয় প্রকাশের ভয় থেকে। দূর থেকে ছবি নেবো, কেউ চিনতেই পারবে না- বলেও অস্বস্তি যেন কাটানো যায় না তার।

এক সময় বলতে শুরু করেন নিজের কথা- মাদ্রাসা শেষে কলেজে এইচএসসি পর্যন্ত পড়ে ইচ্ছে হলো প্রবাসে আসার। দালালদের হাতে তুলে দিলাম দুই লাখ টাকা। কাগজপত্র করে দিলো দালালরা। তারপর চলে এলাম স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায়।

আমি একা নই। এই মালয়েশিয়ায় আমার মতো ভুয়া পরিচয়ে অনেকেই কাজ করছেন। দেশ ছাড়ার আগে তাদের তোতাপাখির মতো কিছু কথা শিখিয়ে দেওয়া হয়। দালালদের শেখানো বুলি আওড়েই পার হতে হয় মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন। কিছুক্ষণ আটকে রাখে, নানা প্রশ্ন করে। দালালরা আগেই সর্তক করেছিলো ঘাবড়ে না যেতে, বলেন সাজিদ।

এ পর্যন্ত বলে দম না নিয়েই দৌঁড়ে যান একটি বাসের দিকে। সেখানে ভারতীয় পর্যটকদের কাছে সেলফি স্ট্যান্ড বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়ে নিজের কথায় ফিরে আসেন সাজিদ- আমি  বছর খানেক আগে দোকানে কাজ করতাম। বেতন হাজার রিঙ্গিত। পোষায়নি বলে সেটা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা ধরলাম। এখন পথে পথে সেলফি স্ট্যান্ড বিক্রি করি। বেশ চলছে। তবে পুলিশের উৎপাতেই যতো ঝামেলা।

গত পরশু আমার কাছে থাকা ৭০ রিঙ্গিত দামের সেলফি স্ট্যান্ড আর শ’দুয়েক নগদ রিঙ্গিত নিয়ে গেলো পুলিশ। কিচ্ছু বলার ছিলো না। পরে আমাকে আবার ত্রিশ রিঙ্গিত ফেরত দিয়েছে গাড়ি ভাড়া হিসেবে। হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারিনি। অবৈধ বলে আমার টাকা নিয়ে আবার আমারেই দিলো, বলেন সাজিদ।

তিনি বলেন, আমার ফ্ল্যাটে আরও কয়েকজন থাকেন। যাদের সবাই এসেছে নানা পেশার পরিচয়ে। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী পেশাগত পরিচয়ে যারা এসেছে তারা সংশ্লিষ্ট কাজ ছাড়া কিছু করতে পারবে না। আমি যদি আসলেই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হতাম তাহলে এই দেশে আসতাম না।

সাজিদকে অন্যত্র যাবার তাগাদা দিচ্ছিলো তারই বন্ধু হেলাল। সেও অবৈধভাবে কাজ করছে মালয়েশিয়ায়। বিক্রি করছে সেলফি স্ট্যান্ড।

মালয়েশিয়ায় সাজিদ আর হেলালদের গল্প প্রায় অভিন্ন। তবে দালাল চক্রের প্রলোভনে পা বাড়ানোর আগে অন্তত তাদের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণে রাখার কথা বললেন এ দুই প্রবাসী শ্রমিক। যাদের রক্ত পানি করা অর্থেই সমৃদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডার।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৫
এসইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ