ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

নিষিদ্ধ নগরীর রহস্যময় সৌন্দর্য

মাহমুদ খায়রুল, কুয়ালালামপুর করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৫
নিষিদ্ধ নগরীর রহস্যময় সৌন্দর্য ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চীন থেকে ফিরেঃ চীনের মহাপ্রাচীরের পর দ্বিতীয় গন্তব্য হল নিষিদ্ধনগরী। ইতিহাসের আর এক সাক্ষী দর্শন হবে আজ।

 

বেইজিং এর ভিড় এড়ানোর সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি হলো- পাতাল ট্রেনে চড়া। যদিও পথ হারানোর সম্ভাবনা প্রবল। কারণ- একটি নয়, দুটি নয়- আঠারটি লাইনে রেল চলাচল করে শহরের নিচ দিয়ে।
 
পাবলিক ট্রান্সপোর্টের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বেশ মুগ্ধ হয়েছি। প্রতিটি রেল স্টেশনেই মালামাল স্ক্যান করতে হয় এয়ারপোর্টের মত। সঙ্গে পানীয় কিছু থাকলে সিকিউরিটি অফিসার এর সামনে কিছুটা চুমুক দিয়ে দেখাতে হবে। অদ্ভূত নিয়ম, তবে বেশ মজা পেয়েছি।
 
বেইজিং এর ম্যাপটা অনেকটা আয়তকার। মাঝে তিয়ানমেন গেট। সেই তিয়ানমেন গেট ধরেই প্রবেশ করতে হয় নিষিদ্ধ নগরীতে। চীনের বিভিন্ন সময়কার রাজারা এখান থেকে রাজ্য পরিচালনা করতেন বলে শোনা যায়। তাদের ধারণা ছিলো, পরিচালককে থাকতে হবে রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে।
 
সাবওয়ে থেকে নেমে বেশ কিছুটা পথ হেঁটে যেতে হয়। একপাশে বিখ্যাত সেই বিশাল তিয়ানমেন চত্বর, যেখানে সমাজতান্ত্রিক চীনের ঘোষণা দেন দেশের জননেতা মাও সে তুং। তার বিশাল ছবি তিয়ানমেন ফটকের দেয়ালে ঝুলছে এখনও। তিয়ানমেন চত্বরটি এতোটাই বড় যে গোটা দশ/বারো ফুটবল মাঠ অনায়াসে এঁটে যাবে।  
 
বিশাল চত্বরের এক পাশে জাতীয় জাদুঘর, অপর পাশে জেনারেল মাও এর সমাধিসৌধ। বিশাল বিশাল স্থাপত্য শিল্প। চত্বরে জমায়েত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। মাও এর ছবি যে ফটকে টানানো, সেটাকে বলা হয় স্বর্গের দরোজা। ছবির এক পাশে লেখা, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন দীর্ঘজীবী হোক। আর অপর পাশে লেখা, দীর্ঘজীবী হোক পৃথিবীর মানুষের একতা।
 
প্রধান ফটকের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতেই নজরে এলো বিভিন্ন ভাষার গাইড। বাংলাভাষার জন্যও রয়েছে অটোমেটিক গাইড। টেপ রেকর্ডার কানে দিলেই সমস্ত তথ্য বাংলায় শোনা যাবে।
 
নিষিদ্ধ নগরীর টিকিট ৬০ ইউয়ান। রাজাদের আধিপত্যের সময়কালে সর্বসাধারণের জন্য প্রবেশ ছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে চীনে রাজ সম্রাজ্যের অবসানের পর এটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘প্যালেস জাদুঘর’।
 
একটি বর্গক্ষেত্রের মতো এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে প্রাসাদ এবং কক্ষগুলো। জানা গেল, চীনা রাজা বিশ্বাস করতেন যে, সৃষ্টিকর্তার আবাস স্থলে দশ হাজার কক্ষ রয়েছে। তাই সৃষ্টিকর্তার পরেই রাজার স্থান, এই বিশ্বাসে নিষিদ্ধ নগরীর কক্ষ সংখ্যা নয় হাজার নয় শ’ নিরানব্বই।
 
এলাকাটা এতোটাই বিশাল যে, পায়ে হেঁটে ঘুরে ঘুরে দেখতে হলে কয়েক ঘণ্টা অন্তর অন্তর আপনাকে বিশ্রাম নিতে হবে।
 
স্থাপত্যের অসাধারণ সব ডিজাইন সত্যি মুগ্ধ হবার মতো। এক একটি পাথরের গায়ে নিখুঁত কাজ। প্রতিটি দেয়াল ডিজাইনে চোখে পড়বে ড্রাগনের উপস্থিতি।
 
নগরীর কেন্দ্রবিন্দুতে ভবনটির নাম, ‘হল অফ সুপ্রিম হারমনি’ বা সর্বোৎকৃষ্ট সঙ্গতির কক্ষ, এখান থেকে রাজা রাজ্য পরিচালনা করতেন। তিন স্তরের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় এখানে। সাদা পাথরের মেঝে। ছাউনিগুলো লাল ইট, টাইলসের তৈরি। কক্ষটি প্রায় ৫০ ফুট উ‍ঁচু।
 
খুবই পরিকল্পনা মাফিক তৈরি করা হয়েছে প্রতিটি স্থাপনা। প্রাচীন চীন যে স্থাপত্য শিল্পে কতোটা সমৃদ্ধ ছিল তার অনেকখানি উদাহারণ এখান থেকে পাওয়া যায়।
 
রাজার কর্মশালা, কর্মচারীর কক্ষ, রানীদের কক্ষ, শিক্ষা কক্ষ, চিকিৎসার কক্ষ,  সব ধরনের কক্ষের সমাহার এই নগরীর ভেতরে। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ছোট ছোট পাথরের চেয়ার বসানো হয়েছে বিভিন্ন স্থানে।
 
দুঃখের বিষয়টি হল, নিষিদ্ধ নগরী খুলে দেওয়া হলেও পুরো এলাকার মাত্র ৪০ শতাংশ দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত। বাকি স্থানগুলো এখনো রহস্য ঘেরা সাধারণ মানুষের কাছে।
 
প্রাচীন চীনের মানুষ স্থাপত্যের দিক থেকে কতোটা সমৃদ্ধ ছিল তা নিষিদ্ধ নগরী থেকে বুঝা যায়। প্রতিটি দেয়ালের খোদাই করা শিল্পের সৌন্দর্য নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। আর প্রতিটি আর্টের মাঝে যেন একটা গল্প লুকিয়ে আছে বলে মনে হবে।
 
নগরীর ভেতরে প্রবেশের পর গা ছিম ছিম করে। মনে হয়েছে, যদি পারতাম টাইম মেশিনে করে সেই সময়কার চিত্রটা দেখে আসতাম। পুরো এলাকা পায়ে হেঁটে শেষ করা সম্ভব হয়নি ৫ ঘণ্টায়ও। তবে আরেকবার ফিরে আসার প্রতিজ্ঞা নিয়েই ছাড়তে হল অপূর্ব সৌন্দর্যের ফরবিডেন সিটি। পরবর্তী গন্তব্য, ‘সামার প্যালেস’।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৫
জেডএম

** চীনের প্রাচীর থেকে বলছি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ