ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়া পুলিশের আইজি বাংলাদেশের রতন চৌকিদার!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৬
মালয়েশিয়া পুলিশের আইজি বাংলাদেশের রতন চৌকিদার!

কুয়ালালামপুর: মালয়েশিয়ায় এক বাংলাদেশিকে নিয়ে তোলপাড়। মানুষ এসে তার সঙ্গে সেলফি তুলতে অনুরোধ করেন।

পুলিশের আইজির সঙ্গে ছবি তোলা হয়েছে বলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। অনেক সময় কাজ ফেলে মানুষের আবদার মেটাতে হয় রতন চৌকিদারকে।

মালয়েশিয়ায় ক্ষমতাধর পুলিশ বিভাগ। কাজের প্রয়োজনে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীকেও ডেকে বসে পুলিশ। আর সেই বাহিনীর ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) তানশ্রী খালিদ আবু বকরের মুখাবয়বের সঙ্গে হুবহু মিলে যায় বাংলাদেশের রতনের চেহারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হৈ-চৈ ফেলে তারকা বনে যায় রতন।

তবে ৩৭ বছর বয়সী রতন মনে করেন না তিনি দেখতে খালিদের মতো। নিউ স্ট্রেইট টাইমসে খালিদের ছবি দেখতে দেখতে তিনি বলেন, আমি নিজেকে মনে করি না দেখতে খালিদের মতোন। তার ছবি আমি ফেসবুকে এবং পত্রিকায় বেশ কয়েকবার দেখেছি। তিনি আমার চেয়ে দেখতে ভিন্ন।

হাসিখুশি রতন বলেন, মানুষ এসে আমার সঙ্গে ছবি তুলতে চায়। আমি অনেক সময় ব্যস্ততা রেখে লোকের আব্দার মেটাই। মানুষকে খুশি হতে দেখলে আমার ভাল লাগে। অনেকেই আমাকে বলেছেন, আমি দেখতে কতটা খালিদের মতো। তবে আমি এখন সত্যিই উনার সঙ্গে দেখা করে একটি ছবি তুলতে চাই।

কয়েকমাস আগে রতন ফেসবুকে ঝড় তোলেন। একজন মালয়েশিয়ান ফেসবুকে রতনের সঙ্গে তোলা ছবি পোস্ট করে সেখানে ক্যাপশন লেখেন, আইজিপি রুটি তৈরির চাকরি নিয়েছেন। এই ছবি তখন ফেসবুকে বেশ সাড়া ফেলে।

রতন বলেন, সেই মালয়েশিয়ান আমাকে তার সঙ্গে ছবি তুলতে অনুরোধ করেন এবং বলেন আমাকে একজন পুলিশের লোকের মতো দেখতে। আমি হেসে ছবি তুলি। তবে আমি বুঝিনি তিনি কার কথা বলছেন। এরপর আরো অনেক লোক এসেছেন ছবি তুলতে। তারাও একই কথা বলেছেন। আমাকে ফেসবুকে দেখেছিলেন তারা।

সম্প্রতি ইংরেজি নববর্ষে আরেকটি ছবি পোস্ট হয় রতনের। একজন ফেসবুকে রতনের সঙ্গে তোলা ছবি পোস্ট করে ক্যাপশন লিখেছেন, একই রকম তবে ভিন্ন।

রতন জানান, পরিবারকে আর্থিক স্বচ্ছলতা এনে দিতে ৫ বছর আগে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান তিনি। তার স্ত্রী এবং দুই শিশু সন্তানের কথা ভাবতে হয়েছিল। ঢাকায় তিনি একটি দর্জির দোকানে কাজ করতেন। মালয়েশিয়ায় আগে থেকে বাস করা তার বন্ধুরা বলেছিলেন, মালয়েশিয়া শান্তিপূর্ণ দেশ এবং এখানে বেশি আয় করে পরিবারকে সহায়তা সম্ভব।

মালয়েশিয়া আসার পর থেকেই শাহ-আলমের সেকশন-১০ এ পাক মাল নাসি আয়াম রেস্টুরেন্টে বিশ্বস্ত কর্মচারি হিসেবে কাজ করছেন তিনি। সম্প্রতি রেস্টুরেন্টের ওয়েস্টার্ন ফুড বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত হয়েছেন তিনি। এর আগে খাবার এবং পানীয় তৈরির কাজ করতেন।

দায়িত্বের বিবেচনায় রতন এখন প্রধান। আরো বাংলাদেশি কর্মচারীদের খাবার রান্না এবং পানীয় তৈরির কৌশল শেখান তিনি।

তিনি বলেন, আমাকে অনেক সময় রান্নার কাজ রেখে মানুষের ছবি তোলার আব্দার মেটাতে হয়। অনেক পুলিশ সদস্য এসেও আমার সঙ্গে ছবি তুলে গেছেন। ছুটির দিনে বাজারে গেলেও অনেকে আমার সঙ্গে ছবি তোলেন, আবার অনেকে থমকে দাঁড়ান।

নিউ স্টেয়ার টাইমসে রোববার (৩ জানুয়ারি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রতন বলেন, গত ৫ বছরে রতন ঢাকায় ফেরেনি। তবে আগামী রমজান পরিবারের সঙ্গে কাটাতে চান।

পাক মাল নাসি আয়ামের ২৯ বছর বয়সী ম্যানেজার আমিরুল ইজহাম কামারুল হিলাল বলেন, রতন কঠোর পরিশ্রমী এবং কাজের মাধ্যমে রেস্টুরেন্টকে গৌরব এনে দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমার কখনো মনে হয়নি রতন দেখতে পুলিশের আইজিপি খালিদের মতো। হয়তো প্রতিদিন দেখার কারণেই আমার কাছে বিষয়টি ধরা পড়েনি।

হিলাল বলেন, রতন যখন প্রথম মালয়েশিয়া আসেন, একটি মালয় শব্দও বলতে পারতেন না। তবে এখন যে কোন কিছু করতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৫
এমএন/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ