ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

ঢাকায় পৌঁছে অনিশ্চয়তায় বাবুল!

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৬
ঢাকায় পৌঁছে অনিশ্চয়তায় বাবুল! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: শুক্রবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ১নং টার্মিনাল দিয়ে হুইল চেয়ারে চেপে আসলেন বাবুল। ২১ বছরের টিংটিংয়ে শরীর।

দুর্ঘটনায় আহত হয়ে গত ২ বছরের বেশি সময় ধরেই নিজে চলাচলে অক্ষম। গন্তব্য, এখান থেকে সরাসরি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল।
 
তারপর? চিকিৎসা খরচ চালানোর সামর্থ্য নেই পরিবারের। কোথা থেকে আসবে অর্থ, তা নিয়ে নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছেন না পরিবার। বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের কথাতেও সামঞ্জস্য পাওয়া গেলো না।

২০১৪ সালের ৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার জোহরবারুতে লোহা কাটার কাজ করতে গিয়ে গ্যাসের অাগুনে শরীরের ৪০ শতাংশ ঝলসে যায় বাবুলের। তাকে বাচাঁতে এগিয়ে এসেছিলেন, পুরনো মালিক চীনা ব্যক্তি লিং ইয়ং কি। এরপর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সংস্থা, ক্যাথলিকদের চার্চ থেকে শুরু করে, অনেক বেসরকারি সংস্থাও এগিয়ে অাসে বাবুলকে বাঁচাতে। সম্পূর্ণ সুস্থ না হলেও অবশেষে সবার সম্মিলিত চেষ্টায় শুক্রবার দেশে ফিরেছেন বাবুল।

জানা যায়, মালয়েশিয়ায় প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা তেনেগানিতা বাবুলের দেশে আসার প্রক্রিয়ায় কাজ করেছে। আরেকটি সংস্থা ক্যারাম এশিয়া দেশে ফেরার জন্য প্লেনের টিকিট ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে সহযোগীতা করেছে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ দূতাবাস। তেনেগানিতা ঢাকায় বাবুলের চিকিৎসা সেবার দ্বায়িত্বভার তাদের অংশীদার বেসরকারি সংস্থা 'অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম'কে (ওকুপ) দিয়েছে। তবে সরকারি প্রক্রিয়া শেষ করে প্রবাসীদের জন্য ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ড থেকে এক লাখ টাকার চিকিৎসা খরচ ওঠাতে ২ থেকে ৬ মাস সময় লেগে যায়।

কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ দূতাবাসের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে টার্মিনাল থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অ্যাম্বুলেন্সটির যোগান দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজেও সিটের ব্যবস্থা করেছে সরকার। তবে চিকিৎসা খরচ কে বইবে? তা নিশ্চিত করা হয়নি এখনো।

বাবুলের মা এবং মেঝো ভাই ঢামেক হাসপাতালে বাবুলের সঙ্গে থাকার জন্য ঝালকাঠি থেকে এসেছেন। এয়ারপোর্টে মা ফাতেমা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, সরকার সব খরচ বহন করবে বলে শুনেছি। তেনেগানিতা সব ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানান বাবুল।

তেনেগানিতার সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবক প্রোগ্রাম অফিসার অাশিকুর রহমান বাবুলকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় সব খরচ এবং সমন্বয় তেনেগানিতা করেছে। এখনো অামাদের অংশীদার এনজিও ওকুপ'ই সব ম্যানেজ করবে।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব নুরুন আক্তার জানান, এখনো তিনি বাবুলের বিষয়টি জানেন না। তবে চিকিৎসার ব্যয় সাধারণত পরিবারকেই বহন করতে হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার যদি অতি দরিদ্র হয়, তখনই তাকে ওয়েজ অার্নাস কল্যাণ বোর্ড থেকে ১ লাখ টাকা সাহায্য দেওয়া হয়। পরিবার বোর্ডের কাছে অাবেদন করলে, স্থানীয় পর্যায়ে অনুসন্ধান করা হয়। সেই রিপোর্ট হাতে পেলে এর পরবর্তী বোর্ড মিটিংয়ে সেটি উত্থাপন করা হয়। প্রতি মাসে একবারই বসে বোর্ডের মিটিং। দীর্ঘ হলেও এ প্রক্রিয়াতেই অর্থ সাহায্য করা হয় বলে জানান তিনি।

বিমান বন্দরে বাবুলকে স্বাগত জানান, ওকুপের প্রোগ্রাম ম্যানেজার আব্দুল্লাহ অাল মামুন, শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েলফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট আসাদুল ইসলাম এবং পরিবারের সদস্যরা।

অাব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাবুলের এখনো দীর্ঘ চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। এখনো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় খাবার গ্রহণ এবং পয়ঃনিষ্কাশন হচ্ছে না। চিকিৎসার জন্য এখনো অনেক অর্থের প্রয়োজন হতে পারে।

ক্যারাম এশিয়ার আঞ্চলিক সমন্বয়ক হারুন-আল-রশিদ ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, দূতাবাস থেকে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। সরকারের অর্থ পাওয়া না গেলে, ভলান্টিয়ারির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। যেহেতু পরিবারটি অতি দরিদ্র, তার পাশে দাঁড়ানোর মনোভাব থাকতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৬
এমএন/জেডএস

**  বাংলাদেশি বাবুলের পাশে চীনা লিক
**  ফিরলেও কঠিন হবে বাবুলকে বাঁচিয়ে রাখা
**  মালয়েশিয়া থেকে বিকেলে ফিরছেন সেই বাবুল

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ