ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

দালালে ভরপুর মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
দালালে ভরপুর মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন দালালে ভরপুর মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন

বাংলাদেশ হাইকমিশন কুয়ালালামপুর থেকে ফিরে: গাড়ি থেকে নেমে কয়েক কদম এগুতেই একজন এসে বললেন, ‘কি করতে চান, পাসপোর্ট? লাগলে বলেন, আমরা সব করে দেব’।

আরও একটু এগিয়ে গেলে আরও দু’জন ধরলেন, ‘ব্যাংক ড্রাফট করবেন? দীর্ঘ লাইন, দেখতেই তো পাচ্ছেন। দিন শেষ হয়ে যাবে আবেদন জমা দিতে পারবেন না।

আমাকে দেন ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই করিয়ে দেব’।  
 
পাসপোর্ট নবায়নের লাইনটি পাহাংয়ের রাস্তার উপর এসে পড়েছে। সেখান থেকে সাপের মতো প্যাঁচ খেয়ে সিঁড়ি বেয়ে দোতলা, তারপর লম্বা করিডোর ঘুরে লাইনটি কাউন্টারে গিয়ে ঠেকেছে। নীচের দিকে একটি লাইন থাকলেও করিডোরে এসে দু’টি লাইন হয়েছে। রাস্তা পর্যন্ত লাইনে প্রায় দু’শ লোক দাঁড়ানো।
 
কেউ অবৈধভাবে মালয়েশিয়া এসেছেন, পাসপোর্ট নেই, নতুন পাসপোর্ট করবেন। আবার কারো পাসপোর্টের মেয়াদ শেষের দিকে তাই নতুন পাসপোর্ট তুলতে চান।  এই চিত্র গত ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরের। কমবেশি প্রায় দিনের নাকি একই চিত্র থাকে। তবে সোমবার তুলনামূলক বেশি ভিড় থাকে বলে জানালেন প্রবাসীরা।

দালালে ভরপুর মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন
দালাল চক্রের পাণ্ডা গোছের একজনের সঙ্গে পরিচয় হল। নাম শফিকুল ইসলাম, বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানায়। সেও জিজ্ঞেস করলো, ‘পাসপোর্ট করবেন নাকি?’ চেহারা তামিলদের মতো শ্যামলা বর্ণের। অনেকে তাকে তামিল হিসেবেই জানেন।  
 
আর এতেই তার পোয়াবারো। কারণ মালয়েশিয়ায় বাঙালিদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক এই তামিলরা। ছিনতাই থেকে রাহাজানি, হেন অপকর্ম নেই যা এই তামিলরা করছে না। সে কারণে তামিলদের দেখলেই ভয়ে ভয়ে থাকে বাঙালিরা। আর বাড়তি সুবিধা পাওয়ায় হয়তো তামিল পরিচিতির ধোঁয়াশা পরিষ্কার করছে না শফিকুল ইসলাম।
 
সেখানে প্রায় ঘণ্টা তিনেক অবস্থান কালে তাকে চরম ব্যস্ত দেখা গেলো। একবার রাস্তার উপর এসে মক্কেল ধরছেন, আরেকবার লাইনে গিয়ে লোক ভাগানোর ব্যবস্থা করছেন। কখনও আবার উপরে গিয়ে তার লোকজনের সঙ্গে সলাপরামর্শ করছেন।  
 
এখানে কি করেন জানতে চাইলে কোন রাখঢাক করলেন না। বললেন লোকজন এলে পাসপোর্ট করতে সহযোগিতা করি। অনেকে ঠিকমতো ফরম পূরণ করতে পারে না। আমরা ফরম পূরণ করে দেই। বিনিময়ে তারা কিছু টাকা দেয়।
 
শফিকুল ইসলামের মতো আরও পনের-বিশ জনকে দেখা গেলো। নতুন কেউ এলেই কাছে গিয়ে জানতে চাইছে, ‘ভাই কি করবেন, কোন সমস্যা নেই। আমরা দ্রুত করিয়ে দেব। কোন ‍ঝামেলা ছাড়া। অনেকেই দীর্ঘ লাইনের ঝক্কি এড়াতে তাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। ’ 
 
তাদের হাতে বাড়তি টাকা দিলেই নাকি আর লাইনে দাঁড়াতে হয় না। তারাই সব করে দেন। মাহবুব নামের এক প্রবাসী দুপুর ১২ টায় এসে দালালদের মাধ্যমে কাজ সেরে দু’টায় বেরিয়ে গেলেন।
 
কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জাহাঙ্গীর, কুমিল্লার দক্ষিণ বাখরাবাদের অলি হোসেন সকাল ৯টায় এসে লাইন দাঁড়িয়েছেন, দুপুর গড়িয়ে গেলেও মাত্র সিঁড়ি পর্যন্ত এসেছেন। অনেককে পাওয়া গেলো যারা পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন কিন্তু পাসপোর্টের ফরম জমা দিতে পারেননি।  
 
বাংলাদেশের যে কোন পাসপোর্ট অফিসে গেলেই এমন দীর্ঘ লাইন কিংবা বাইরে দালালদের আনাগোনা দেখা যাবে। তাই বলে বিদেশের মাটিতে এমন চিত্র দেখতে হবে এমন কল্পনাও ছিল না বলে মন্তব্য করলেন সুমন মিয়া।

দালালে ভরপুর মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন
 
তিনি বললেন, এখানে যেন খানিকটা বেশিই মনে হলো। হাইকমিশনের কম্পাউন্ডের ভেতরে দালালের অফিস। যারা কোন রাখঢাক ছাড়াই পাসপোর্ট তৈরির জন্য উৎকোচ আদায় করছে। শুধু গ্লাসের এপার আর ওপার। বোঝার উপায় নেই কোনটি বাংলাদেশ হাইকমিশন ও আর কোনটি দালালের অফিস।  
 
একই ফ্লোর ভাড়া নিয়ে অর্ধেক অংশে বাংলাদেশ হাইকমিশন আর অর্ধেক অংশে আওয়ামী লীগ নেতার ভিসা পাসপোর্ট প্রসেসিং অফিস। প্রবাসীরা অনেকেই গুলিয়ে ফেলেন কোনটি হাইকমিশন আর কোনটি আওয়ামী লীগ নেতার ‍অফিস। এতে করে সাধারণ প্রবাসীদের মধ্যে ভুল বার্তা যাচ্ছে।  
এতে করে নষ্ট হচ্ছে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি। এ কারণে খোদ আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যেই অসন্তোষ বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। (বিস্তারিত পড়ুন আগামীকাল)
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
এসআই/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ