ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ কার্তিক ১৪৩১, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

আগৈলঝাড়ায় ২৪২ বছরের ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলা অনুষ্ঠিত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৩
আগৈলঝাড়ায় ২৪২ বছরের ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলা অনুষ্ঠিত

বরিশাল: বরিশালের আগৈলঝাড়ায় গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো মারবেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (১৫ জানুয়া‌রি) উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দের আঁক গ্রামে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

জানা গেছে প্রায় আড়াইশ বছর ধরে এখানে প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষ দিন অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তিতে এ মেলার আয়োজন করা হয়। সে হিসেবে সন্তন পঞ্জিকা অনুয়ায়ী রোববার (১৫ জানুয়া‌রি) সকালে শুরু হং দিনব্যাপী এ মেলা। মেলায় শুধু আগৈলঝাড়া উপজেলাই নয়, পার্শ্ববর্তী কোটালীপাড়া, উজিরপুর, ডাসার, মাদারীপুর, কালকিনি, গৌরনদী, বানারীপাড়া, বাকেরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ অংশ নেন।

মেলা কমিটির সভাপতি রাম কৃষ্ণ হালদার জানান, রামানন্দের আঁক গ্রামে ২৪২ বছর আগে আউলিয়া মা সোনাই চাঁদের ৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়। ৭ বছর বয়সে স্বামী মারা গেলে নিঃসন্তান অবস্থায় শ্বশুরবাড়িতে একটি নিম গাছের গোড়ায় তিনি শিবের আরাধনা ও পূজা-অর্চনা শুরু করেন। ক্রমশ: তার অলৌকিত্ব ছড়িয়ে পড়লে ওই স্থানে বাৎসরিক পূজার আয়োজন করা হয়। মা সোনাই চাঁদ আউলিয়ার জীবদ্দশায় আনুমানিক ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তির দিনে নবান্নের অয়োজনের মাধ্যমে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তার মৃত্যুর পরে ওই বাড়িটি সোনাই আউলিয়ার বাড়ি হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে।

প্রতিবছর এই দিনটি উপলক্ষে বৈষ্ণব সেবা, নাম সংকীর্ত্তন, কবিগান শেষে সোয়ামণ (৫০ কেজি) চালের গুড়ার সঙ্গে সোয়ামণ আঁখের গুড়, ৫০ জোড়া নারকেল ও প্রয়োজনীয় কলাসহ অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে নবান্ন তৈরি করে মেলায় আগত দর্শণার্থীদের প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়।

হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম আকর্ষণ পৌষ সংক্রান্তিতে বাস্তুপূজা উপলক্ষে ২৪২ বছর ধরে এ গ্রামে মারবেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

মারবেল খেলার মূল রহস্য সম্পর্কে স্থানীয় প্রকাশ বিশ্বাস জানান, আমাদের পূর্বপুরুষরা এ খেলার মাধ্যমে মেলার প্রচলন করেছিলেন। যা আজও অব্যাহত আছে। তাদের উত্তরসূরী হিসেবে আমরা সেই প্রাচীণ ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

মারবেল মেলা উপলক্ষে ওই বাড়ির মেয়ে শিখা বিশ্বাস পরিবারসহ ঢাকা থেকে এসেছেন। শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলা থেকে মারবেল খেলার জন্য এসেছেন সৈকত বিশ্বাস, বাগধা গ্রাম থেকে নমিতা মন্ডল পরিবারের সবােইকে নিয়ে মারবেল মেলায় এসেছেন। তারা জানান, মেলায় এসে মারবেল খেলতে পেরে ভাল লাগছে।

এদিকে দিনটিকে ঘিরে রামানন্দের আঁক গ্রামে মহোৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের মেয়ে-জামাইসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের এ মারবেল মেলায় আমন্ত্রণ জানান।

কোটালীপাড়া উপজেলা থেকে আসা প্রভাষক তরুন চন্দ্র নাথ জানান, এ এলাকার ঐতিহ্যবাহী মারবেল খেলার কথা শুনে মেলায় এসেছি।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, রামানন্দের আঁক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মারবেল খেলা চলছে। রাস্তার ওপর, বাড়ির আঙিনা, অনাবাদী জমি, বাগানসহ সর্বত্রই মারবেল খেলার আসর বসেছে। বিদ্যায়ল মাঠে বসেছে বাঁশ-বেত শিল্প সামগ্রী, মনিহারী, খেলনা, মিষ্টি, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান।

কোটালীপাড়া উপজেলা থেকে আসা শেখর দাস জানান, এ এলাকার ঐতিহ্যবাহী মারবেল খেলার কথা শুনে মেলায় এসেছি। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।

বাশাইল গ্রামের ৭ম শ্রেণির ছাত্র পরশ রায় ও ১০ম শ্রেণির মৃনাল সমদ্দার জানায়, সারা বছর টাকা জমিয়েছি মারবেল খেলার জন্য। শিশু থেকে শুরু করে কিশোর, কিশোরী, যুবক-যুবতীরা মেলার প্রধান আকর্ষণ মারবেল খেলায় অংশ নেন।

মেলা পরিচালনার জন্য ৩৫ সদস্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। মেলায় মারবেল খেলার জন্য যারা অনেক দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন তাদের জন্য আগে থেকেই ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মারবেল খেলাকে জনপ্রিয় করার জন্য মেলাস্থলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসহ মাঠ সম্প্রসারণে সরকারের দৃষ্টি কামনা করছেন এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলায় আসা দর্শনার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৩
এমএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।