ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

তরুণদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে ব্র্যাক হোপ ফেস্টিভ্যাল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩
তরুণদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে ব্র্যাক হোপ ফেস্টিভ্যাল ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: তুমুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ঢাকার বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে ব্র্যাক হোপ ফেস্টিভ্যাল। প্রতিষ্ঠানটির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের অংশ হিসেবে আয়োজিত এ উৎসবের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সফলভাবে শেষ হয়েছে।

তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিনের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’। ভিন্ন প্রতিপাদ্য নিয়ে উৎসবের পরবর্তী দিনগুলোতেও আছে নানা আয়োজন।

উৎসবে আসা হাজারো দর্শক ও অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানিয়ে স্টেডিয়ামের প্রবেশদ্বার খুলে দেওয়া হয় বেলা ১১টায়। ব্র্যাকের উন্নয়ন কার্যক্রম, সামাজিক ব্যবসা কর্মকাণ্ড, বিনিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য উদ্যোগসহ দেশে-বিদেশে ব্র্যাকের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড (ইকো-সিস্টেম) নিয়ে সেজেছে উৎসব প্রাঙ্গণ। বিভিন্ন স্টল, উন্মুক্ত মঞ্চ, ইমারসিভ এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার নিয়ে আর্মি স্টেডিয়াম ছিল জমজমাট। সবার জন্য উন্মুক্ত ইনক্লুসিভ জোনসহ উৎসবে শিশুদের জন্যও রয়েছে বিশেষ কিডস জোন।

প্রথম দিনের উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। জাতীয় সঙ্গীতের পর তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা পাঠাতে চাইলে বারিধারা কূটনৈতিক এলাকায় অবস্থিত টার্কিশ কোঅপারেশন অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশন এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলা হয়েছে।

এরপর দেখানো হয় ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের জীবনভিত্তিক একটি তথ্যচিত্র। ব্র্যাক প্রতিষ্ঠাতার বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি করে।

প্রথম দিনের আয়োজনে দর্শকরা বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের একটি রাগ পরিবেশনা উপভোগ করেন। পুঁথিপাঠ পরিবেশন করেন খ্যাতিমান অভিনয়শিল্পী ফজলুর রহমান বাবু ও তার দল। পাঠ করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের গল্প। স্বাধীনতার লড়াইয়ে ১৯৭১ সালের যুদ্ধক্ষেত্রে নারীদের অসামান্য অবদানকে সম্মান জানিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্রও দেখানো হয় ব্র্যাক হোপ ফেস্টিভ্যালে।

নানা সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ব্র্যাকের সহায়তায় এগিয়ে চলা আধুনিক সময়ের নারী যোদ্ধাদের গল্পও তুলে ধরা হয়েছে এ আয়োজনে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আফসানা আক্তারের জীবন সংগ্রাম মঞ্চে উপস্থাপন করেছে নাট্যদল ‘প্রাচ্যনাট’। পেশাগত জীবনের এ পর্যায়ে পৌঁছাতে তিনি যে সংগ্রাম আর বৈষম্যের মুখোমুখি হয়েছেন সেসব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ‘প্রতিদিনের যোদ্ধা’ নামে এ মঞ্চনাটকে। মঞ্চে দর্শকদের কাছে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ডা. আফসানা আক্তার।

এছাড়া মনোজ্ঞ সংগীত পরিবেশন করেন অর্ণব অ্যান্ড ফ্রেন্ডস ও লালন ব্যান্ড। সব বয়সের মানুষের অংশগ্রহণে মুখর ছিল উৎসবের কেন্দ্র। তারা ঘুরে ঘুরে উৎসবের সমস্ত আয়োজন উপভোগ করেছেন এবং বিভিন্ন কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন। শিশুদের স্থাপত্যবিদ্যার ধারণা দিতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ককিডস, মাসুদা খানের ড্র আ ফ্রেন্ড, আড়ংয়ের গহনা তৈরির কর্মশালা জুয়েলস অব বেংগল ছিল সবার আগ্রহের কেন্দ্রে। বিভিন্ন কারিগর, পরিবেশকর্মী, চেঞ্জমেকার এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উন্মুক্ত কর্মশালাগুলোও ছিল বেশ প্রাণবন্ত।

আগে থেকেই অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে এসব কর্মশালায় অংশগ্রহণের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছেন আগ্রহীরা। প্লে ল্যাব, মানব পাঠাগার, পুতুল নাচ ও নানা প্রদর্শনী নজর কেড়েছে সবার। মানুষের গল্পের মধ্য দিয়ে ব্র্যাক ইকোসিস্টেমকে ফুটিয়ে তোলা স্থাপনাগুলো ছিল উৎসব কেন্দ্রের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। ব্র্যাকের উন্নয়ন কার্যক্রম, সামাজিক ব্যবসা কর্মকাণ্ড, বিনিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য উদ্যোগসহ দেশে-বিদেশে ব্র্যাকের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড (ইকো-সিস্টেম) নিয়ে সেজেছে উৎসব প্রাঙ্গণ।

উৎসবের দ্বিতীয় দিনের শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) আয়োজন সাজানো হয়েছে ‘সম্ভাবনার শক্তি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে। এদিন মূল অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামারা হাসান আবেদ। এ অনুষ্ঠানে সব মানুষের সমান অধিকারের দাবি তুলে ধরে পরিবেশনা নিয়ে আসবে ‘সমতন্ত্র’। এছাড়া থাকবে যাত্রিকের নৃত্যনাট্য এবং আড়ংয়ের ফ্যাশন শো। পাশাপাশি সঙ্গীত পরিবেশন করবেন রেনেসাঁ, ফিডব্যাক, ইমন চৌধুরী অ্যান্ড ফ্রেন্ডস, মিফতাহ জামান ও গার্ল পাওয়ার ব্যান্ড।

বাংলাদেশের হৃদয় হতে সারা বিশ্বজুড়ে আশা জাগানোর ৫০ বছরের পথচলা আর বাংলাদেশের মানুষের দৃঢ়তা, সাহস ও এগিয়ে যাওয়ার শক্তিকে উদযাপন করতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ উৎসব। বাধা, বিপদ, দুর্যোগে বাংলাদেশের লড়াকু মানুষ থমকেছে, কিন্তু থামেনি। সীমাহীন সম্ভাবনায় খুঁজে নিয়েছে এগিয়ে যাবার পথ। এ উৎসবের মূল অনুপ্রেরণা ও আয়োজন তাদের ঘিরেই। কোটি মানুষের জীবনের মোড় পরিবর্তনের উদাহরণ সবাইকে নিজ নিজ বাধা পেরিয়ে, স্বপ্ন জয়ের অনুপ্রেরণা দেবে– এ আশা ব্র্যাকের।

হোপ ফেস্টিভ্যালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সহ-আয়োজক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে বিকাশ, ব্র্যাক ব্যাংক, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩
এইচএমএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।