ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আটপৌরে নগর-যান্ত্রিকতায় বসন্তের উৎসব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩
আটপৌরে নগর-যান্ত্রিকতায় বসন্তের উৎসব বসন্ত উৎসবে নাচ হচ্ছে। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: আটপৌরে নগর-যান্ত্রিকতায় বসন্তের মতো আর কোনো ঋতু সম্ভবত এতটা শিহরণ জাগাতে পারে না। বসন্তই সম্ভবত এখন পারে বর্ণিলতায় ভরিয়ে দিতে।

রঙে, গন্ধে, আলোয়, মলয়ে অসীমান্তিক নৈসর্গিকতায় ভাসিয়ে দিতে পারে জীবনের সীমাবদ্ধতাকে। তাইতো দিনক্ষণ মেপে, অনেকটা উচ্ছলাতা নিয়ে বসন্তবরণ করলো বসন্ত ভালোবাসা মানুষগুলো।

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় বসন্ত উদযাপন পরিষদের আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় অনুষ্ঠিত হলো বসন্ত উৎসব। তাতে জীবনের সীমাবদ্ধ বৃত্তকে পেরিয়ে গাওয়া হলো মলয় বাতাসের গান।

আয়োজনে প্রথমেই বেঙ্গল মিউজিকের সমবেত বাদ্যযন্ত্রের আয়োজনে পরিবেশন করা হয় রাগ-বিহার। এতে অংশ নেন লুম্বিনী তালুকদার, অব্যয়, ঋদ্ধি ও স্মরণিকা সাহা। পাখোয়াজে সংগত করেন প্রশান্ত ভৌমিক। ফাগুনের মোহনায় ততক্ষণে দর্শক সারি পরিপূর্ণ হয়েছে বসন্ত ভালোবাসা মানুষের লাল আর বাসন্তী রঙের সাজে। শিল্পীদের সঙ্গে গুণগুণিয়ে সুর ওঠে- বসন্ত জাগ্রত দ্বারে!

বকুলতলায় ফাগুনের উৎসবের যে রং লেগেছিল, ক্ষণিকেই সে রং ছড়িয়ে পড়ল পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। সেখান পুরো নগরে। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই বাসন্তিরঙা শাড়িতে শোভিত তরুণী। তাদের পাশের পুরুষ সঙ্গীটির পরনে বসন্তের আবহ। সব মিলিয়ে নগরীতে যেন ‘ফাগুনের আগুন’ লেগেছে।

সেই আগুনের সুরেই একক আবৃত্তিতে সুর দিলেন বাচিক শিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলী। তারা আবৃত্তি করেন রবীন্দ্রনাথের 'বসন্ত' এবং ড. মুহাম্মদের ‘বসন্ত এলো যে, আজ ঘরে’ কবিতা।

এরপর একক সঙ্গীতে 'আমার ভালোবাসার সাধ জাগে' পরিবেশন করেন ইয়াসমিন মুশতারি, লাইসা আহমেদ লিসা পরিবেশন করেন 'বসন্তে বসন্তে তোমার কবিরে দাও ডাক', ফাহিম হোসেন চৌধুরী পরিবেশন করেন 'গুলি বার বার ফিরে যায়', বিমান চন্দ্র বিশ্বাস পরিবেশন করেন 'বসন্ত বাতাসে সই গো বসন্ত বাতাসে', বিজন চন্দ্র মিত্রি পরিবেশন করেন 'ফুল ফাগুনের এলো মরসুম'।

দলীয় সঙ্গীতে গীতাঞ্জলি পরিবেশন করেন 'দক্ষিণ হাওয়া জাগো, বসন্ত ফুল গাঁথলো রবীন্দ্র সঙ্গীত, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশনায় আনেন 'তোরা জীবন খুজে পাবি ছুটে ছুটে আয়' বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস (ওয়াইজঘাট) পরিবেশন করেন ফাল্গুন হাওয়ায় হাওয়ায়।

দলীয় নৃত্যে 'দক্ষিণ হাওয়া জাগো জাগো' গানের সঙ্গে ওয়ার্দা রিহাবের পরিচালনায় ধৃতি, মৈত্রী সরকারের পরিচালনায় 'ঝুম ঝুম নুপুর বাজে' গানের সঙ্গে স্বপ্ন বিকাশ কলা কেন্দ্র, লাগিলো দোল জলে স্থলে গানের সঙ্গে নৃত্যম, মাধবী হঠাৎ কোথা থেকে এলে ফাগুন দিনের শেষে গানের সাথে ভাবনা, প্রিয়াঙ্কা রাচেল প্যারিসের পরিচালনায় গৌড়ীয় নৃত্য সারথী, পূজা সেনগুপ্তার পরিচালনায় তুরঙ্গমী, খেলা ভাঙ্গার খেলা গানের সঙ্গে নৃত্যনন্দন, অনিক বসুর পরিচালনায় একটা কালো ভ্রমর গুণ গুণ গুণ খোপায় গোজা লোকসঙ্গীতের সাথে নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন। এছাড়া সাধনা সংস্কৃতি মন্ডল, নৃত্যজনসহ ক্ষুদ্র জাতি নৃ-গোষ্ঠী চাকমাদের দলীয় নৃত্য পরিবেশন করা হয়।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শেষে অনুষ্ঠিত হয় বসন্ত কথন পর্ব। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি স্থপতি সফিউদ্দিন আহমেদ। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ-সভাপতি কাজল দেবনাথ ও সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট। মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিসহ সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সব সদস্যরা।

বসন্ত কথনে বক্তারা বলেন, সমাজের ভেতরে বাইরে যত দিন হচ্ছে মানুষও জীবনে-মননে ততই হতশ্রী হচ্ছে। বর্ষা বসন্তে তবু মানুষ বিমনা হয, অজান্তে উৎফুল্ল হয়। কেউ হয়তো বিচ্ছিন্নভাবে বাসন্তি রঙ বসনও তুলে নেয়। কিন্তু সবাই মিলে বসন্ত বরণ হয় না। সবার মিলবার এই ক্ষেত্রটি আমরা তৈরি করতে চেয়েছি। প্রকৃতির সুরে রঙে আমরা আমাদের এক করে নিতে চেয়ে পহেলা ফাল্গুন একত্র হই। বসন্ত উৎসব তারুণ্যের উৎসব। তরুণ-তরুণীরা আসুন, সব তরুণ প্রাণ মানুষ আসুন। প্রফুল্ল শিশু-কিশোররা আসুক, সকলে মিলে বসন্তকে বরণ করি।

এ পর্বের শেষে আবির বিনিময়, পরস্পর প্রীতি বন্ধনী পালিত হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আবৃত্তি শিল্পী আহসান উল্লাহ তমাল ও নুসরাত ইয়াসমিন রুম্পা। এছাড়া বকুলতলার সঙ্গে সঙ্গে অতীতের মতো এবারেও উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র সরণি রোড বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চ ও পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে বিকেল থেকে এ অনুষ্ঠান শুরু হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩
এইচএমএস/এএটি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।