ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

গ্রামীণ সড়কে মূর্তিমান আতঙ্ক ট্রলি-লাটা-মাহিন্দ্র, দুই বছরে নিহত ২৫

এম এম ওমর ফারুক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৩
গ্রামীণ সড়কে মূর্তিমান আতঙ্ক ট্রলি-লাটা-মাহিন্দ্র, দুই বছরে নিহত ২৫ ছবি: বাংলানিউজ

নড়াইল: জেলার প্রধান ও গ্রামীণ সড়কের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ট্রলি, লাটা, লাম্বা ও মাহিন্দ্র নামের অবৈধ পরিবহনগুলো। গত দুই বছরে এসব অনুমোদনহীন পরিবহনের দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেছেন অন্তত ২৫ জন, আহত হয়েছেন শতাধিক।

সর্বশেষ গত রোববার (৫ মার্চ) সকালে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার ছোট কালিয়া মোড়ে একটি ইটভাটার ট্রলির ধাক্কায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তবিবুর রহমান ওরফে তোতা মিয়া (৭৫) নিহত হয়েছেন। এছাড়া চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি তারিখে নড়াইল-কালিয়া সড়কের আটলিয়া এলাকায় বালু বোঝাই ট্রলির চাপায় পিষ্ট হয়ে ইসমাইল শেখ (১২) নামে এক মাদরাসাছাত্র নিহত হন। ১৯ জানুয়ারি কালিয়া-গোপালগঞ্জ সড়কের কালিনগর মোড় নামকস্থানে ইট বোঝাই ট্রলির ধাক্কায় রুবেল মোল্যা নামে এক প্রবাসী নিহত হন।

নড়াইলের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, অনুমোদনহীন এসব পরিবহনগুলো মূলত নির্মাণ সামগ্রী, বালু, ইটভাটার মাটি সংগ্রহ, ইট সরবরাহ ও ভাটায় পোড়ানোর জন্য কাঠ সংগ্রহ করার কাজে ব্যবহার করা হয়।

জমি চাষের ট্রাকটর অথবা স্যালো মেশিন দিয়ে দেশীয় মিস্ত্রির তৈরি করা এসব পরিবহনের নেই কোনো সরকারি অনুমোদন। এর চালকদেরও নেই লাইসেন্স। উপরন্তু বেশিরভাগ চালকই অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তবু রাস্তায় বীর দর্পে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ পরিবহনগুলো।

এগুলো নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা নেই। ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার পর গাড়ির মালিক ও ভুক্তভোগীদের মধ্যে স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয়ে যায়। থানায় কোনো মামলা না হওয়ায় পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৬০টি ইটভাটায় বিভিন্ন কাজের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫০টি এ ধরনের অনুমোদনহীন পরিবহন চলাচল করে। কম খরচ ও সহজলভ্য হওয়ায় এগুলোই ব্যবহার করছেন ভাটার মালিকেরা। এক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটভাটার একজন ম্যানেজার বাংলানিউজকে বলেন, মূলত গ্রামের ছোট ছোট রাস্তায় ইট সরবরাহ করতে এসব পরিবহন ব্যবহার করা হয়। বড় পরিবহনগুলো গ্রামের সব রাস্তায় চলাচল করতে না পারা এগুলো ব্যবহারের অন্যতম কারণ।

কালিয়ার বারইপাড়া বাসস্ট্যান্ডের সামনে কথা হয় কলেজছাত্র ইমন রহমানের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এসব গাড়ীর মধ্যে লাটা আর ট্রলিই সবচেয়ে মারাত্মক। আর এসব চালকের মধ্যে শতকরা ৮০ জনই অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তাদের বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে একাধিক চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব পরিবহন চালাতে যে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন, তা বেশির ভাগ চালকই জানেন না বা মনে করেন না। যারা জানেন লাইসেন্স লাগে, তারা অকপটে লাইসেন্স না থাকার কথাটি স্বীকার করেছেন।

এদিকে, এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি জেলার বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তারা।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সব ইটভাটায় এ ধরণের পরিবহন ব্যবহার করতে নিষেধ করব। তারপরও যদি তারা এগুলো পরিবহনের কাজে ব্যবহার করে, তাহলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৩
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।