মাদারীপুর: মাদারীপুরে চায়ের দোকানদার আউয়াল মাতুব্বর (৫৪) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন অভিযুক্ত আসামিরা।
শনিবার (১১ মার্চ) দুপুরে শহরের জেলা সাংবাদিক কল্যাণ সমিতির কার্যালয়ে হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত ৫১ জনের মধ্যে ৩৬ জন আসামি উপস্থিত হয়ে এ দাবি জানান।
তবে মামলার বাদী বলছেন, ৫১ জন আসামিই আউয়াল হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। মামলা থেকে বাঁচার জন্য ও অন্যদের ফাঁসানোর জন্য তারা এ নাটক তৈরি করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ৩৬ জন আসামির পক্ষে লিখিত বক্তব্য দেন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল সালাম ব্যাপারী (৬৫)। সালাম নিজেও আউয়াল হত্যা মামলার একজন আসামি।
তিনি বলেন, সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. এজাজ আকন ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সাহেব আলী মাতুব্বর নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা অভিযোগ উঠে। সাহেব আলী হত্যা মামলাটি বর্তমানে মাদারীপুর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সে সময় সাহেব আলী মাতুব্বর হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি ছিলেন আউয়াল মাতুব্বর। আউয়াল আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে যে, চেয়ারম্যান এজাজ আকনের হুকুমে আমরা সাহেব আলী মাতুব্বরকে হত্যা করেছি।
আউয়াল মাতুব্বর সাহেব আলী মাতুব্বরের হত্যাকারীদের নাম আদালতে প্রকাশ করায় চেয়ারম্যান এজাজ আকন ও তার লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এ কারণে আউয়াল মাতুব্বরকে তার চায়ের দোকান থেকে ফোন করে ডেকে নিয়ে আনন্দবাজার এলাকায় নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
আব্দুল সালাম ব্যাপারী বলেন, আউয়াল মাতুব্বর হত্যার পর কোনো প্রকার যাচাইবাছাই ও জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই ২০১৯ সালের আলোচিত সাহেব আলী মাতুব্বর হত্যা মামলার বাদীর ছেলে, মেয়ে, ভাই, ভাতিজা ও আত্মীয় স্বজনসহ তার পক্ষের ৫১ জনকে আউয়াল হত্যার অভিযোগের আসামি করা হয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট বলা যায়, সাহেব আলী মাতুব্বরের হত্যা মামলার বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে মূলত এ ষড়যন্ত্র। আমরা আউয়াল মাতুব্বর হত্যা মামলার ৫১ জন আসামি সম্পূর্ণ নির্দোষ, আমরা মুক্তি চাই। সে সঙ্গে আউয়াল মাতুব্বরের প্রকৃত খুনিদের খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত সাহেব আলী মাতুব্বরের মেয়ে আছিয়া বেগম বলেন, আউয়াল মাতুব্বর আমার বাবাকে হত্যা করার দায় স্বীকার করেছেন। বাবার হত্যার পরিকল্পনাকরী ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান এজাজ আকন। আউয়ালকে হত্যা করে এজাজ আকন তার নিজের দোষ আড়াল করতে আমাদেরকে আউয়াল হত্যার আসামি করেছেন। আমরা এর সঠিক বিচার চাই। সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত আসামিদের আইনের আওতায় আনা হলে আমরা শান্তি পাবো।
এ সম্পর্কে কালিকাপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এজাজ আকন বলেন, সাহেব আলী হত্যা মামলায় যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে সেখানে আমার কোনো নাম ছিল না। যে আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি বর্তমান হত্যা মামলার আসামি এবং আদলতে বিচারধীন একাধিক মামলায় তার নামে রয়েছে। আমি এলাকায় মানুষের পাশে থাকি বলে আমাকে সব সময় ফাঁসানোর চেষ্টা করে আসছে ওরা। তবে সত্য কোনো দিনও চাপা থাকে না। সত্যের জয় হবে।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, আউয়াল হত্যা মামলায় পুলিশ বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে গ্রেফতার করে। এ মামলায় বেশির ভাগ আসামি জামিনে রয়েছেন। বাদী যাদের আসামি করেছেন তারা কে দোষী আর কে নির্দোষ তা পুলিশের তদন্ত শেষে বলা যাবে। মামলাটি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। আশা করছি, অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেবে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের আনন্দবাজার এলাকার চায়ের দোকান থেকে আউয়াল মাতুব্বরকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ছেলে জুয়েল মাতুব্বর বাদী হয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি ৫১ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৩
জেএইচ