রংপুর: রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা এনতাজ উদ্দিন। মাছ শিকার করেই সংসার চলত তার।
পুরোনো দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেই আপেক্ষ ঝরল এনতাজের কণ্ঠে। এই জেলে বললেন, এক সময় খরস্রোতা তিস্তায় সারা বছর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেছেন বাপ-দাদারা। এখন সেই তিস্তা মরা গাঙে পরিণত হয়েছে। বছরে ৩ মাসও মাছ ধরতে পারেন না। পরিবার পরিজন নিয়ে চরম অভাবে দিন কাটছে। রোজগারের কোনো পথ নেই।
শুধু এনতাজ উদ্দিন নন, তার মতো তিস্তার ওপর নির্ভরশীল শতশত জেলে পরিবার পথে বসার উপক্রম। বছরের অধিকাংশ সময় ধার-কর্জ করে চলছে পরিবারগুলো। অনেকে এ পেশা ছেড়ে দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়ে শ্রমিকের কাজ করছেন। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে মাছ ধরা বন্ধ থাকলেও কোনো সরকারি সহযোগিতা পাচ্ছেন না তারা। চরম বিপাকে পড়েছেন তিস্তার জেলেরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তিস্তার ভারতীয় অংশে গজলডোবায় স্থাপিত বাঁধের কারণে নদীটির বাংলাদেশ অংশে প্রায়ই পানি সংকট দেখা দেয়। এ ছাড়াও খনন কাজ না করায় দিন দিন ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহের গতি প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে। এ নদীর নাব্যতা হারানোর কারণে বর্ষা মৌসুমে দুই কূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। দেখা দেয় তীব্র নদী ভাঙন। অনেকের বসতভিটাসহ আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। শত শত একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এ অঞ্চলের কৃষিকাজ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
আবার শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকায় বিপাকে পড়েন মৎস্যজীবীরা। বানে ভেসে যাওয়ার ক্ষত শুকানোর আগেই তিস্তা ধু-ধু বালু চরে পরিণত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পীরগাছায় তিস্তা নদী ঘিরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রায় ৪/৫ হাজার জেলের বসবাস। কিছুদিন আগেও তিস্তা নদী ঘিরে চলতো মাছ শিকারের মহোৎসব। এখন আর সেই দিন নেই। তিস্তা এখন মারা গাঙ। জেলেরা বাড়িতে বসে থেকে অলস সময় পার করছেন। অনেকে আবার নিরুপায় হয়ে দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়ে ভাসমানদের তালিকায় নাম লেখাচ্ছেন।
সরেজমিনে পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, তিস্তা ধু-ধু বালুচরে এখন সোনা ফলছে। জেগে ওঠা চরে নানা ফসলের চাষাবাদ করছেন চাষীরা। কিন্তু চরের মাঝে আকাশের দিকে চেয়ে আছে জালসহ কিছু মৎস্য শিকারের অবকাঠামো। সব প্রস্তুতি থাকলেও নদীতে পানি ও মাছ না থাকায় মৎস্যজীবীরা বেকার বসে আছেন।
ওই এলাকার মৎস্য শিকারী আফছার আলী বলেন, আগের মতো আর মাছ ধরা পড়ে না। তেমন বিকল্প কাজও নেই। বছরের অধিকাংশ সময় ধার-দেনা করে চলতে হয়। অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। তারা ঢাকা-ফেনীতে গিয়ে শ্রমিকের কাজ করছেন।
পীরগাছা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাকিবুর রহমান বলেন, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি না থাকায় জেলেরা মাছ শিকার করতে পারে না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছ শিকার বন্ধ থাকলে ভিজিএফের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হয়। কিন্তু এ অঞ্চলে সরকারিভাবে কোনো সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় না। তাই বেকার মৎস্যজীবীদের সহযোগিতা করা সম্ভব হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৩
এসএএইচ