ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মেডিকেলে সুযোগ পেলেও ভর্তি অনিশ্চিত আব্দুর রহমানের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৩
মেডিকেলে সুযোগ পেলেও ভর্তি অনিশ্চিত আব্দুর রহমানের

নওগাঁ: দরিদ্র পরিবারের ছেলে আব্দুর রহমান। তার বাবা পেশায় কৃষক এবং পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি।

নিজের কিছু জমি চাষাবাদ ও কৃষিকাজ করে যা আয় করেন, তা দিয়ে চলে পাঁচ জনের সংসার।

নিয়মিত দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা আব্দুর রহমান এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগও পেয়েছেন। কিন্তু দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে আব্দুর রহমান ও তার পরিবারের। টাকার অভাবে মেডিকেলে ভর্তি হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় এ মেধাবীর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নও বিফল হওয়ার পথে।

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার পাতাড়ী গ্রামের কৃষক আব্দুর সালামের ছেলে আব্দুর রহমান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি। ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়ের স্বপ্ন, ছেলে বড় হয়ে একজন ডাক্তার হবে। সংসারে অভাব লেগে থাকলেও কখনো পিছপা হননি তারা এবং আব্দুর রহমানও। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে গেছেন, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। প্রত্যেক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণা, স্কুল শিক্ষকদের সহযোগিতা, নিজের মেধা ও শ্রমের সমন্বয়ে এবার ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন আব্দুর রহমান। প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী তিনি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

সংসারে আর্থিক টানাপোড়নে ও টাকার অভাবে ছেলের মেডিকেলে ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় কাটছে আব্দুর সালামের। তিনি বলেন, আমার ছেলে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছে। তাই বাসার সবাই খুশি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। কিন্তু আমি গরিব মানুষ, সামান্য কিছু জমিতে চাষাবাদ ও কৃষি কাজ করে সংসার আর ছেলের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে আসছি। এখন ছেলেকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাতে হবে। ভর্তির জন্য যে পরিমাণ টাকার প্রয়োজন, তা অল্প সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা করা আমার জন্য খুবই কঠিন। যখনি মনে হচ্ছে টাকার অভাবে ছেলেটাকে ডাক্তারি পড়াতে পারবো না, তখনই বুকটা ধড়ফড় করছে। তাই আল্লাহর উপর ভরসা করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।

আব্দুর রহমান বলেন, আমার বাবার তেমন কোনো সম্পদ নেই। দাদার কাছে থেকে দেড় বিঘার মতো জমি পেয়েছেন। সেই জমিতে চাষাবাদ করে কোনো রকমে সংসার ও আমার পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন। আমাকে নিয়ে বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিল, পড়াশোনা করে একজন ভালো ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে করবো। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগের মধ্য দিয়ে বাবা-মায়ের সেই স্বপ্নের দুয়ার খুললেও টাকার কারণে দুঃচিন্তায় পড়তে হয়েছে। চলতি মাসের ২৭ তারিখ ভর্তির সময় দিয়েছে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে দুঃচিন্তায় আছি। কীভাবে অল্প সময়ের মধ্যে ভর্তির টাকা আমার পরিবার আমাকে দেবে। এখন ভয় কেবল অভাব, টাকার অভাবে বাবা-মায়ের স্বপ্ন যেন অসম্পূর্ণ না থেকে যায়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্যাহ আল মামুনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। আব্দুর রহমানের পরিবারকে সম্মান জানাই। তারা যদি কোনো রকম সহযোগিতা চেয়ে যোগাযোগ করে, আমরা প্রয়োজনীয় সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।