ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

হায়দার আলীর ‘আমার অনুসন্ধান’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ড উন্মোচন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৩
হায়দার আলীর ‘আমার অনুসন্ধান’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ড উন্মোচন বক্তব্য দিচ্ছেন বসুন্ধরা গ্রুপ ও ইস্ট ওয়েন্ট মিডিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর। ছবি: ডি এইচ বাদল

ঢাকা: দেশবরেণ্য ও আন্তজার্তিকভাবে স্বীকৃত অনুসন্ধানী সাংবাদিক হায়দার আলীর বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সংবলিত গ্রন্থ ‘আমার অনুসন্ধান’-এর প্রথম খণ্ড উন্মোচিত হয়েছে।

শনিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় নিউজ টোয়েন্টিফোরের মিলনায়তনে গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন বসুন্ধরা গ্রুপ ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর।

এ সময় বসুন্ধরা গ্রুপ ও ইস্ট ওয়েন্ট মিডিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, হায়দার আলী আন্তজার্তিকভাবে স্বীকৃত একজন তুখোড় অনুসন্ধানী সাংবাদিক। তিনি কালের কণ্ঠে একের পর এক সাড়া জাগানো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন। আমরা সব সময় হায়দার আলীর দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা নিয়ে করা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পক্ষে ছিলাম, আছি ও ভবিষ্যতেও থাকবো।

সায়েম সোবহান আনভীর আরও বলেন, হায়দার আলীকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ। আমি বইটি পড়ে নেব। ভবিষ্যতে তার আরও বইয়ের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

এ সময় কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, কালের কণ্ঠ সম্পাদক শাহেদ মোহাম্মদ আলী, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি সান সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর সম্পাদক জুয়েল মাজহার, ডেইলি সানের নির্বাহী সম্পাদক রেজাউল করিম লোটাস, নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা, ডেপুটি সিএনই আশিকুর রহমান শ্রাবণ উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে হায়দার আলী বলেন, আমার সাংবাদিকতার যৌবন পার করেছি কালের কণ্ঠে। পত্রিকাটিতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে গিয়ে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ও সহযোগিতা পেয়েছি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছ থেকে। এই দুইজন মানুষের সহযোগিতা, উৎসাহ, ভালোবাসা না পেলে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা সম্ভব হতো না। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

প্রথম বই প্রকাশ নিয়ে অনুভূতি জানিয়ে হায়দার আলী বলেন, বইটিতে প্রায় অর্ধশত রিপোর্ট আছে। এরমধ্যে ‘বিরল ভালোবাসা’ অন্যতম। অনেকেই আমার করা অনুসন্ধানী রিপোর্ট চান। সব রিপোর্ট একসঙ্গে করে এই বইটি প্রকাশ করা হয়। বইটি পড়ে তরুণ রিপোর্টাররা জানতে পারবেন, লিখতে পারবে কীভাবে অনুসন্ধানী রিপোর্ট লিখতে হয়।

প্রকাশনা নিয়ে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, আজকে বইটি প্রকাশ করা নিয়ে আমার খুব ভালো লাগছে। কালের কণ্ঠের শুরুর দিক থেকে প্রকাশিত রিপোর্ট নিয়ে বইটি প্রকাশিত হলো। আজ থেকে ১৪ বছর আগে ২০১০ সালে দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘বিরল ভালোবাসা’ নামে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়। তিনি (হায়দার আলী) রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছিলেন, এমন সময় এক মা কাঁদছিলেন। কেন কাঁদছিলেন তা জিজ্ঞেস করতে ওই মা জানান তার ছেলে তাকে জমির জন্য অত্যাচার করছিল। মা বলছিলেন এই জমি আমি তোকে কীভাবে দেব, তোর বাবা তো শেখ হাসিনাকে লিখে দিয়েছেন। আমার ক্ষমতা নেই দেবার।

তিনি বলেন, কালের কণ্ঠে ‘বিরল ভালোবাসা’ নামে রিপোর্ট ছাপা হওয়ার পরে তোলপাড় শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ডেকে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেন। এরপর এ নিয়ে আরও ১৩/১৪টা ফলোআপ রিপোর্ট হলো।

ইমদাদুল হক মিলন জানান, হায়দার আলী মালয়েশিয়া ভ্রমণ নিয়ে যে সব রিপোর্ট করেছিলেন বইটিতে সে সব রিপোর্টও স্থান পেয়েছে এবং সবগুলো আলোচিত রিপোর্ট। আমি হায়দার আলীকে অভিনন্দন জানাই। ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকেও অভিনন্দন জানাই।

বইটিতে পাঠকরা পাবেন হায়দার আলীর দুর্দান্ত সব অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। যা পড়ে দেশের অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা নিজেদেরকে আরও সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে পরবেন। সেই সঙ্গে এই বই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় নতুন প্রজন্মকে শেখাতে ও করতে উৎসাহিত করবে।

‘আমার অনুসন্ধান’ বইতে পাঠকরা পাবেন জুলুমবাজ-অর্থলোভী প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আমলা, ব্যাংক লুটেরা, প্রতারক, সন্ত্রাসী, গডফাদার, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, এমনকি এমপি-মন্ত্রীদের অপকর্ম নিয়ে একের পর এক দুঃসাহসিক সব অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।

মানবিক সাংবাদিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে স্বীকৃতপ্রাপ্ত হায়দার আলীর সাড়া জাগানো 'বিরল ভালোবাসা’ প্রতিবেদনও রয়েছে এই গ্রন্থে। রাজপথেই এক নাটকীয় ঘটনার সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে হায়দার আলী দারুণ হৃদয়স্পর্শী এই প্রতিবেদনটি করেন। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে ভিখারি রমিজা পান নতুন জীবনের সন্ধান আর রিপোর্টার হায়দার আলী পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে বিরল পুরস্কার, স্বীকৃতি আর একটি একান্ত সাক্ষাৎকার।

বইটি হাসান বুক ডিপো থেকে প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়াও শিগগিরই রকমারী ডটকমে অনলাইনে পাওয়া যাবে।

২০০১ সালে প্রথমসারির জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোয় নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি হিসেবে হায়দার আলী সাংবাদিকতা শুরু করেন। কাজ করেছেন দৈনিক সমকালেও। তবে পেশাগত জীবনের দীর্ঘ সময় কাটছে দৈনিক কালের কণ্ঠ’ পত্রিকায়। ২০০৯ সালে নির্মাণপর্বেই যুক্ত হন পত্রিকাটির সঙ্গে। স্টাফ রিপোর্টার থেকে সিনিয়র রিপোর্টার, বিশেষ প্রতিনিধি হয়ে বর্তমানে তিনি পত্রিকাটির উপ-সম্পাদক। একইসঙ্গে তিনি দৈনিকটির দুর্নীতি বিরোধী অনুসন্ধানী সেলের প্রধান এবং এর পাঠক সংগঠন শুভসংঘ-এর উপদেষ্টা।

জট খোলা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ লাভ করেন ইউনেস্কো-বাংলাদেশ জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ড। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের দাসত্বের জীবন নিয়ে আলোচিত আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান করে পান মালয়েশীয় প্রেস ইনস্টিটিউটের বিশেষ পুরস্কার।

হায়দার আলী ১৯৭৬ সালের ২৩ মে ঢাকার শ্যামলীতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা প্রয়াত সামসুদ্দিন মিয়া, মা সালমা বেগম।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৩
এমআইএইচ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।