মাদারীপুর: সৌদি আরবে বাস দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন মাদারীপুর সদর উপজেলার দিয়াপাড়া গ্রামের রুহুল আমিন। মাত্র ৭ মাস আগে কাজের জন্য সৌদি গিয়েছিলেন তিনি।
এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে শোকের মাতম চলছে নিহত রুহুলের বাড়িতে। একদিকে মরদেহ দেশে আনা নিয়ে দুঃচিন্তা, অন্যদিকে লাখ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।
জানা গেছে, ভাগ্য ফেরাতে সাত মাস আগে ৪ লাখ টাকা সুদে লন নিয়ে সৌদি আরব যান মাদারীপুর সদর উপজেলার দিয়াপাড়া গ্রামের মৃত ইছাহাক মাতুব্বরের ছেলে রুহুল আমিন। সেখানে আবা শহরের একটি রেস্টুরেন্টে কাজ শুরু করেন তিনি। তার পাঠানো টাকাতেই চলতো সংসার। গত সোমবার (২৭ মার্চ) সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করতে গিয়ে বাস দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি। পরে বুধবার (২৯ মার্চ) রাতে ফোনে মৃত্যুর খবর আসে তার পরিবারের কাছে। শোকে স্তব্ধ হয়ে যান তারা। নিহত রুহুলের ৭ বছর বয়সী ছেলে তাগিব ও ৪ বছরের তাসপ্রিয়া জানে না তার বাবা আর কোনোদিনও ফিরবে না। রুহুল আমিনের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী আসমা বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা।
নিহতের মরদেহ দ্রুত দেশে ফেরত আনার পাশাপাশি অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন স্বজন, এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা।
নিহত রুহুল আমিনের স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, ৪ লাখ টাকা দেনা। এই দেনা কিভাবে শোধ করবো। পরিবারে আয় করা মানুষটির এই অবস্থা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।
রুহুল আমিনের বড়ভাই রফিকুল ইসলাম বলেন, সাত ভাই-বোনের মধ্যে রুহুল ছিল সবার ছোট। আমাদের পরিবারের সবাই দিনমজুর। কেউ ভ্যান চালায়, কেউ শ্রম বিক্রি করে আয় করে। রুহুলের এই মৃত্যুতে আমরা সবাই অসহায় হয়ে পড়েছি।
নিহত রুহুলের মা রাবেয়া বেগম বলেন, আমার ছেলের লাশটা দ্রুত দেশে ফেরত আনতে সরকারের সহযোগিতা চাই। আদরের ছোট ছেলে এভাবে মারা যাবে বুঝে উঠতে পারিনি। আগে বুঝলে তাকে আর বিদেশ যাইতে দিতাম না।
মাদারীপুরের কুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হুমায়ুন কাজী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অসহায় পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। ঋনের টাকা পরিশোধেও পাশে থাকবে ইউনিয়ন পরিষদ।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাইনউদ্দিন বলেন, নিহত রুহুল আমিনের মরদেহ দ্রুত দেশে ফেরত আনতে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া সৌদি আরবের কর্মস্থলে যোগাযোগ করে অসহায় পরিবারটিকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে। আর উপজেলা পরিষদ ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমেও ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করবে প্রশাসন।
উল্লখ্য, গত সোমবার বিকেলে ইয়েমেন সীমান্তবর্তী আসির প্রদেশের আকাবা শার এলাকায় ঘটে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনা। এতে ১৮ বাংলাদেশীসহ ২২ জনের মৃত্যু হয়। আর আহতদের ভর্তি করা বিভিন্ন হাসপাতালে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৩
এফআর