কক্সবাজার: ওমরাহ পালনে যাওয়ার পথে সৌদি আরবের আকাবা শারে এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে তিনজনের বাড়ি কক্সবাজারে।
এদের মধ্যে দুজনের বাড়ি মহেশখালীতে, আরেকজন রামু উপজেলার বাসিন্দা।
দুর্ঘটনায় নিহত মোহাম্মদ আসিফ (২১) ও শেফায়েতুল ইসলাম (২২) মহেশখালী উপজেলার ফকিরাঘোনা এলাকার বাসিন্দা। সম্পর্কে তারা দুজন খালাতো ভাই।
সোমবার বিকালে বাসটি যখন মক্কার দিকে রওনা দেয় তখন বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন শেফায়েত। এসময় কথা বলতে বলতেই বিকট একটা শব্দ শোনা যায়। এর পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
নিহত শেফায়েতের বড় ভাই জাহেদুল ইসলাম সাগর এ কথা জানালেন।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনার দুই-চার মিনিট আগে ফোন দেয় শেফায়েত। তখন গ্যাসের চুলা সতর্কভাবে ব্যবহার করতে,বাড়ির শিশুদের এবং বাবাকে ভালোভাবে দেখভালের পরামর্শ দিচ্ছিল শেফায়েত। এসব কথা বলতে বলতেই হঠাৎ বিকট একটা শব্দ শোনা যায়। তখন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর আর যোগাযোগ করা যায়নি।
এদিকে আসিফকে হারিয়ে দিশেহারা তার পরিবার। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি।
আসিফের ছোট ভাই হাফেজ মুজাহিদুল ইসলাম মারুফ বলেন, বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রায় দুই বছর আগে মামাদের সহযোগিতায় আমার ভাই সৌদি আরবে যান। সেখানে একটি রেস্তোরাঁয় চাকরি করতেন তিনি। বর্তমানে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন আসিফ। অসুস্থ হওয়ায় বাবা কোনো আয়-রোজগার করতে পারেন না। এখন কীভাবে আমাদের সংসার চলবে জানি না।
উঠানে চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ পর পর বুক চেপে ধরে কান্না করছিলেন আসিফের বৃদ্ধ বাবা আহম্মদ উল্লাহ।
তিনি বলেন, আমি অসুস্থ হওয়ার পর আসিফই পরিবারের হাল ধরেছিল। এখন কি হবে,ছেলেকে দেশে আনতে পারব কিনা কিছুই বলতে পারছি না। ছেলের মরদেহ দেশে আনার জন্য আমি সরকারের সহযোগিতা চাই।
এদিকে সৌদি আরবে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রামুর যুবক মোহাম্মদ হোছাইনের পরিবারেও চলছে শোকের মাতম।
কক্সবাজারের রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ঘোনারপাড়া বাহারকাছা এলাকার কাদের হোসেনের ছেলে হোছাইন। সাত বছর আগে জীবিকার তাগিদে মোহাম্মদ হোছাইন সৌদি আরব যান। সেই থেকে পরিবারের অবস্থা ভালোই চলছিল। কিন্তু আকষ্মিক এ দুর্ঘটনায় পরিবারটির এখন বেহাল অবস্থা।
বুধবার দুপুরে নিহতদের বাড়িতে গিয়ে আর্থিক সহায়তা দেন মহেশখালীর ইউএনও মোহাম্মদ ইয়াছিন।
তিনি বলেন, নিহতদের মধ্যে আসিফের পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতি খুবই খারাপ। সে কারণে তার পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ২৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, সৌদি আরবে গত ২৭ মার্চ ওমরাহ যাত্রী বহনকারী বাসটি একটি সেতুর ওপরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। আসির প্রদেশ ও আভা শহরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী ওই সড়কে বাসটি উল্টে আগুন ধরে যায়। এতে নিহত হন বাসের ২৭ যাত্রী। নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা ১৮ জন।
আরও পড়ুন>> সৌদি আরবে দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশির সংখ্যা বেড়ে ১৮
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৩
এসবি/এসএএইচ