ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

এক দুর্ঘটনায় ছেলে গেল, মেয়েটাও হলো বিধবা 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২৩
এক দুর্ঘটনায় ছেলে গেল, মেয়েটাও হলো বিধবা 

লক্ষ্মীপুর: ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে ওমানে পাড়ি জমানোর কথা ছিল সোহেলের। শনিবার (১ এপ্রিল) সকাল ৮ টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ছিল তার।

 

সে লক্ষ্যে বাড়ি থেকে রওনা হন সোহেল। কিন্তু ওমানে যাবার পরিবর্তে তাকে চিরবিদায় নিতে হয়েছে পৃথিবী থেকে। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সোহেলের। একই দুর্ঘটনায় মারা গেলেন তার বোনের স্বামী রুবেল।  

সোহেল ও রুবেলকে হারিয়ে দিশেহারা তাদের পরিবার। এক দুর্ঘটনায় ছেলে গেল, মেয়েটাও হলো বিধবা।  
 
সোহেলের মা নুরজাহান বেগম বিলাপ করে বলেন, আমার সোহেল-রুবেল নাই। ধারদেনা করে সোহেলকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছিলাম। কে জানত বিদেশ যাওয়ার আগেই আমার বাবা শেষ হয়ে যাবে। জামাতা রুবেলও মারা গেল। মেয়েটা বিধবা হলো। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। মেয়ের শিশুকন্যাটি এতিম হয়ে গেল।  

তিনি আরও বলেন, সোহেলের রুজিতেই পেটে ভাত পড়তো। এখন তো সোহেল নাই। আমরা খাব কি? চলব কেমন করে?

নিহত রুবেলের বাবা আবুল কাশেম বলেন, আমার তিন মেয়ে দুই ছেলে। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। বড় ছেলে সোহেল দিনমজুরি দিয়ে সংসার চালাতো। মেজো মেয়েকে বিয়ে দিতে চার লাখ টাকা ঋণ নিতে হয়েছে। সেই ঋণ কাটিয়ে না উঠতেই ছেলেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা ঋণ করে ওমানের পাঠানোর স্বপ্ন দেখেছি। ভেবেছি ওমানের গেলে ঋণ শোধ হবে, পরিবারের স্বচ্ছলতাও আসবে। কিন্তু সড়কের মধ্যে আমাদের সব শেষ হয়ে গেল।  

এ অসহায় প্রতিবেশী দেলোয়ার খান বাংলানিউজকে বলেন, খুবই দরিদ্র পরিবার। সংসার চালাতে কষ্ট হয় তাদের। পরিবারে একমাত্র আয়ের উৎস ছিল সোহেল। তার বাবা তেমন কোনো পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সোহেল দিনমজুরি দিয়ে সংসার চালাতেন। অন্যদিকে রুবেল কৃষি কাজ করতেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনায় তাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেল। সোহেল ও তার বোনজামাই রুবেলের মৃত্যুতে দুই পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।  

শুক্রবার (৩১ মার্চ) দুপুরে চাঁদপুরে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান সোহেল হোসেন (২৬) ও রুবেল (২৫)।  শনিবার সকাল ১০ টার পর নিজ নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।

সোহেলের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চরকাচিয়া গ্রামের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। তার বাবার নাম আবুল কাশেম। সোহেল পেশায় দিনমজুর ছিলেন।  

আর তার বোনের স্বামী রুবেলের বাড়ি একই এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন। তার বাবার নাম আবুল কালাম। তিনি পেশায় কৃষক।  

প্রায় দেড় বছর আগে সোহেলের মেঝো বোন রিতু আক্তরের সঙ্গে রুবেলের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে ছয়মাস বয়সী মিনহা নামে মেয়ে রয়েছে।  

আরও পড়ুন >> চাঁদপুরে বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৪

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।